hjloi নাম দুটি আদুরে, তবে এক অর্থে সেগুলো তো ভয়ংকরও। বেলজিয়ামের ‘রেড ডেভিলস’ আর ওয়েলসের ‘ড্রাগনস’। লাল শয়তানের সঙ্গে ড্রাগনের সেই আগুনে ফুটবল-লড়াইয়ে মঞ্চ আজ ফ্রান্সের লিল; ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে। বেলজিয়ামের জন্য শেষ আটে উত্তরণ বলার মতো কোনো অর্জন নয়। দল তাদের তারায় তারায় খচিত। এডেন হ্যাজার্ড, কেফিন দে ব্রুইন, রোমেলু লুকাকু, থিবো কোর্তোয়া, রাদিয়া নাইনগোলান, এক্সেল উইটসেল—ইউরোপের ক্লাব ফুটবল মাতানো সব ফুটবলার বেলজিয়ামের। বিপরীতে ওয়েলসে রয়েছেন কেবল গ্যারেথ বেল। প্রতিপক্ষের মতো মহাদেশীয় ফুটবলের সমীহ জাগানিয়া শক্তিও তারা কখনো ছিল না। সেই কবে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে খেলেছে সর্বশেষ। ৫৮ বছর বাদে আবার এবার বড় প্রতিযোগিতায়। অংশগ্রহণটাই যেখানে ওয়েলসের বড় অর্জন, সেখানে কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরণ তো বিস্ময় জাগানিয়া। আর এত দূর যখন এসেই পড়েছে, বিস্ময়টা আরেকটু বাড়ানোর চেষ্টা কি আর করবে না তারা? ইউরোতে বেলজিয়ামের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো। ট্রফি জয়ে ‘ডার্ক হর্স’-এর তকমা তাদের গায়ে, অথচ ইতালির কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে যায় ০-২ গোলে। শুধু হার নয়, যেমন অসহায় আত্মসমর্পণ ছিল, তাতে বেলজিয়ামকে বাড়ির ঘোড়া ধরতে বাধছিল অনেকের। কিন্তু পরের ম্যাচগুলোয় তাদের প্রত্যাবর্তন প্রবল দাপটে। আয়ারল্যান্ডকে ৩-০ এবং সুইডেনকে ১-০ গোলে হারিয়ে ওঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেখানে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয়কে বিবেচনা করা হচ্ছে এবারের প্রতিযোগিতায় কোনো দলের সেরা আক্রমণাত্মক ফুটবল প্রদর্শনী হিসেবে। ওয়েলসের এত দূর আসা অতটা দাপটে নয়। স্লোভাকিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু, পরের খেলায় ইনজুরি সময়ে গোল খেয়ে ১-২ ব্যবধানে হেরে যায় ইংল্যান্ডের কাছে। রাশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করে নকআউট পর্ব। সেখানে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে কায়ক্লেশে হারায় ১-০ ব্যবধানে। তবে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই গোল পেয়েছেন বেল, দ্বিতীয় রাউন্ডে জয়সূচক গোলটির উৎস তাঁর ক্রস। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারের এমন ফর্ম আশা দিচ্ছে ওয়েলসকে। ইউরোর বাছাই পর্বেও এই দুটি দল ছিল একই গ্রুপে। সেখানে এক ম্যাচ গোলশূন্য, অন্যটিকে বেলের গোলে ওয়েলসের জয়। বেলজিয়াম কোচ মার্ক উইলমটস তাই সমীহ করছেন প্রতিপক্ষকে, ‘ওয়েলসকে আমরা খুব ভালোভাবে জানি। অনেক দূর এগিয়েছে তারা। আর ওদের দলে রয়েছে দুজন অসাধারণ ফুটবলার—রামসি ও বেল। বাছাই পর্বে ওদের সঙ্গে হেরেছি একজনের ব্যক্তিগত ভুলের কারণে। তবে এরপর গোলের অনেক সুযোগও তৈরি করেছিলাম আমরা।’ তবে ওই ম্যাচের ফল ওয়েলসকে বাড়তি প্রেরণা দেবে বলে বিশ্বাস বেলের, ‘বেলজিয়ামের বিপক্ষে বাছাই পর্বে ভালো ফল ছিল আমাদের। আশা করি, এটি ওদের মাথায় খেলা করবে আর আমাদের তা এগিয়ে দেবে।’ তবে বাছাই পর্বে ওয়েলস জিতলেও আজকের লড়াইয়ে তারা পরিষ্কার আন্ডারডগ। এটিকে ভুল প্রমাণ করার জন্যও তো বাড়তি উজ্জীবিত থাকতে পারে ওয়েলস। বেল অবশ্য সেভাবে ভাবছেন না, ‘আমাদের বাড়তি প্রেরণা একেবারে প্রয়োজন নেই। বুঝতে পারছি বেলজিয়াম ভালো দল। ইউরো জেতা ওদের লক্ষ্য। ফাইনালে ওঠার পথে প্রতিটি দলকেই ওরা একেকটি ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছে। এতে অন্য দলের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ পায় না আর আমাদেরও এখান থেকে বাড়তি প্রেরণা নেওয়ার কিছু নেই।’ বরং নিজেদের খেলায় মনোযোগ দেওয়ার তাড়না তাঁর, ‘আমরা মনোযোগ দিতে চাই নিজেদের খেলায়। নিজেদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে চাই মাঠে। বেলজিয়ামকে আমরা আগে হারিয়েছি, আবারও তাই ওদের হারানোর সামর্থ্য রয়েছে। এখন সময় আমাদের জ্বলে ওঠার। প্রতিযোগিতায় একমাত্র ব্রিটিশ দল হিসেবে আমরা টিকে আছি, যা অবিশ্বাস্য এক অর্জন।’ হাঙ্গেরির বিপক্ষে আগের খেলায় ঊরুতে চোট পেয়েছিলেন হ্যাজার্ড। তবে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে তিনি ফিট হয়ে যাবেন বলে বেলজিয়ান ক্যাম্পের আশা। বহিষ্কারাদেশের কারণে অবশ্য খেলতে পারছেন না থোমাস ভারমিউলেন। ওয়েলসের অধিনায়ক অ্যাশলি উইলিয়ামসের সমস্যা কাঁধে। তবে তাঁর ফিট হয়ে যাওয়ার কথা। নিয়মিত অধিনায়ককে নিয়ে বেলজিয়াম-বধে ৩-৫-২ ফর্মেশনের ছক কষছে ওয়েলস—এমন খবর গণমাধ্যমে। কেননা ওভাবে খেলেই যে ইতালি একেবারে বোতলবন্দি করে রেখেছিল বেলজিয়ামের ‘লাল শয়তান’দের। ওয়েলসের ডিফেন্ডার নেইল টেলর মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটি, ‘আমরা ইতালি-বেলজিয়াম প্রথম ম্যাচ খুব ভালোভাবে দেখেছি। ম্যাচে বেলজিয়ামের ফুটবলাররা দৌড়েছে ১০৮ কিলোমিটার, ইতালিয়ানরা ১২০ কিলোমিটার। এটি অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান। তবে এই ফর্মেশনের জন্য অমন কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন। যদি সেটি ঠিকঠাক করা যায়, এটি খুব কার্যকর হতে পারে।’ সেই কার্যকর ফুটবলে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকায় দেখা যেতে পারে বেলকে। ওয়েলসের আগের চার খেলার মতোই। দেশের পক্ষে এত ভালো খেলার প্রেরণা কোথা থেকে আসে—এমন প্রশ্নের জবাবে বেল শুধু বলেছেন, ‘আমার শার্টের ড্রাগন থেকে, এটিই আমার শুধু দরকার।’ আজ তাই লাল শয়তানদের অন্তত কোনো ছাড় দেবে না ড্রাগনরা, এর পক্ষে বাজি ধরা যায় নির্দ্বিধায়। এএফপি, ডেইলি মেইল