লবণ ছাড়া খাবারের স্বাদ আসে না। আমরা যারা ভোজনরসিক, তাদের অনেকেই খাওয়ার টেবিলে বসে ভাবি, আজ না হয় পাতে একটু লবণ নিয়েই দেখি না, কী আর হবে! পাতে লবণ নেওয়া ঠিক কি না, এটা অনেকেরই ভাবনার বিষয়। বেশি লবণ খাওয়া অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে ফেলে। তাই খাবারে কম লবণ ব্যবহারের পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা।
এক চামচ লবণে থাকে দুই হাজার মিলিগ্রাম সোডিয়াম। বলা হয়, একজন ব্যক্তির প্রতিদিন দুই হাজার ৩০০ মিলিগ্রামের নিচে লবণ খাওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্টফুডেও অনেক লবণ ব্যবহার করা হয়। এই খাবারগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো বলে মতামত গবেষকদের। আসুন, দেখি পাতে লবণ আসলেই কতটা বিপদের।
লবণ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড। এতে সোডিয়াম থাকে। ১ লাখ ৩৩ হাজার ১১৮ ব্যক্তির ওপর চার বছর ধরে পরিচালিত এক পর্যবেক্ষণমূলক জরিপের ফলাফল দ্য ল্যানসেট পত্রিকায় বেরিয়েছে। পরীক্ষায় নিয়মিত রক্তচাপ ও ইউরিনে লবণের পরিমাণ দেখা হয়। এঁদের মধ্যে ৬৯ হাজার ৫৫৯ জন ছিলেন উচ্চ রক্তচাপমুক্ত। এই গ্রুপের যাঁরা দিনে সাত গ্রামেরও বেশি সোডিয়াম, অর্থাৎ প্রায় তিন চা-চামচের বেশি লবণ খেয়েছেন, তাঁদের অসুখ-বিসুখ বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়েনি। কিন্তু যাঁরা তিন গ্রামেরও কম সোডিয়াম খেয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি বা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়েছে (যাঁরা দিনে চার-পাঁচ গ্রাম সোডিয়াম খেয়েছেন তাঁদের তুলনায়)।
তাই যাঁদের রক্তচাপ বেশি, তাঁদের কম সোডিয়াম বা লবণ খেতে বলা হয়। কারণ সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ায়। কিন্তু এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে খুব কম লবণ খেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। যাঁরা দিনে সাত গ্রামের বেশি সোডিয়াম খেয়েছেন, তাঁদের ঝুঁকি বেড়েছে ২৩ শতাংশ, কিন্তু যাঁরা খেয়েছেন দিনে তিন গ্রামেরও কম সোডিয়াম, তাঁদের ঝুঁকি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ (যাঁরা দিনে চার-পাঁচ গ্রাম সোডিয়াম খেয়েছেন তাঁদের তুলনায়)।
দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরের স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এটি রক্তচাপ বাড়ানোর পাশাপাশি হাড়কে দুর্বল করে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। আসুন জেনে নেই বেশি লবণ খেলে শরীরের কী ক্ষতি হয় সে কথা।
বেশি পানি পিপাসা
বেশি লবণ খেলে পিপাসা বাড়ে। কারণ এটি দেহের কোষে তরলের ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা করে। এতে বেশি পিপাসা পায় এবং পানি পানের ইচ্ছে হয়। আর পানি যেমন শরীরের জন্য উপকারি তেমনি অতিরিক্ত পানি পান কিডনিতে চাপ তৈরি করে।
হাত ও পায়ে ফোলাভাব
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কখনো কখনো হাত ও পায়ে পানি জমায়। এর জন্য ফোলা ভাব হয়। এটি কিডনি রোগী এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুব ঝুঁকির কারণ।
লবণযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছে
বেশি লবণ খেলে আরো বেশি লবণযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয়। যেটি পুনরায় সমস্যা তৈরি করে। এতে কম লবণ দেওয়া খাবারগুলো আর স্বাদ লাগে না। এ রকম হলেও বোঝায় যায় আপনি অতিরিক্ত লবণ খাচ্ছেন।
হাড় দুর্বল করে
বেশি মাত্রায় লবণ খেলে হাড়ের ক্যালসিয়াম প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এতে হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি মাসিক বন্ধের পর, যখন নারীদের হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে যায়, তখন বেশি লবণ খাওয়া পরিহার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।