অনেক সময় হজমের সমস্যা হলে, গাড়ির গতির কারণে, দূর্বলতার কারণে, গর্ভধারন করলে কিংবা আরো নানান কারনে বমি ভাব হয়। বমি ভাব হলেও সবসময় বমি হয় না। কিন্তু বমি ভাবের জন্য খুবই অস্বস্তি অনুভূত হয়। কিছুতেই কমতে চায় না এই অস্বস্তি ভাব। বমি ভাব দূর করার আছে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়। জেনে নিন ৫টি খাবার সম্পর্কে যেগুলো বমি ভাব দূর করে দেবে নিমিষেই।

আদা:

বমি ভাব অনুভূত হলে আদা কুচি করে চিবুতে থাকুন। আর যদি আদা চিবুতে ইচ্ছা না করে তাহলে পানির সাথে আদার রস মিশিয়ে কিছুক্ষন পর পর অল্প অল্প করে খেতে থাকুন। আদার ঝাঁঝালো স্বাদ ও গন্ধ বমি ভাব নিমিষেই দূর করে দেয় এবং মুখের বিচ্ছিরি স্বাদ ঠিক করে দেয়।

লবঙ্গ:

যখনই বমিভাব হবে মুখে কয়েকটি লবঙ্গ রেখে দিন। ইচ্ছে করলে কয়েকটি লবঙ্গ এক কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ঠান্ডা করে খেতে পারেন। একবারে পুরোটা খেতে না পারলে কিছুক্ষন পর পর এক চামচ করে খেলেও বমি ভাব কমে যাবে।

পুদিনা:

পুদিনা পাতার অসাধারণ ঘ্রাণ নিমিষেই বমি ভাব দূর করে তাজা অনুভূতি দেয়। এছাড়াও পুদিনা পাতা পাকস্থলীতে অবস্থিত বমির উদ্রেককারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়তা করে। এজন্য যখনই বমি ভাব হবে তখন কয়েকটি তাজা পুদিনা পাতা মুখে দিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। তাহলে বমি ভাব দূর হয়ে যাবে সাথে সাথেই।

দারুচিনি:

দারুচিনি এমনিতেই চিবিয়ে খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। দারুচিনির ঝাঁঝালো মিষ্টি স্বাদ বমি ভাব দূর করে দিতে পারে সহজেই। এছাড়াও দারুচিনি হজমে সহায়তা করে। তাই হজমের গোলযোগের কারণে বমি ভাব হলে সেটা দূর করে দেয় দারচিনি। তাই বমি ভাব হলে এক টুকরো দারুচিনি মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিন। বমি ভাব নিমিষেই চলে যাবে।

লেবুর রস:

টক জাতীয় খাবার খেলে বমি ভাব চলে যায় খুব দ্রুত। বিশেষ করে বমি ভাব হলে মুখে লেবুর রস নিলেই বমি ভাব সাথে সাথেই দূর হয়ে যায়। আর যদি বমি হয়ে যায় তাহলে লেবুর শরবত খান। লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম শরীরকে বমিজনিত দূর্বলতা দূর করতে সহায়তা করে এবং শরীরকে চাঙা করে দেয়।

মৌরি:

খাওয়ার পর একটু মৌরি খাবেন। বমিভাব দূর হবে। মুখের ভিতরটাও তরতাজা থাকবে।

বমি হওয়ার পরে যে খাবারগুলো খাবেন

বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা যা যে কোন মানুষেরই হতে পারে। শারীরিক কোন সমস্যার কারণে, এসিড রিফ্লাক্সের কারণে বা গর্ভাবস্থায় বমি হতে পারে। বমি হয়ে যাওয়ার পরেও বমনেচ্ছুক অনুভূতি থাকে পেটের ভেতর। যদি মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে বমি হয় ও পেটে ব্যথা হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপনাপন্ন হতে হবে। আর যদি স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি ও টেনশনের কারণে আপনার বমি হওয়ার প্রবণতা থাকে তাহলে আপনার পাকস্থলীকে শীতল করার জন্য এবং আবারও বমি হওয়া বন্ধ করতে সাহায্য করবে কিছু খাবার। চলুন তাহলে জেনে নিই বমি হওয়ার পরে যে খাবারগুলো খাওয়া উচিৎ সেগুলোর বিষয়ে।

বরফ:

বমি হয়ে যাওয়ার পরে একজন মানুষকে পানি পানের কথা বলা হয়। যদিও বমি হওয়ার পর পরই খুব বেশি পানি পান করা উচিৎ নয়। এর পরিবর্তে ২-৩ টি বরফের টুকরো খেতে পারেন। মুম্বাই এর পিডি হিন্দুজা হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউট্রিশন থেরাপিস্ট ডা.পূর্ণিমা সুহাস প্রভু বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বড় কোন পরীক্ষার আগে টেনশনের কারণে বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। এমনকি টাইপ এ পার্সোনালিটির মানুষদের অন্যদের চেয়ে বেশি এসিড উৎপন্ন হতে দেখা যায়। আইস কিউব বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে”।

ক্রিম ক্র্যাকারস:

নোনতা স্বাদ বা মসলাদার বিস্কুট সব দোকানেই পাওয়া যায়। ডায়েটিশিয়ানরা গর্ভবতী নারীদের সকালে খালি পেটে নোনতা বিস্কুট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বমি ও বমি বমি ভাব প্রতিরোধের জন্য। যদি আপনার মোশন সিকনেস হওয়ার প্রবণতা থাকে তাহলে দূরের যাত্রার সময় আপনার ব্যাগে এক প্যাকেট নোনতা বিস্কুট রাখুন।

কমলার জুস:

আপনি যদি বমি বমি ভাব অনুভব করেন তবে সে সময়ে অথবা বমি হওয়ার পরে এক গ্লাস কমলার জুস পান করতে পারেন।

ব্রাট ডায়েট:

কলা, ভাত, আপেল ও টোস্টকে ব্রাট ডায়েট বলে। বমি হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে যখন ক্ষুধা অনুভব হয় তখন এই খাবারগুলো খেতে পারেন। এমনকি একটি কলা খেলেও আপনার পাকস্থলী শীতল হবে।

দই:

এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ খেতে পারেন, তবে দই খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। কারণ এটি সহজেই হজম হয়ে যায়। মনে রাখবেন তাজা দই হলে ভালো যা খুব বেশি টক নয়। দই প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক যা খুব দ্রুতই পাকস্থলীকে শীতল করতে পারে এবং এসিডিটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। বমি হয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে দই খেতে পারেন।

মশলাবিহীন খাবার:

বমি হওয়ার পরে মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ। বরং বমি হওয়ার পরে এমন খাবার খাওয়া উচিৎ যা খুব বেশি মশলাযুক্ত নয় যেমন- খিচুড়ি, স্যান্ডউইচ, সিদ্ধ আলু ইত্যাদি। কারণ মশলাযুক্ত খাবার এসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করবে এবং পুনরায় বমির উদ্রেক করবে।