রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে নিয়ে অনেক সময়ই চিকিৎসককে বলতে শোনা যায়—রোগীর রক্তে লবণ কমে গেছে! এবার স্যালাইনের মাধ্যমে লবণ ভরতে হবে। শরীরে লবণ কোথা থেকে আসে, কতটুকু থাকে আর কেনই বা কমে যায়? কমে গেলেই বা কী এমন ক্ষতি? আমাদের শরীরে রক্ত বা তরল আসলেই লবণাক্ত। তার মানে এতে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি। কোষের বাইরের তরলে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি—প্রতি লিটারে ১৩৫ থেকে ১৪৫ মিলিমোল। আর এই সোডিয়াম দেহের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখা থেকে শুরু করে স্নায়ু-রক্তনালির কার্যকারিতা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।   কেন লবণ কমে যায়? কোনো কারণে শরীর থেকে তরল বেরিয়ে গেলে রক্তে লবণ-পানি সব কিছুই কমে যেতে পারে। যেমন খুব বমি বা পাতলা পায়খানা হলে, খুব ঘাম হলে বা লবণ-পানি বেরিয়ে যায় এমন ওষুধ সেবন করলে। আবার কোনো কারণে দেহে অতিরিক্ত তরল জমে গেলে লবণের ঘনত্ব কমে গিয়ে বিপত্তি ঘটে। কিডনি, হৃদ্যন্ত্র বা যকৃতের সমস্যায় দেহ সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন করতে পারে না বলে দেহে পানি জমে যায় এবং লবণের ঘনত্ব কমে যায়। মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে, সংক্রমণে, টিউমারে বা স্ট্রোকের পর মস্তিষ্ক থেকে তরল ও লবণের ভারসাম্য রক্ষাকারী হরমোন এডিএইচ নিঃসরণে ঝামেলা হলেও লবণ কমে যেতে পারে।   লবণ কমে গেলে কী হয়? সোডিয়াম দেহের রক্তচাপ, তরলের ভারসাম্য, স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই হঠাৎ রক্তে সোডিয়াম কমে গেলে মস্তিষ্কের তরলে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মাথা ব্যথা, দুর্বলতা, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, চেতনা কমে যাওয়া, উল্টাপাল্টা আচরণ, এমনকি খিঁচুনি হতে পারে। রোগী অজ্ঞান হতে পারেন বা কোমায় চলে যেতে পারেন।   কী করা যায়? রক্তে লবণের অনুপাত বুঝতে চিকিৎসকেরা যে পরীক্ষা করেন তার নাম সিরাম ইলেকট্রোলাইটস। এতে সমস্যা পাওয়া গেলে ধীরে ধীরে বিচক্ষণতার সঙ্গে লবণের স্বাভাবিক পরিমাণ ফিরিয়ে আনা হয়। খুব দ্রুত লবণের পরিমাণ পরিবর্তন করলেও মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে এবং রোগী এমনকি চিরদিনের জন্য অক্ষম হয়ে পড়তে পারেন। তাই কোন স্যালাইন কী পরিমাণে কতক্ষণ ধরে দিতে হবে, তা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।