ফুলের দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যায় এবং আপনি সুখ অনুভব করেন। কিছু ফুল আছে ভক্ষণযোগ্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এমনই একটি ফুল হচ্ছে জবা ফুল। বিভিন্ন রোগের প্রতিকারক হিসেবে এবং চুলের যত্নে জবা ফুল চমৎকার কাজ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাল জবা আয়ুর্বেদ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গবেষকরা বলেছেন, সুস্থতায় ভেষজ হিসেবে জবা ফুল সব দিক থেকে নিরাপদ। যাদের যৌনশক্তি কমে এসেছে তাদের যৌনশক্তি বাড়াতে খুবই কার্যকরী এই জবা। আবার যে কোনও ব্লাড গ্রুপের সদস্যরাও এটি খেতে পারেন। সব থেকে বড় কথা হলো- শরীরে জবার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে জবা ফুলের কিছু ব্যবহার জেনে নেই আসুন।
চুল পড়ে যাওয়া কমায়
চুল পড়া রোধে জবা ফুলের পাপড়ি ব্যবহার করা খুবই প্রাচীন প্রতিকার। জবা ফুলের তেল চুলের গোড়া শক্ত করে কারণ এতে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আছে। এই তেল আস্তে আস্তে মাথার তালুতে মালিশ করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় ও মাথার ত্বক পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে পারে।

অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে
এশিয়ান জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, জবা চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে ধীর করতে পারে। কিছু জবা ফুল পানিতে দিয়ে ২০ মিনিট ফুটানোর পর ঠাণ্ডা করে নিন। জবাফুলকে পেস্ট করে নিয়ে মাথার তালুতে ও চুলে লাগান এবং ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করুন এবং জবার তেল অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে।
চুল কালো করে
নারিকেল তেলের সাথে জবা ফুল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল কালো হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা পায়। প্রাকৃতিকভাবেই এই ফুলটি রোদের তাপে চুল ধূসর হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।
ব্রণ উপশম
ব্রণের সমস্যায় অনেকেই পড়ে থাকেন। বিভিন্ন ব্রণ প্রতিরোধক উপকরণেও এটি উপশম করা সম্ভব হয় না। এর জন্য প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন জবা ফুল অনেক উপকারী। কেননা প্রাকৃতিক অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি উপাদান এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই জবা ফুল ব্রণের সমস্যা প্রাকৃতিকভাবেই নির্মূল করে থাকে।
ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরল কমাতে

উচ্চ রক্তচাপের কারণে যাঁদের ওষুধ খেতে হয়, নিয়মিত তাঁরা কয়েক কাপ করে জবা ফুলের জল খান। প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসবে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ফল পেতে দিনে তিন কাপ করে জবা ফুলের জল অন্তত ছ-সপ্তাহ খেয়ে যেতে হবে। আবার ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমাতেও জবার জুরি মেলা ভার।
জ্বর নিয়ন্ত্রণ করে
ঠান্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হলে কিছু জবা ফুলের পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে চা তৈরি করে পান করুন। দ্যা ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মাসিউটিক্যাল এন্ড বায়ো মেডিক্যাল সাইন্স এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা যায় যে, জ্বরের সময় জবাফুলের চা শীতলীকারক হিসেবে কাজ করে। জবার প্রদাহ রোধী উপাদান মিউকাস পর্দার প্রদাহ কমতে সাহায্য করে।
ঠান্ডা উপশম
জবা ফুলে ভিটামিন সি রয়েছে। ফলে এই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জবা ফুল হালকা ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথা বা মাথাব্যথা সারিয়ে ফেলতে পারে। এর জন্য সবজি হিসেবে বা এমনিই খাওয়া যেতে পারে এই জবা ফুল। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভেষজ ওষুধ হিসেবেই জবাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া গ্রীষ্মে নিজেকে শীতল রাখতে দিনে কয়েক কাপ জবার জলই যথেষ্ট। কারণ জবার মধ্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে।
ব্যথা কমায়
শরীরের ব্যথা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে জবা ফুল। এজন্য পাঁচটি লাল জবার পাতা ও পাঁচটি পাপড়ি নিয়ে পানিতে দিয়ে ৩-৫ মিনিট ফুটানোর পর মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হতে দিন। আধা ঘন্টা পরে এটি পান করুন। ২১ দিন পর্যন্ত এই মিশ্রণটি পান করলে শরীরের ব্যথা কমবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের মহাষৌধ
কার্ডিওভাসকুলার এবং সংবহনতন্ত্রের সমস্যাতেও উপকারী এই জবা ফুল। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্যও এটা মহাষৌধ। আবার গলা ধরলেও খেতে পারেন, কাজ দেবে।

বয়স ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায়
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জবা ফুল শুধু ক্যান্সার প্রতিরোধই করে না নিয়মিত এই জবা ফুল আহারে আমাদের বয়স বাড়ার প্রবণতাকে ধীর গতি সম্পন্ন করে তুলতে সহয়তা করে। ফলে এই জবা ফুল একজনকে চিরযৌবন এনে দিতে পারে।
হজমে সহায়তা
জবা ফুল হজমেও সহায়তা করে থাকে। প্রতিদিন নিয়ম করে এই জবা ফুল খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং হজমক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে।
মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI) প্রতিরোধ করে
এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিন এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, জবা ফুলের জীবাণুনাশক ও ছত্রাকনাশক উপাদান কেন্ডিডা অ্যাল্বিকান্সের বিরুদ্ধে কাজ করে। জবা ফুলের পুষ্টি উপাদান মূত্রনালীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং ইউটিআই থেকে মুক্তি দেয়। জবা ফুলের চায়ে ফ্লাভনয়েড থাকে যা ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে।
কিভাবে খাবেন
দু-ভাবে আপনি জবা ফুল খেতে পারেন। প্রথমে কয়েক’টা জবা ফুল ভালো করে ধুয়ে, সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে সেই পানিটা খেতে পারেন। অথবা সকালে গরম পানিতে পনেরো মিনিট জবা ফুল ভিজিয়ে রেখে সেই পানিটিও খেতে পারেন। এভাবে নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।