শুধু কেনা কাটা করা আর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে খরচের অভ্যাস আপনার দোষ নয়। কর্টিসোল নামক একটি হরমোন যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার উপর কাজ করে। শরীরে এর আধিক্য স্মৃতি শক্তি নষ্ট করে, মনোযোগ কমায়, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নষ্ট করে এবং নিজেকে মাদকাসক্তের মতো অনুভূতি দেয়। গরীব হওয়ার অনুভূতিও অনেকটা এমনই, যেন কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন আপনি। আমরা টাকা ছাড়া অচল। টাকার চেয়ে শক্তিশালী ‘বস্তু’ পৃথিবীতে আর কী আছে? যার অর্থ আছে তার সব আছে, যার অর্থ নেই তার কিছু নেই। কেন অর্থ থাকে না। কেন আমরা কেউ ধনী আর কেন কেউ গরীব? গরীব হওয়ার ৬টি লক্ষণ আমরা আপনাকে জানাতে যাচ্ছি। মন দিয়ে পুরোটা পড়বেন আশা করি।
বাবা মায়ের আচরণেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন
“আমাদের সামর্থ্য নেই”, “টাকা গাছে ধরে না” ইত্যাদি শুনেই হয়তো বড় হয়েছেন, যা আপনার মাথায়ও গেঁথে গেছে। আর তাই বড় হয়ে আপনিও এই একই আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই যদি হয় তবে আপনি কখনো উন্নতি করতে পারবেন না। আগের দিনে আয়ের উৎস কম ছিলো বলেই হয়তো ছোট বেলায় আপনার বাবা মায়ের পক্ষে আপনার সব আবদার মেটানো সম্ভব হতো না। তাই বলে আপনিও যদি বড় হয়ে এমন আচরণে অভ্যস্ত হলে নতুন কোনো আয়ের পথ নিয়ে আপনি ভাবার সুযোগ পাবে না। কারণ মস্তিষ্ক আপনাকে এই সীমিত আয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার মন্ত্রণা দেবে।
লোকে কি বলবে তা আপনিই ভেবে নিচ্ছেন
আমরা সামাজিক বন্ধন এড়িয়ে যেতে পারি না। আমাদের মধ্যে অনেক সময় জড়তার অন্যতম কারণ এই সমাজ। উৎসবে কে কত খরচ করেছে, কার পোশাক কত সুন্দর, কে কেমন দেখতে, কার কোথায় সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে সমাজের যেন মাথা ব্যথার শেষ নেই। আর আপনিও তাই ভেবে অহেতুক খরচ করে নিজেকে দুর্বল করে তুলছেন। একটা কথা মনে রাখবেন, সমাজের অধিকাংশ মানুষ দোষ ত্রুটি ধরা ছাড়া আপনার কোনো উপকারে আসবে না। তাই তারা কি ভাববে ভেবে যদি নিজের সামর্থ্যের বাইরে খরচ করা শুরু করেন তাহলে আপনি গরীব হয়ে যাবেন, তখনও এরা আপনাকে গরীব বলে খোটা দিতে ছাড়বে না। সুতরাং লোকে কি বলবে তা নিজে না ভেবে লোকেদেরই ভাবতে দিন।
ভুল প্রাধান্য
যারা কম টাকা উপার্জন করেন তাদের মধ্যে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার প্রবণতাও কম লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তাকে তার অর্থনৈতিক অবস্থার প্রমাণ দিতে দামি দামি জিনস পত্রে ঘর বোঝাই করতে হয়। তাদের মধ্যে রংচংগা জামা কাপড় এবং নকল গয়নার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। অন্যের কাছে নিজেকে ফুটিয়ে তোলা, সোজা বাংলায় যাদের ফুটানি করার অভ্যাস তারা গরীব হতে বাধ্য। দামি ফোন, গলায় চেইন, হাল ফ্যাশনের পোশাক ইত্যাদি তাদের কাছে প্রাধান্য পায়। আপনার মধ্যেও যদি এমন কিছু থেকে থাকে তাহলে সাবধান হোন।
মন খারাপ হলে কেনাকাটা করা
অনেককেই বলতে শুনবেন, মন খারাপ হলে তারা কেনাকাটায় বেড়িয়ে পড়েন। এতে করে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং অর্থ অপচয় হয়। দিন শেষে বাড়ি ফিরে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতে থাকেন কেন এটা কিনতে গেলাম? মন ভালো করার অনেক মাধ্যম আছে, বাইরে হাঁটতে যাওয়া, গান শোন, বই পড়া ইত্যাদি বিনা খরচেই আপনার মন ভালো করে দিতে যথেষ্ট।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকা
যদি আগামী শুক্রবার কি করবেন সেই পরিকল্পনা আপনার থাকে কিন্তু আগামী বছর আজকের দিনে আপনি কোথায় থাকবেন তার পরিকল্পনা না থাকে তাহলে আপনিও গরীব হতে চলছেন। যদি ৯-৫টার কাজেই আপনি অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে ভবিষ্যতে দেখবেন সবাই আপনার চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে, আপনি পড়ে আছেন আগের জায়গায়ই। যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন সে প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো একটু ভাবলে নিজেরও যেমন পদন্নোতির সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি প্রতিষ্ঠানও আপনার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। সেজন্য চাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
নির্দিষ্ট আয়
নির্দিষ্ট আয়ের বাইরেও আয়ের অনেক পথ রয়েছে। এসব উৎস সম্পর্কে যারা খোঁজ খবর রাখেন এবং আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেন তারাই সফল হন। কিন্তু আপনি যদি নির্দিষ্ট আয় থেকেই জীবন যাপনের খরচ সামলে ওঠায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তাহলে ভবিষ্যতে বড় কোনো অর্জন আপনার থাকবে না। আয় বাড়ানোর চেষ্টা না থাকলে দিন দিন আপনি গরীব হতে থাকবেন। কারণ সময়ের সাথে সাথে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেতেই থাকে।
বোনাস: আপনার কি লোক দেখানো বাতিক আছে?
লোক দেখানোর বাতিকে আক্রান্ত মানুষ কখনো ধনী হতে পারেন না। কারণ তারা যা আয় হয় তাই লোক দেখানোর কাজে ব্যয় করে ফেলেন। নিজেকে অন্যদের চেয়ে ধনী দেখানোর আকাঙ্ক্ষায় মত্ত মানুষ আসলে ধীরে ধীরে গরীবই হতে থাকে। তাদের মধ্যে সাজ পোষাক অতিরিক্ত খরচের প্রবণতা দেখা যায়। যদি এমনটা আপনার মধ্যেও থেকে থাকে তাহলে এখনই সাবধান হোন।