জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার প্রভাবে আমরা দিন দিন কৃত্রিম ও যান্ত্রিক জীবনযাত্রার দিকে ঝুঁকছি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীর ও মনের ওপর। শরীরে বাসা বাঁধছে অসংখ্য জটিল ও কঠিন রোগ। যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, শরীরে বাড়তি ওজন ইত্যাদি। অথচ সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতিতেই রয়েছে অসংখ্য নিয়ামত। প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে আমরা অতি সহজেই সুস্থ, সুন্দর ও সুখী জীবনযাপন লাভ করতে পারি। আর এ জন্য জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা কিছু দিনের মধ্যেই কাঙ্খিত ফল পেতে পারি। যেমন-
ঘুম :

ঘুম শরীরে শক্তি সংরক্ষণ, কোষপুঞ্জ তৈরি ও মেরামত, শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠন, মস্তিষ্ককে কোষের ধ্বংসাবশেষ থেকে পরিষ্কার রাখে। শরীর তার ক্ষয় পূরণ ও মেরামত করে, যা সাধারণত সকালের গভীর ঘুমের সময় সংঘটিত হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে শক্তি উৎপাদন, গ্লুকোজ মেটাবলিজম কমে যায় এবং বয়োবৃদ্ধি বা এজিং প্রক্রিয়া বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন রাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন।
খাবার :

খাবার হতে হবে কম ক্যালরিযুক্ত এবং বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। পরিমিত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন বা আমিষ, লিপিড, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, বিশুদ্ধ পানীয়, আঁশ জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যকর খাবারের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের খাবারের অর্ধেক হতে হবে শাক-সবজি ও ফলমূল। কারণ শাক-সবজি, ফলমূল হলো ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ পদার্থ এবং আঁশ জাতীয় দ্রব্যের অফুরন্ত ভান্ডার, যা কিনা শরীরের ওজন, হৃদরোগ, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
পানি :

জীবনের জন্য অক্সিজেনের পরই পানির স্থান। গবেষণায় দেখা গেছে, পানিস্বল্পতার কারণে শরীরের শক্তি উৎপাদনের কর্মক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায়। তাই শরীরে শক্তি সঞ্চার করতে হলে বেশি করে পানি পান করতে হবে। বেশি পানি পান করলে শরীর থেকে অতি সহজে বর্জ্য বের হয়ে যায়, কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি ঢুকতে পারে, ফলে বাত-ব্যথা, মলাশয়ের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সারসহ আরও অনেক রোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। তাই আমাদের প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত।
ব্যায়াম :

শরীরের সুস্থতার জন্য ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। হাঁটা হলো সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। প্রতিদিন দুই বা তিন কিলোমিটার হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এছাড়াও হাঁটা ছাড়া সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা অথবা ব্যায়ামাগারে ব্যায়াম করা যেতে পারে। ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত-সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, শরীরের বাড়তি মেদ কমে যায়, রাতে ঘুম ভালো হয়, যা কিনা সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি।