nkl; ক্রীড়া প্রতিবেদক : মুস্তাফিজুর রহমান যাবেন, যাবেন না—পেন্ডুলামের মতো প্রশ্নটা দুলেছে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টি-টোয়েন্টির সময় থেকেই। এক সময় তো যাবেনই না বলে মনে হচ্ছিল। তবে ফিটনেস ফিরে পাওয়ার পর সে সিদ্ধান্ত পাল্টে আশা-নিরাশার নতুন দোলাচলে মুস্তাফিজ। আজ না কাল করতে করতে অবশেষে গতকাল ব্রিটিশ ভিসা পেয়েছেন বাঁহাতি এ পেসার। আর ইংলিশ কাউন্টি সাসেক্সের হয়ে খেলতে সকালের ফ্লাইটেই লন্ডন যাচ্ছেন তিনি। মিশন নতুন কন্ডিশনেও বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো। অনুজকে সুদূর জ্যামাইকা থেকে শুভ কামনা জানিয়েছেন কাউন্টিতে সবচেয়ে পরিচিত বাংলাদেশি সাকিব আল হাসান। গতকাল টেলিফোনে কথা বলে মনে হলো, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট লিগে নিজের খেলার পাশাপাশি সাসেক্সের মুস্তাফিজের খোঁজখবরও রাখবেন তিনি। এর কারণ পরে বলা যাবে। আগে জানা যাক, ইংলিশ কাউন্টিতে খেলার সুযোগ পেয়ে কী প্রতিক্রিয়া মুস্তাফিজুর রহমানের, ‘খেলার সুযোগ পেলে ভালো তো লাগেই। ভিন্ন একটা কন্ডিশনে খেলব...এই তো!’ ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার পর থেকেই ব্রিটিশ ভিসার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছিলেন মুস্তাফিজ। এই ‘হবে, হচ্ছে’র মধ্যে গত সপ্তাহে বিসিবি একাডেমি মাঠে অনুশীলনে নামার আগে বলছিলেন, ‘ইংল্যান্ড আমার জন্য একেবারে নতুন না। একবার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে সফরে গিয়েছিলাম। একটা ম্যাচ খেলেছিলাম। সে ম্যাচে সম্ভবত দুটা উইকেটও পেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ পায়ে ব্যথা পাওয়ায় পরের ম্যাচগুলো আর খেলা হয়নি।’ মুস্তাফিজ অধ্যায় ওখানে থেমে গেলে সাসেক্স তাঁকে পেতে মোটেও মরিয়া হয়ে উঠত না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই দুর্দান্ত বোলিং করা সাতক্ষীরার এ তরুণ মাতিয়েছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগও। সে কারণেই মুস্তাফিজকে না পাওয়ার আশঙ্কায় আর্তনাদ উঠেছিল সাসেক্সে। অবশেষে অনেক অনিশ্চিয়তা টপকে কাঙ্ক্ষিত বোলারটিকে পাচ্ছে সাসেক্স। সূচি বলছে, আগামীকাল চেমসফোর্ডে এসেক্সের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে কাউন্টিতে অভিষেক হওয়ার কথা মুস্তাফিজের, যদি বিলম্বিত যাত্রা না ঘটে। এই ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট আসরের সমান্তরালে চলছে রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপ। সাসেক্স কোনো আসরের ফাইনালে উঠতে না পারলেও এ দফায় মোট ৭টি (৪ ওয়ানডে, ৩ টি-টোয়েন্টি) ম্যাচে মুস্তাফিজকে পাবে সাসেক্স। গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোতে পারলে মিলবে বাংলাদেশি কাটারমাস্টারের বাড়তি সার্ভিসও। চিন্তাটা একান্তই সাসেক্সের। তবে অন্য উচ্চাশা আছে বাংলাদেশ দলেরও। কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে খুব চেয়েছেন ইংল্যান্ডে খেলে মুস্তাফিজ যেন ওই কন্ডিশনের সঙ্গে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য নিজেকে তৈরি করে নেন। সাকিব আল হাসানও উদগ্রীব ইংলিশ কন্ডিশনে মুস্তাফিজের ‘প্রতিক্রিয়া’ দেখতে, ‘যুব দলের হয়ে আগেও একবার ইংল্যান্ড সফর করেছে মুস্তাফিজ। তবে এবারের সফরটা ভিন্ন। উপমহাদেশের কন্ডিশনে এত দিন খেলেছে। আমি দেখতে চাই ইংলিশ কন্ডিশনে খেলার চ্যালেঞ্জে ও কিভাবে রি-অ্যাক্ট করে।’ ইংলিশ কন্ডিশন মানেই বাউন্স আর সুইং। উপমহাদেশের উইকেটের মতো বল অতটা গ্রিপ করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। উরস্টারশায়ারে খেলার সময় যে কারণে নিজের স্ট্রাগলের কথাও জানালেন সাকিব, ‘ইংল্যান্ডে সুবিধা কি, কাউন্টি যেমন চায় তেমন উইকেটই বানাতে পারে। উরস্টারশায়ারে সব সময় পেস সহায়ক উইকেটে খেলতে হয়েছে আমাকে। মুস্তাফিজের কথা ভেবে সাসেক্সও বল গ্রিপ করে, এমন উইকেট বানাতে পারে।’ সমস্যা হলো, সূচি অনুযায়ী সম্ভাব্য সাত ম্যাচের মাত্র তিনটি মুস্তাফিজের ‘ইংলিশ হোম’ হোভে, বাকিগুলো প্রতিপক্ষের মাঠে। মুস্তাফিজের অবশ্য অতশত নেই ভাবনায়, ‘যাই দেখি আগে। চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার। বাকিটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা।’ অবশ্য উইকেটই শুধু না, ইংল্যান্ডের অচেনা ভুবনে একা সব কিছু সামলে চলাও একটা চ্যালেঞ্জ। আইপিএলে সে বাধা উতরে ফেরা মুস্তাফিজ তাই প্রসঙ্গটা উঠতেই হাসেন, ‘আমি তো মাঠ আর রুম ছাড়া কোথাও যাই না।’ কাউন্টিগুলো অবশ্য হোটেল রুম নয়, বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্য বাড়ি ভাড়া করা থাকে। সাকিব যেমন উরস্টারশায়ার জীবনে শুরু করেছিলেন রান্নাবান্নাও। কিচেনে মুস্তাফিজকে কল্পনায় দেখে ফোনের ওপ্রান্ত থেকে সাকিবের হাসি, ‘এ কাজটাও না হয় শিখুক!’ অবশ্য ইংল্যান্ডে ভাষা কিংবা খাবার কোনোটাই সমস্যাসংকুল হওয়ার কথা নয় মুস্তাফিজের জন্য। প্রতিটা কাউন্টিতে যেমন বাংলাদেশি স্টাইলে খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, তেমনি আশপাশেই পাবেন স্বদেশিদেরও। মুস্তাফিজের এবারের ইংল্যান্ড যাত্রাও হচ্ছে বাঙালিয়ানার মধ্য দিয়েই। আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটেই যে যাচ্ছেন তিনি, যে উড়ালে বাড়তি সুবিধা হিসেবে থাকছেন সাবেক কোনো ক্রিকেটার। যত দূর জানা গেছে, তিনি জাতীয় দলের সাবেক মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সানোয়ার হোসেন। লক্ষ্য একটাই—সর্বোচ্চ স্বস্তি দিয়ে মুস্তাফিজের সেরাটা বের করে আনা।