অজস্র ফুলে-ফলে ভরে ওঠে বর্ষার বাংলা। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারার সঙ্গে নিজস্ব রূপ-রং, স্বাদ-গন্ধ নিয়ে আসে গ্রামবাংলার পরিচিত লটকনও। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান (খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগ) শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, বর্ষার সব মৌসুমি ফলেরই পুষ্টিগুণ ভালো। এই ফলগুলো কম ক্যালরি-সম্পন্ন।
যাঁরা খেতে ভালো বাসেন, তারা খাবারের পর এই ফলগুলো খেতে পারেন। এ ছাড়া যাঁরা খাবার কম খেয়ে ডায়েট করছেন, তাঁদের জন্যও এই ফলগুলো ভালো। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। তাই তিনি সময় শেষ হওয়ার আগে এসব মৌসুমি ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন।
পেয়ারা

সুস্বাদু ফল হিসেবে পেয়ারার জনপ্রিয়তা বেশ। আর পেয়ারাটি যদি গাছপাকা হয় তাহলে তো কথাই নেই। ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালরি, ভিটামিন-এ, আই ইউ, থিয়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন। স্বাদ, পুষ্টিগুণ আর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখলে পেয়ারা খেলে প্রচুর লাভ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেয়ারা রাখা যেতে পারে।
আমলকি
বর্ষার ফল হলেও, সারা বছরই পাওয়া যায় আমলকী। খেতে কিছুটা তেঁতো আর তেমন রসালো নয় বলে আমলকী তেমন একটা খাওয়া হয় না। তবে আমলকীর গুণভাণ্ডার একে করে দেয় গুরুত্বপূর্ণ। আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফসফরাস, ফাইবার এবং কার্বহাইড্রেড। তাই প্রতিদিন একটি করে আমলকীর আহার প্রতিরোধ করবে নানা রোগের ঝুঁকি। আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষতিকারক উপাদান নির্গত করে লিভারকে রাখে সুস্থ।
জামরুল
জামরুল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে খনিজ পদার্থ রয়েছে কমলার তিন গুণ এবং আম, আনারস ও তরমুজের সমান। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ লিচু ও কুলের সমান এবং আঙুরের দ্বিগুণ। আয়রনের পরিমাণ কমলা, আঙুর, পেঁপে ও কাঁঠালের চেয়েও বেশি। ফসফরাসের পরিমাণ আপেল, আঙুর, আম ও কমলার চেয়ে বেশি। এই ফলটিতে আছে ক্যালরিশক্তি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, খাদ্যআঁশ, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি নানা উপাদান। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে জামরুলের জুড়ি নেই।
আমড়া
বর্ষার আরেকটি সুস্বাদু এবং সহজলভ্য ফল হল আমড়া। টক-মিষ্টি স্বাদের আমড়ায় রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন ও ক্যালসিয়াম। এছাড়াও মুখে রুচি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে আমড়া। তেল ও চর্বিযুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর আমড়া খেলে দ্রুত খাদ্য হজম হয়। সর্দি-কাশি-জ্বরের উপশমেও আমড়া অত্যন্ত উপকারী। এতে ক্যালসিয়াম থাকে বলে এটি শিশুর দৈহিক গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
কামরাঙা

টক-মিষ্টি স্বাদের কামরাঙার উৎপত্তি শ্রীলঙ্কায়। কোথাও কোথাও এটি স্টার ফ্রুট বা তারাফল নামে পরিচিত। কী আছে জাম্বুরায়, আর কেনই বা খেতে হবে, জানতে চেয়েছিলাম খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আলেয়া মাওলার কাছে। তিনি বললেন, প্রচুর ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়ামসহ শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান আছে এতে। তাই কখনো রোগ নিরাময়ে, কখনো রোগ প্রতিরোধে এবং শরীরের ঘাটতি পূরণের জন্য জাম্বুরা খুব কার্যকর। এই ফল নিয়মিত খেলে অনেক রোগ এড়ানো যায়।
লটকন
বর্ষার ফল লটকন। বাজার, ফলের দোকান কিংবা ফেরিওয়ালার ঝুড়ি—সবখানেই চোখে পড়বে থোকা থোকা এ ফল। হালকা টক ও মিষ্টির মিশ্রণে এর স্বাদটাও ব্যতিক্রম। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘ভিটামিন সি, থায়ামিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকার কারণে লটকন খেলে মুখে ঘা হবে না। শরীর সুস্থ রাখতেও ফলটি বিশেষ কাজের। এর জলীয় অংশ রক্তশূন্যতা কমায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি ত্বকের রুক্ষতা কমায়, শরীরে পানির সমতা ঠিক রাখে।’
জাম্বুরা

জাম্বুরা বর্ষার আরেকটি বহুল পরিচিত ফল। অঞ্চলভেদে এক ‘বাতাবিলেবু’ বা ‘ছলম’ও বলা হয়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ জাম্বুরা নানান রোগের প্রতিকারক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এই ফলের উপাদান রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ও বি হাড়, দাঁত, ত্বক ও চুলে পুষ্টি যোগায় এবং সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। জ্বর, মুখের ঘা ইত্যাদি রোগে জাম্বুরা বেশ উপকারি। নিয়মিত জাম্বুরা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ও পেটের নানা রকম হজমজনিত সমস্যার প্রতিকার হয়।
করমচা
গ্রামাঞ্চলের সহজলভ্য একটি ফল। পুষ্টিগুণে ভরপুর টক স্বাদের এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ। যা পাকলে জমাট রক্তের মতো লাল হয়ে যায়। করমচায় ফ্যাট বা কোলেস্টেরল না থাকায় তা ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের জন্য খুব ভালো। ওজন কমাতে সাহায্য করা এই ফলটি খাবারে রুচি বৃদ্ধি করে। মৌসুমী সর্দি-জ্বর, স্কার্ভি, দাঁত ও মাড়ির নানা রোগ প্রতিরোধে ফলটি অতুলনীয়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোসহ গায়ের চুলকানি ও ত্বকের নানা রোগ প্রতিরোধে জুড়ি নেই করমচার। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সহায়তা করে করমচা।