তৃতীয় ও সর্বশেষ ধাপে মানুষের যে দাঁত গজায়, তাকে আক্কেল দাঁত বা উইসডম টিথ বলা হয়। সাধারণত ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে এই দাঁত গজায়। বেশির ভাগ মানুষেরই চারটি বা দুই জোড়া আক্কেল দাঁত গজায়, যদিও এর বেশি বা কম হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
মানবদেহে আক্কেল দাঁতের কাজটা ঠিক কী এবং এটি জরুরি কি না, তা এখনো খুব স্পষ্ট নয়। তবে এই আক্কেল দাঁত নানাভাবে আপনাকে ভোগাতে পারে। তাই আক্কেল দাঁত নিয়ে অবহেলা করা ঠিক নয়।
প্রথমত, অনেক সময়ই আক্কেল দাঁত সোজাভাবে না গজিয়ে কোনাকুনি করে গজায় কিংবা ভেতর বা বাইরের দিকে বেঁকে থাকে, কখনো প্রায় শুয়ে থাকে। এমন বাঁকা গঠনের কারণে পার্শ্ববর্তী দাঁতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি পাশের চোয়ালের হাড় বা স্নায়ুরও সমস্যা করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, কখনো কখনো আক্কেল দাঁত মাড়ি ভেদ করে সম্পূর্ণরূপে না গজিয়ে আধাআধি মাড়ির ভেতরই রয়ে যায়। আধা গজানো এই দাঁতের ফাঁকে বারবার সংক্রমণ হতে পারে, ময়লা বা জীবাণু জমে, মাড়ি ফুলে যায়, ব্যথা করে এবং রক্তপাতও হতে পারে।
আক্কেল দাঁত ঘন ঘন এই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ালে একটা ওপিজি এক্স-রে করে দেখতে হবে তার গঠন, অবস্থান কেমন এবং এটি সম্পূর্ণভাবে গজিয়েছে কি না। যদি এক্স-রেতে প্রমাণিত হয় যে এটি বিপজ্জনকভাবে বেঁকে আছে, পাশের দাঁতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অথবা এমন মনে হয় যে এটির পক্ষে আর সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় কিংবা এর কারণে বারবার প্রদাহ বা সংক্রমণ হচ্ছে, তবে চিকিৎসক দাঁতটি তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আক্কেল দাঁতের বেয়াক্কেল অবস্থা
অনেক দিন আগে একজন রোগী তার ডানদিকের গাল ও মুখ ফোলা নিয়ে আমার কাছে আসে। আমি নিয়মমাফিক তাকে পরীক্ষা করে বললাম, ঘাবড়ানোর কিছু নেই, আপনার আক্কেল আসছে। লোকটি তখন অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আক্কেল আসছে? তার মানে? আমি বললাম, বুঝতে পারলেন না? মানে আপনার আক্কেল দাঁতটি এতদিনে উঠতে শুরু করেছে। আপনার আক্কেল হয়েছে। লোকটি আরও বিস্মিত হলো। তাহলে এতদিন কি আমি বেয়াক্কেল ছিলাম? আমি আমার মুখ থেকে মাস্কটি খুলতে খুলতে স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলাম, সেটা আপনিই জানেন। দাঁড়িয়ে থাকা নার্সের মিটিমিটি হাসি দেখে লোকটি হয়তো আমার রসিকতা বুঝতে পারল। শেষ পর্যন্ত আক্কেল দাঁত অর্থাৎ ইমপেকটিড মেন্ডিবুলার থার্ড মোলার দুটি দাঁত এক্স রে ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তুলে দেওয়ার পর সে সুস্থ হয়ে ওঠে। এই হচ্ছে আক্কেল দাঁতের একটি গল্প। অবশ্য এই দাঁতটিকে নিয়ে আরও সব মজার মজার গল্প রয়েছে। কেউ কেউ এই দাঁতটিকে বুদ্ধিদাঁত বা রিংবফড়স দাঁতও বলেন।
কে বা কখন এই দাঁতটির নাম আক্কেল দাঁত রেখেছেন তা বহু গবেষণা করেও আমি এখনো বের করতে পরিনি। তবে এই আক্কেল দাঁত নামটি দেওয়ার পেছনে যে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কতকগুলো কারণ রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিজ্ঞানসম্মত মতে, এই দাঁতটি মানুষের মুখে ১৮ বছর বয়স থেকে যে কোনো সময়ে উঠতে পারে। তাহলে সহজেই অনুমান করুন ওই বয়সের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো। শিশু বা কৈশোরে সবকিছু বোঝার ক্ষমতা থাকে না, তবে কৈশোর থেকে যৌবনে পৌঁছে একজন পুরুষ বা নারীর বুদ্ধি-বিবেচনার ব্যাপ্তি ঘটে এবং এটি স্বাভাবিকভাবে স্বীকৃত। একথা সবাই জানে একজন পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তির মুখে ৩২টি দাঁত গজায় এবং এগুলো হঠাৎ করেই গজায় না। প্রাথমিকভাবে একটি শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে তার মুখে দুধ-দাঁত উঠতে শুরু করে, যাকে বলা হয় অস্থায়ী দাঁত বা ডেসিডুয়াস টিথ। কারণ এসব দাঁত অস্থায়ী। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ওঠে, আবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়ে যায় এবং ওই স্থানে যে দাঁতটি পুনরায় আবির্ভূত হয় তাকেই বলে স্থায়ী দাঁত বা পারমানেন্ট টিথ।
বিভিন্ন অবস্থান: সাধারণত আক্কেল দাঁত বা উইজডম টিথ পর্যাপ্ত স্থান না পেয়ে চোয়ালের ভেতরে বা নিচের দিকে থাকতে পারে। আক্কেল দাঁতের এই অবস্থানগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। আক্কেল দাঁত তুলে ফেলার আগে সাহায্যে অবস্থান জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
ব্যথা: আক্কেল দাঁত উঠার কারণে দাঁতে ব্যথা হলে পার্শ্ববর্তী স্থানে ডেন্টাল ক্যারিজ আক্রান্ত দাঁতের উপস্থিতি নির্ণয় করা প্রয়োজন। অনেকে ক্ষেত্রে পাশের দাঁতে চাপ ও প্রদাহের কারণে ব্যথা হতে পারে। পেরিকরোনাইটিস : বেরিয়ে আসা আক্কেল দাঁতটির উপরিভাগ যে নরম টিস্যুর দ্বারা আবৃত থাকে তার ভেতরে খাদ্যকণা জমে থাকার কারণে অসংখ্য জীবাণুর জন্ম হয় এবং প্রদাহ বা ইনফেকশন সৃষ্টি হয়।
ডেন্টাল ক্যারিজ: আক্কেল দাঁতের অসমান অবস্থানের কারণে খাদ্যকণা জমা হয়ে ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি হয়। দাঁত সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে না এলে এই ক্যারিজ দাঁতকে ফিলিং করা অর্থহীন, সুতরাং মুকুট বা ক্রাউন ভয়ানকভাবে ভেঙে যাওয়ার আগেই দাঁতটি তুলে ফেলাই ভালো।
দ্বিতীয় মলার দাঁত আক্রান্ত : মাড়ির দ্বিতীয় দাঁতটি ক্রমাগত ধাক্কা খেতে খেতে একদিকে হেলে পড়তে পারে। তা ছাড়া দুই দাঁতের সংযোগ স্থলটিতে খাদ্যকণা জমা থাকায় একটি পেরিওপকেট সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং আক্কেল দাঁতেরও বেয়াক্কেল অবস্থা রয়েছে।
আক্কেল দাঁতের সমস্যা পেরিকরোনাইটিস
কয়েকদিন ধরে নাজমা কলেজে যাচ্ছে না। তার বান্ধবীরা বাসায় ফোন করে জানতে পারল তার দাঁতে ব্যথা হচ্ছে এবং মুখ ফুলে খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মুখ খুলতে পারছে না।
আমাদের দেশে সাধারণত ১৮-২৫ বছরের যুবক-যুবতীরা এ জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আক্কেল দাঁতের এই সমস্যাকে পেরিকরোনাইটিস বলা হয়। সাধারণত দাঁত গজানোর সময় বা আংশিক গজানো অবস্থায় দাঁতের উপরস্থ বা পার্শ্বস্থ টিস্যুর সংক্রমিত অংশ পেরিকরোনাইটিস নামে পরিচিত।
এ রোগের লক্ষণ
১. আপনার বয়স যদি হয় ১৮-৩০ বছর।
২. কয়েকদিন ধরে নিচের চোয়ালের সর্বশেষ প্রান্তে চাপা চাপা ব্যথা অনুভব করেন।
৩. খাবার সময় বা দাঁত ব্রাশ করার সময় ওই স্থানে ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
৪. মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে।
৫. ধীরে ধীরে মুখ ফুলে যাচ্ছে এবং সামান্য চাপ লাগলে পুঁজ বেরুচ্ছে।
৬. হা করতে কষ্ট হচ্ছে, কোনো কিছু চিবিয়ে খেতে পারছেন না। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুর্বল অনুভব করছেন।
চিকিৎসা: এ ক্ষেত্রে ওই দাঁতের এক্স-রে করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়দি দেখা যায় দাঁতের গতি ভালো তাহলে দাঁতের উপরস্থ অপারকুলাম টিস্যুগুলো ছোট একটি অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করলে দাঁতটি স্বাভাবিক গতিতে গজাতে পারবে। কিন্তু যদি দেখা যায়, দাঁতটির অবস্থান স্বাভাবিক নয় বা হাড়ের মধ্যে আছে; টিস্যু অপসারণ করলেও স্বাভাবিকভাবে দাঁতটি গজাবে না সে ক্ষেত্রে দাঁত তুলে ফেলাই উত্তম। অনেক সময় দেখা যায় ক্যারিজ হয়ে দাঁতের উপরের অংশ একবারেই নষ্ট হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে আক্রান্ত দাঁতটি তুলে ফেলাই ভালো, তা না হলে ভবিষ্যতে পাশের ভালো দাঁতটি আক্রান্ত হতে পারে। দাঁতের অবস্থান ভালো এবং অপারকুলাম টিস্যু কিছুদিন পর এমনিতে মিলিয়ে যাবে সে ক্ষেত্রে মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলেই চলবে, কোনো অপারেশনের দরকার নেই।
এ রোগের জটিলতা:
১. পেরিকরোনাইটিস বারবার হতে পারে।
২. চিকিৎসায় দেরি হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে মুখম-লের অন্যান্য দিক ও গলার দিকও আক্রান্ত হতে পারে, যা সেলুলাইটিস নামে পরিচিত।
৩. অসটিওমাইলাইটিস হতে পারে।
৪. আক্কেল দাঁতের সামনের দাঁতটি ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো আংশিক দেখা দিলেই আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া। তবে এর আগে ঘরে বসেই আপনি পরিচর্যার ভার কিছুটা নিতে পারেন। যেমন-
৫. এ অবস্থায় প্রতিবার খাবার পর হালকা লবণ-গরম পানি দেয় কুলি করতে পারেন।
৬. কিছুটা ব্যথা থাকলেও একটু কষ্ট করে দাঁত ব্রাশ করে মুখ জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
৭. এ ছাড়াও ভালো কোনো মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করতে পারেন।

এ রোগের কারণ:
১. আক্কেল দাঁত ওঠার সময় দাঁতের উপরস্থ টিস্যুগুলো স্বাভাবিক নিয়মে ক্ষয়প্রাপ্ত না হলে বিপরীতে অবস্থিত দাঁতের চাপে উত্তোলিত ওই দাঁতের উপরস্থ টিস্যুগুলোর উপর বারবার কামড় পড়লে অথবা আঘাত লাগলে।
২. অনেক সময় দেখা যায়, আক্কেল দাঁতটি উঠতে পারছে না কিন্তু তার উপর যে টিস্যুদ্বারা দাঁতটি ঢেকে রয়েছে সেখানে খাবার জমে।যখন তা পরিষ্কার করা হয় না ফলে তা পচন ধরে ইনফেকশন হয়ে যায় এবং তখন প্রচ- ব্যথা হতে পারে।
পেরিকরোনাইটিস দাঁতের বৃদ্ধির সময় হলে তাই এর জটিলতা এড়াতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া একে অবহেলা করবেন না। তবে অব্যশই অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের সহায়তায় চিকিৎসা করাই উত্তম। বছরে অন্তত দু’বার আপনার ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন।
সময়মতো চিকিৎসা না নিলে
সময়মতো এই দাঁতের চিকিৎসা না নিলে এই সমস্যা জটিল হয়ে মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারে।
প্রশ্ন : আক্কেল দাঁত একটু বেশি বয়সে ওঠে, আমরা জানি। এবং এর সঙ্গে বুদ্ধির পরিপক্বতার একটি সম্পর্কের কথা বলা হয়। একে আমরা মেডিকেলের ভাষায় উইজডম টিথ বা থার্ড মোলার বলি। এই দাঁত অনেকেরই সমস্যা তৈরি করে বলে আমরা শুনতে পাই। কী ধরনের সমস্যা হয়?
উত্তর : আক্কেল দাঁত ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমত প্রচণ্ড ব্যথা হয়। মাড়িটা ফুলে যায়। এই ফোলাটা এত মারাত্মক হয় যে শুধু মুখের ভেতরে ফোলাটা থাকে না, গালের দিকে ফুলে ওঠে, গলার দিকে ফুলে ওঠে। রোগী হয়তো অনেক সময় দ্বিধায় পড়ে যায়। ভাবে, টনসিলের ব্যথা বা মামস হয়েছে। কারণ, আক্কেল দাঁতের জন্য যে গলা, মুখ ফুলে যেতে পারে, এ বিষয়ে আমাদের ধারণা কম। তাই রোগী দ্বিধায় পড়ে যায়। তবে আক্কেল দাঁতের জন্য এই সমস্যাগুলো প্রায়ই হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : অন্যান্য দাঁতের বেলায় তো এ ধরনের সমস্যা হয় না। তাহলে আক্কেল দাঁতের বেলায় এমন হয় কেন?
উত্তর : দুধের দাঁত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচ থেকে আরেকটি দাঁত আসতে থাকে। ফলে ওইটির একটি জায়গা থাকে। তবে আক্কেল দাঁতগুলো ১৮ বছরের পরে ওঠে। তখন আমাদের মাড়ির টিস্যু একটু পুরু ও শক্ত হয়ে যায়। দাঁতটি আসতে হলে তো মাড়িকে একটু চিরে উঠতে হবে। ফলে ওঠার সময় চাপ হয় এবং মাড়িকে একটু কেটে কেটে সে বের হয়। সে জন্য এই ব্যথা থাকে।
প্রশ্ন : এই যে না উঠতে পারা, এর কারণ কী? এর কারণ কি এমন হতে পারে যেহেতু এটি ১৮ বছরের পরে উঠছে, ওইখানে পর্যাপ্ত জায়গা কী দাঁতটি পাচ্ছে না বা চোয়ালের পরিমাপ বা বৃদ্ধি—এগুলো কি কোনো ভূমিকা রাখে?
উত্তর : এটা তো অবশ্যই একটি ভূমিকা রাখে। ১৮ বছরের সময় মোটামুটি আমাদের চোয়ালটি একটি আকৃতি নিয়ে নেয়। অনেক সময় অন্যান্য দাঁত আঁকাবাঁকা থাকে, তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোয়ালটা বড় হতে থাকে, দাঁতগুলো জায়গা পেয়ে যায়। তবে আক্কেল দাঁতটি হচ্ছে সবচেয়ে শেষ দাঁত। চোয়ালটি একটি আকার ধারণ করে ফেলে, ফলে দাঁতটি পর্যাপ্ত জায়গা পায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, আক্কেল দাঁত যেহেতু শেষ দাঁত, তাই এর অবস্থার পরিবর্তন থাকে। সে হয়তো সোজা না হয়ে, শুয়ে আছে। ফলে সে তো আর উঠতে পারছে না বা একটু কাত হয়ে সামনের দাঁতের সঙ্গে আটকে গেছে। সে কারণে জায়গা না পেয়ে তখন সমস্যা তৈরি হয়।
প্রশ্ন : দাঁত তুলে ফেলার কথা শুনলে মানুষের মধ্যে অনেক ভয় কাজ করে। সে সঙ্গে যদি আক্কেল দাঁত ফেলে দিতে হয়, তাহলে ভয় আরো বেশি। এই ভয় দূর করার উপায় কী? আসলে কি এটি ভয়ের কোনো বিষয়? কিংবা এই সার্জারিটি সুন্দরমতো, ভালোভাবে করতে হলে কার কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর : অবশ্যই একটি দাঁত ফেলতে বললে মানুষের ভয় লাগবে। আপনি যদি আমাকে দাঁত ফেলতে বলেন, আমিও ভয় পাব। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে আক্কেল দাঁত ফেলাতে খুব ভয়ের কিছু নেই। আমরা যদি রোগীকে ভালোভাবে একটু পর্যায়গুলো বুঝিয়ে বলতে পারি, পরামর্শ দিয়ে নিই, এটা আসলে তেমন ভয়ের কিছু নয়।
এ ধরনের সমস্যা হলে রোগীকে প্রথমে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের কাছে যেতে হবে। তাঁরা যেহেতু এই বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন, তাঁরা ভালো করেই জানেন কোথায় ইনসিশন দিতে হবে। কোথায় হাড় কাটতে হবে। কীভাবে দাঁতকে চাপ দিয়ে তুলতে হবে। ফলে এটি রোগীর জন্য খুব ক্ষতিকর নয়, এখানে ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নেই।
প্রশ্ন : আক্কেল দাঁত তোলার সময় কি স্থানীয়ভাবে অবশ (লোকাল অ্যানেসথেশিয়া) করে তোলার বিষয়, নাকি এর জন্য অজ্ঞান করারও প্রয়োজন হতে পারে? বা কোন সময় কোনটি ভালো?
উত্তর : যদি অবস্থান ভালো থাকে, তবে স্থানীয়ভাবে অবশ করে করতে পারি। আমাদের মাড়ির নিচের দিকে একটি রক্তনালি আছে। অনেক সময় দাঁতটি রক্তনালির কাছাকাছি থাকে, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা পুরোপুরি অজ্ঞান করি।
প্রশ্ন : আক্কেল দাঁতের সমস্যা হলে কেউ যদি সময়মতো চিকিৎসা না নেন, তবে এই সংক্রমণ কতখানি ক্ষতির কারণ হতে পারে?
উত্তর : আক্কেল দাঁতে বারবার ব্যথা হচ্ছে, কমে যাচ্ছে—এতে অনেকেই একে এড়িয়ে যান। ভাবেন, এটি কোনো বিষয় নয়। তবে দাঁতটি যেহেতু একটি হাড়ের মধ্যে রয়েছে, সেই সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে হাড়টি ক্ষয় হয়ে গলার দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি অনেক সময় কেবল ওই জায়গা নয়, সামনে-পেছনে এমনভাবে হয়ে আসে, যাকে আমরা জীবনঝুঁকির কারণ হিসেবে বলি। পুরো গলা ফুলে শক্ত হয়ে যায়। এ ধরনের রোগী এতটাই অস্থিতিশীল হয় যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে সার্জারি করাতে হয়। তখন তার জীবন বাঁচানো একটু ঝুঁকির হয়ে যায়।
প্রশ্ন : এটি কি গলা থেকে বুক পর্যন্ত বা মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়াতে পারে?
উত্তর : হ্যাঁ। এটি ছড়াতে থাকে। এই সংক্রমণ গলার দিক থেকে বুকের দিকে নামতে পারে। এমনকি গলা থেকে শুরু করে মুখের ভেতর থেকে ওপরের দিকে চলে যেতে পারে।
প্রশ্ন : একজন মানুষের আক্কেল দাঁতের সমস্যা হলে মৃত্যুর ঝুঁকিও হয়ে যায়, আপনি বলছিলেন। এর কারণ কী, কেন হয়?
উত্তর : আসলে সংক্রমণ হলে সেখানে কিছুটা ফ্লুইড জমে। গলার দিকের টিস্যুগুলো নরম হয়, সেই পথ দিয়ে ফ্লুইডটি গলা দিয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে। ফলে সেই সংক্রমণও ছড়াতে থাকে। এর ফলে গলা ফুলে যাচ্ছে। তখন সেটি আমাদের শ্বাসনালিকে চেপে ধরে। সে জন্য এর সময়মতো চিকিৎসা অবশ্যই করতে হবে।