
ক্রীড়া প্রতিবেদক : এক ক্লাব বোনাসে ভাসছে তো অন্য অনেক ক্লাবে ঈদের আগে বেতন না পাওয়ার হাহাকার। এক দল চ্যাম্পিয়নের মতো খেলে শিরোপা জিতেছে, তবু এর পেছনে পক্ষপাতের তুমুল হৈচৈ। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের সমাপনী রেশ এটাই। অভিযোগ, অনিয়ম আর অপ্রাপ্তির হতাশার ভিড়ে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না আনন্দ। তখনো তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। উল্টো বোর্ড সভাপতির একটি মন্তব্যে মনে হচ্ছিল ‘পণ্ড’ হওয়া আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বর ম্যাচটি বুঝি আবারও হচ্ছে। তবে অঙ্কটা এতই জটিল যে গতকাল প্রাইম ব্যাংককে হারানোর পরই জয়োল্লাস করেছে আবাহনী। একের পর এক সেলফি, সদলবলে গ্রুপ ফটো তোলার প্রতিটি মুহূর্তে পাঁচ মৌসুম পর শিরোপা জয়ের রোমাঞ্চ। কিন্তু সমালোচনার কাঁটার অস্বস্তিটা সেসব ছবিতেও ছিল। সাকিব আল হাসান ফেরার পর দাপটে শিরোপা জেতা আবাহনী অধিনায়ক তামিম ইকবালের উচ্ছ্বাসেও তাই মিশে সামান্য হতাশা, ‘অনেক আলোচনা-সমালোচনা শুনেছি। আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে যে, সৈকতের (মোসাদ্দেক) মতো তরুণের দুর্দান্ত নৈপুণ্য সেসব আলোচনায় ঢাকা পড়ে গেছে। অনেক ম্যাচ ও জিতিয়েছে আমাদের। কিন্তু অন্য আলোচনার কারণে প্রাপ্য প্রশংসাটা পায়নি সৈকত। এটাই দুঃখের।’ ঠিক সে সময়ই ডাগ আউটে এসে বসা সাকিবকে দেখে অবশ্য আবাহনীর ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কারণটা মনে পড়ে গেছে তামিমের, ‘আউটস্ট্যান্ডিং। দুর্দান্ত খেলেছে সাকিব। ও দলকে কতটা হেলপ করেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।’ প্রশংসার প্রত্যুত্তর দিয়েছেন সাকিবও, ‘অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ট্রফি জিতলি, কনগ্রেচুলেশনস!’ অল্পের জন্য আরেকটা কারণেও অভিনন্দনটা পেলেন না তামিম। মাত্র ৫ রানের জন্য যে প্রাইম দোলেশ্বরের রকিবুল হাসানের চেয়ে লিগের সেরা ব্যাটসম্যানের তালিকায় পিছিয়ে রইলেন তিনি! তবে তামিমের আনন্দ, ‘আজকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আউট হয়েছেন ৪৫তম ওভারে। অতক্ষণ ক্রিজে থাকলে তামিমের বেলায় যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। এ আসরে তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা থেমেছে ১৪২ রানে, আর আবাহনীর স্কোর তিন শ পেরিয়ে হয়েছে ৩১৬ রান। এর মধ্যে মোসাদ্দেকের অবদান ৭৮ রান, যা তাঁর পঞ্চম ফিফটি। শিরোপার সম্ভাবনা আগেই বিলীন হয়ে যাওয়াতেই কিনা, দিনভর ঈদ-পরবর্তী সরকারি কর্মচারীদের মতো অফিস করে গেছেন প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটাররা। একমাত্র ব্যতিক্রম ব্যাটিংয়ের শুরুটা। মেহেদী মারুফের ৬৯ রানের ইনিংসটি ছাড়া কিছুই নেই প্রাইম ব্যাংকের তহবিলে। অবশ্য আবাহনীর বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইন সজীবের ৫৮ রানে ৭ উইকেট প্রাপ্তিও ব্যাংকের বেহাল দশার আরেকটি কারণ। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটা কোনো বাংলাদেশির দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। সেরা স্পেল আব্দুর রাজ্জাকের (৭/১৭)। শিরোপা সম্ভাবনা টিকে ছিল গতকালের আরেকটি ম্যাচেও। বিকেএসপিতে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ মাত্র ১৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়ে প্রাইম দোলেশ্বরকে আশাও দিয়েছিল। তবে ‘পণ্ড’ ম্যাচের পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় কাল ৭ উইকেটে জিতেও রানার-আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে দোলেশ্বরকে। ফতুল্লায় মোহামেডান-ভিক্টোরিয়া ম্যাচে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কোনো সম্ভাবনাই নেই। নিষ্প্রাণ ম্যাচে ভিক্টোরিয়ার ২০৫ রান তাড়া করতে গিয়ে মোহামেডানের ১৮৮ রানে হুমড়ি খেয়ে পড়াতেও ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য নেই। সংক্ষিপ্ত স্কোর আবাহনী-প্রাইম ব্যাংক : আবাহনী : ৫০ ওভারে ৩১৬/৭ (তামিম ১৪২, মোসাদ্দেক ৭৮; উন্মুক্ত চাঁদ ৩/৫৯)। প্রাইম ব্যাংক : ৩৭.২ ওভারে ২০১/১০ (মেহেদী ৬৯ ; সাকলায়েন ৭/৫৮)। ফল : আবাহনী ১১৫ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : তামিম ইকবাল। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ-প্রাইম দোলেশ্বর : রূপগঞ্জ : ৪১.৩ ওভারে ১৪৩/১০ (আফিস ৫৯*; রাহাত ৪/৩৬)। দোলেশ্বর : ২৫.৫ ওভারে ১৪৪/৩ (রকিবুল ৬৬*)। ফল : প্রাইম দোলেশ্বর ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : আল-আমিন হোসেন। ভিক্টোরিয়া-মোহামেডান : ভিক্টোরিয়া : ৪৮.৩ ওভারে ২০৫/১০ (মমিনুল ৫৮, আল আমিন জুনিয়র ৫৫; এনামুল জুনিয়র ৩/৪৫)। মোহামেডান : ৪২ ওভারে ১৮৮/১০ (নাজিম উদ্দিন ৫০, মুশফিক ৪৬; মমিনুল ৩/২৯)। ফল : ভিক্টোরিয়া ১৭ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : মমিনুল হক।