তিদিনের জীবনযাপনে বিভিন্ন ধরনের তেলের ব্যবহার বাড়ছে। প্রচলিত নারিকেল তেল, সয়াবিন তেল, সরিষার তেলের পাশাপাশি এখন যোগ হয়েছে সূর্যমুখী তেল, তিলের তেল, নিম তেল, তিসির তেল, ভুট্টার তেল ইত্যাদি। এসব তেলের সাথে আবার ফুল, লতাপাতার মূলের রস যোগ করে সুগন্ধিযুক্ত উপকারী তেল তৈরি করা হচ্ছে। তাই আজ চলুন জেনে নেই নানা রকম তেলের ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে।

নারিকেল তেল

চুলের যত্নে যুগে যুগে নারিকেল তেল অনেক উপকারি হিসেবে খ্যাত। চুলের গোড়া শক্ত করে এই তেল। এছাড়া ত্বকে মালিশ করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। নারিকেল তেল ত্বকে ব্লিচ ও ক্লিনজারের কাজ করে। নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রনের সমস্যা দূর হবে এবং ব্রনের দাগ ও ক্ষত সেরে যাবে। ত্বক নমনীয় করতে নারিকেলের তেল খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং র‍্যাশের সমস্যা সমাধানেও নারকেল তেল খুবই কার্যকারী। ত্বকের কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকলে সেসব স্থানে নারিকেল তেল দিয়ে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে দাগটি হালকা হয়ে যাবে।

অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল

অলিভ অয়েলে রয়েছে ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বককে সতেজ রাখে। ত্বকে ময়েশ্চারাইজারেরও কাজ করে অলিভ অয়েল। তুলোতে সামান্য অলিভ অয়েল লাগিয়ে মুখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে মেখে। এরপর কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে মুখ মুছে ফেলতে হবে। এবার শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে হবে। প্রতিদিন বাসায় ফিরে গোসল করার পর সামান্য পানির সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে সারা শরীরে ম্যাসেজ করে দেখবেন শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং সারারাত আপনার শরীরে ভেজাভাব বজায় থাকবে।

তিলের তেল

তিলের তেলের ব্যবহারে ত্বক সজীব হয়। অনেকে যত্ন না নেওয়ার কারণে বয়স বাড়ার আগেই ত্বকে বলিরেখা পড়ে। তিলের তেল ত্বকে বয়সের বলিরেখা রোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন তিলের তেলের ম্যাসাজ করলে মুখে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তিলের তেল ত্বকের মরা চামড়া তুলে ফেলে এবং ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া যাদের ত্বকে রোদে পোড়া ভাব রয়েছে তারা এই পোড়া দাগ দূর করতে পারেন এ তেল ম্যাসাজের মাধ্যমে। তিলের তেল যেমন সারা রাত ত্বকে লাগিয়ে রাখা যায়, তেমনি ক্লিনজিং ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।  

টি ট্রি অয়েল বা চা পাতার তেল

অস্ট্রেলিয়ান সেনাদের ফাস্ট এইড বক্সের নিত্যদিনের সাথী ছিল এই টি ট্রি অয়েল। কিন্তু আজকাল এই অয়েল প্রসাধনী থেকে শুরু করে ত্বকের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। পোকামাকড়ের কামড়ে জ্বালাপোড়া, হালকা কাটা ছেঁড়া, কর্নক্যানলকে সফট করতে টি ট্রি অয়েল অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে। এটি মাথায় দিয়ে ২/৩ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করলে উঁকুন ও খুশকির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে সহজে। তৈলাক্ত ত্বকে যে কোনো তেল ব্যবহারের আগে অনেক কিছুই ভেবে নিতে হয়। কারণ তেলের ব্যবহার ব্রণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকের এ সকল সমস্যার সমাধান এনে দেবে টি ট্রি অয়েল।  

কাঠবাদাম তেল বা আমন্ড অয়েল

রূপচর্চায় আমন্ড ওয়েল খুবই উপকারী। এই তেলে ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড, এসেনশিয়াল ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণই বেশি। তাই এই তেল ত্বকের সুস্থতা এবং উজ্জ্বলতায় বেশি উপকারি। প্রতিদিন ব্যবহারে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়বে না এবং বলিরেখা দূর হবে। চোখের নিচের কালি, ব্যথা, ফোলা ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে এই তেল। এই তেলে চিটচিটে ভাব থাকে না। তাই ত্বক, চুল ও নখের যত্নে এটি জাদুর মতো কাজ করবে। মেয়েদের কাছে আমন্ড অয়েল বেশ জনপ্রিয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই তেলটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনি অতি সহজেই পেতে পারেন কোমল, মসৃন, দাগহীন উজ্জ্বল ত্বক।

সূর্যমুখী তেল

সূর্যমুখীর তেলে চিটচিটে ভাব থাকে না। তাই এই তেলের সুবিধা হলো, ত্বকে ব্যবহার করলে কোনো অস্বস্তিকর লাগবে না। বরং বেশ ভালো বোধ হবে। ত্বক সজীব ও লাবণ্যময় করতে সূর্যমুখী তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। সব ধরনের ত্বকে এই তেল ব্যবহার উপযোগী। গোসলের পানিতে এই তেল ব্যবহারে সারাদিনের ক্লান্তি ভাব দূর হবে।  

এসেন্সিয়াল অয়েল

তেলের ব্যবহার এখন শুধু খাওয়া আর রূপচর্চায় সীমাবদ্ধ নেই। এখন মনকে প্রফুল্ল করতেও তেলের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তেলের সাথে বিভিন্ন গাছের ফুল, লতাপাতা, মূলের রস মিশিয়ে এখন তৈরি করা হচ্ছে এসেন্সিয়াল অয়েল। সুগন্ধির পাশাপাশি এই তেল ব্যবহৃত হয় অ্যারোমাথেরাপির কাজে। নানারকম এসেন্সিয়াল অয়েল পাওয়া যায় যে কোনো সুগন্ধির দোকানে। এছাড়া বিউটি পার্লারগুলোতেও এসব তেল কিনতে পাওয়া যায়।  

সরিষার তেল

গরম করে মাথার তালুতে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। দেখবেন খুশকি একেবারেই উধাও হয়ে গেছে। এই তেল ত্বকে আর্দ্রতা জোগায়। তাই শীতে ফাটা ত্বকে এর মালিশ খুব উপকারী। শিশুর ত্বকেও খাঁটি সরিষার তেলের ম্যাসাজ অন্য রাসায়নিকযুক্ত তেলের তুলনায় নিরাপদ।