ক্রীড়া প্রতিবেদক : এই মৌসুমে আবাহনীর ‘চেনা সৈনিক’ হয়ে ওঠা রেজোয়ান পারভেজ কিংবা রফিকুল ইসলামের কেউ ছিলেন না। ছিলেন না গত বেশ কয়েক বছর ধরে একই কারণে সমালোচিত দুই আম্পায়ার মিজানুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমও। গতকাল সাভারের বিকেএসপিতে চলতি মৌসুমের প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লিগের প্রথম দিনে আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বর ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন গাজী সোহেল ও তানভীর আহমেদ, যাঁরা বিতর্কিত অন্তত নন। তবু তাঁদের একজনের দেওয়া একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরেই ছড়িয়ে পড়া দাবানল থেকে এ ম্যাচটি স্থগিত হয়ে গেছে। আর সেই দাবানল ছড়িয়ে দেওয়ার ভরকেন্দ্রেই অবস্থান করছিলেন আবাহনী অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বৃষ্টির কারণে ৪৫ ওভারে সীমিত হওয়া ম্যাচে ঘটনার সূত্রপাত আবাহনীর ১৯১ রান তাড়া করতে নামা প্রাইম দোলেশ্বরের ইনিংসের ১৬তম ওভারে। বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইনের সজীবের করা চতুর্থ বলটিতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান রকিবুল হাসানের বিপক্ষে স্টাম্পিংয়ের জোরালো আবেদন করেন আবাহনীর খেলোয়াড়রা। কিন্তু আম্পায়ার গাজী সোহেল তাতে সাড়া না দেওয়াতেই ফুঁসে ওঠেন আবাহনীর খেলোয়াড়রা। উত্তেজিত আবাহনী অধিনায়ক এ সময় আম্পায়ারদের সঙ্গে ব্যাপক তর্কও জুড়ে দেন। এতে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হলেও তামিমের নেতৃত্বে আবাহনীর খেলোয়াড়দের গালিগালাজের ফোয়ারা চলতেই থাকে। অবস্থা আরো বিরূপ হয়ে ওঠে যখন গালিগালাজে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগ দেন মাঠের বাইরে আবাহনী সমর্থকগোষ্ঠীর সদস্যরাও। চলতে থাকে অশ্লীল সব গালি এবং সেই সঙ্গে হুমকি-ধমকিও। এতে অতিষ্ঠ হয়ে একপর্যায়ে রিজার্ভ আম্পায়ারকে নিয়ে মাঠে ঢোকা ম্যাচ রেফারি মন্টু দত্তের অনুমতি নিয়েই মাঠ ছেড়ে যান সোহেল ও তানভীর। ওই সময় ১৭ ওভারে দোলেশ্বরের রান ২ উইকেটে ৫৯। সেখানেই খেলা স্থগিত হয়ে যায় শেষ পর্যন্ত। এর ব্যাখ্যায় গালিগালাজ সইতে না পারা দুই আম্পায়ারের অসুস্থতাই কারণ বলে জানান তিনি। সেই সঙ্গে লিগ পরিচালনা সংস্থা সিসিডিএমের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে বলেন, ‘ব্যাপারটি সিসিডিএমকে জানানো হয়েছে। এই ম্যাচের ব্যাপারে করণীয় তারাই ঠিক করবে।’ যদিও গত রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার খবর ছিল না। ‘আমি অসুস্থ হয়ে বাসায়। কিছুই জানি না’—বলে সিসিডিএমের সদস্যসচিব রাকিব হায়দার পরামর্শ দেন সমন্বয়ক আমিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করার। কিন্তু আমিনও উপসংহারে পৌঁছানোর মতো কিছু বলতে পারেননি, ‘ম্যাচ রেফারির প্রতিবেদন এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছেনি। সেটি হাতে পেলেই না সিদ্ধান্ত হবে।’ এমনিতে লিগের বাইলজ অনুযায়ী প্রতিটি ম্যাচের জন্যই পরের দিনটি ‘রিজার্ভ ডে’ হিসেবে সংরক্ষিত আছে। যদিও এই ম্যাচটিকে সেই হিসাবে ফেলার কোনো কারণই দেখেন না আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ, ‘রিজার্ভ ডে-তে কেন হবে খেলা? বৃষ্টি হয়েছে? হয়নি তো। তাহলে?’ আম্পায়ারদের কারণেই ম্যাচটির এই হাল হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি, ‘নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ওনারা আম্পায়ারিং করতে এসেছেন কেন? পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে ওনাদের অদক্ষতার কারণেই এই অবস্থা হলো।’ অবশ্য কাল ম্যাচ আবার শুরুর একটি উদ্যোগ ছিল আম্পায়ারদের তরফ থেকে। কিন্তু ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথড অনুযায়ী তাদের জন্য নির্ধারিত ৩৪ ওভারে ১৬০ রানের লক্ষ্যমাত্রা শুনে দোলেশ্বর আর খেলতেই রাজি হয়নি। অর্থাৎ পরের ১৭ ওভারে ১০১ রান করতে হতো তাদের। এই সমীকরণ সামনে রেখে খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণ ব্যাখ্যায় দোলেশ্বরের কোচ মিজানুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় বলছিলেন, ‘কেন রাজি হব? আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি। গালিগালাজও নয়। আমাদের আস্কিং রেট যেখানে ছিল ৪.২৫, সেখানে ডি/এলে সেটি হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৬। আমরা তা মানব কেন?’ রকিবুলকে স্টাম্পিং না দেওয়ার সিদ্ধান্ত মানছিলেন না আবাহনী কোচও, ‘ডাউন দ্য উইকেটে এসে বল মিস করেছে ব্যাটসম্যান। এটা আউট না দেয় কিভাবে?’ কিন্তু তামিমদের গালিগালাজও তো প্রশংসনীয় কিছু নয়। এখানে নীরব মাহমুদ আম্পায়ারদেরই দোষারোপ করলেন এভাবে, ‘মাঠের বাইরে থেকে তো কিছু শোনা যায় না। আর যদি দিয়েই থাকে, আম্পায়াররা তো খেলা চালিয়ে নেবেন আগে। এরপর ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের শুনানিতে ডাকবেন। আর দোলেশ্বরের বোলিংয়ের সময় নাসিরও (হোসেন) কম গালাগাল করেনি।’ তামিমেরটা না শুনলেও এটি ঠিকই শুনেছেন মাহমুদ!