
আইপিএলেও : এবি ডি ভিলিয়ার্স-বিরাট কোহলির তাণ্ডবে বেসামাল অবস্থা সানরাইজারস হায়দরাবাদের। বেধড়ক পিটুনির পরও অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার বল দেননি মুস্তাফিজুর রহমানকে। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ১০ রান দেওয়া বাংলাদেশি ‘কাটার’কে রেখে দিয়েছিলেন যে স্লগ ওভারের জন্য। অবশেষে এলেন তিনি ১৭তম ওভারে, আর বল হাতে তুলেই ফেরালেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠা ডি ভিলিয়ার্সকে। পরের বলেই শেন ওয়াটসনকে আউট করে হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা জাগানো মুস্তাফিজ সেটা করতে না পারলেও আইপিএল অভিষেকটা রাঙিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট নিয়ে। ছবি : এএফপি
অ- অ অ+
আইপিএলের মঞ্চটা একটু আলাদা। এখানে কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনা খেলোয়াড় যেমন হতাশায় লুকিয়েছেন মুখ, তেমনি আবার অখ্যাত কেউ তারকাখ্যাতি পেয়ে গেছেন রাতারাতি। মুস্তাফিজুর রহমানের জন্য কুড়ি ওভারের এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টটি তাই ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ কি চমত্কারভাবেই না জিতে গেলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেকে আলো ছড়ানো বাংলাদেশি পেসার আইপিএলের শুরুতেও যে করলেন বাজিমাত!
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অফিশিয়াল টুইটার পেজে পোস্ট হচ্ছে একের পর এক তাঁর ছবি। সতীর্থদের সঙ্গে অবকাশ যাপন কিংবা অনুশীলনে ঘাম ঝরানোর ছবিগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছিল হায়দরাবাদে কতটা গুরুত্ব পাচ্ছেন বাংলাদেশি পেসার। তবু সংশয় ছিল, বিদেশি কোটায় সুযোগ মিলবে তো মুস্তাফিজের? সাকিব আল হাসানের মতো পরীক্ষিত বোলারকে যেখানে বসিয়ে রেখেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স, সেখানে আইপিএলে একেবারে অনভিজ্ঞ মুস্তাফিজের খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না। এর ওপর আবার একাদশের লড়াইটা ছিল তাঁর ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে। অবশ্য ২০১৫ বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো কিংবা আইপিএল অভিজ্ঞতায় নিউজিল্যান্ড বোলার যতই এগিয়ে থাক, সদ্য শেষ হওয়া বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে একটি ম্যাচও যে খেলেননি তিনি। তাই মুস্তাফিজের খেলার সম্ভাবনা ছিল বেশি। আর সেটা নিশ্চিত হয় টস করতে এসে হায়দরাবাদ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার যখন বললেন, ‘মুস্তাফিজের থাকাটা আমাদের বোলিংয়ে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।’ আইপিএল মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগটাও তাতে পেয়ে যান বাংলাদেশি ‘কাটার’।
একাদশে তো সুযোগ মিলল, এবার নিজেকে প্রমাণের পালা মুস্তাফিজের। প্রথম দুই ওভারে সুযোগ পাননি, তৃতীয় ওভারে এসে তাঁর হাতে বল তুলে দিলেন ওয়ার্নার। ক্রিজে তখন এখনকার ক্রিকেটের সেরা দুই ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। বিশ্বসেরা দুই ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে রান দিলেন মোটে ৪। দুই ওভার পর ফিরে দিলেন আরো ৬ রান, সব মিলিয়ে মুস্তাফিজের বোলিং ফিগারটা দাঁড়ায় এমন—২-০-১০-০। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তিনিই কেবল পেরেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের শান্ত রাখতে। সতীর্থরা তো ‘মুক্তহস্তে’ খরচ করেছেন রান! স্পিনার কর্ণ শর্মা ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৫৭ রান! রান খরচের প্রতিযোগিতায় একটুর জন্য তাঁর সঙ্গে পেরে ওঠেননি ভুবনেশ্বর কুমার। ভারতীয় পেসার দিয়েছেন ৫৫ রান।
এই দুই বোলারের ওপর দিয়ে আক্ষরিক অর্থেই ঝড় তুলেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স-কোহলি। তাঁদের বেধড়ক পিটুনির পরও মুস্তাফিজকে বোলিংয়ে আনেননি ওয়ার্নার। প্রথম ২ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচ করা ‘কাটার’কে রেখে দিয়েছিলেন যে স্লগ ওভারের জন্য। অবশেষে বাংলাদেশি পেসার এলেন ১৭তম ওভারে। আর ফিরেই করলেন বাজিমাত। দ্বিতীয় বলেই ‘অফকাটার’-এ ফেরালেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠা ডি ভিলিয়ার্সকে। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ৪২ বলে ৮২ রান করে আউট হন এউইন মরগানের মুঠোবন্দি হয়ে। পরের বলে আবার উইকেট-উৎসব মুস্তাফিজের। এবার শেন ওয়াটসনকে (১৯) উইকেটরক্ষক নামান ওঝার গ্লাভসবন্দি করে জাগালেন হ্যাটট্রিক সম্ভাবনাও। শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক করতে না পারলেও ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিয়ে আইপিএল অভিষেকটা দারুণভাবে রাঙিয়ে নিয়েছেন মুস্তাফিজ।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে তিনি আলো ছড়ালেও তাঁর আনন্দটা ম্লান হয়ে গেছে দলের হারে। ডি ভিলিয়ার্স-কোহলি ঝড়ে ২০ ওভারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর করা ২২৭ রানের কঠিন লক্ষ্য পেরোতে পারেনি হায়দরাবাদ। ৬ উইকেট হারিয়ে মুস্তাফিজের দল করতে পেরেছে ১৮২। তাই ৪৫ রানে হেরে আইপিএলের নবম আসর শুরু করেছে হায়দরাবাদ। ক্রিকইনফো