
স্কোরলাইনের দিকে তাকালে খুশি হওয়া উচিত যে কারোরই। হারের ব্যবধান এক ঝটকায় ৫-০ থেকে কমে ১-০। নতজানু অবস্থা থেকে কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস তো অন্তত দেখা গিয়েছে। একটু প্রশংসা তাই পেতেই পারেন বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা।
দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় পুরোটা সময় খেলা হলো তাজিকিস্তানের সীমানায়। বল পজেশন যথেষ্ট ভালো। দুই-তিনটি ভালো শটও হলো। জামাল ভুঁইয়া পা লাগালেই গোল হতে পারত। জীবন খুব কাছ থেকে গোল করতে পারেননি। একবার তো অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম দূরপাল্লার শটে গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন। অনেক দিন পর তাঁর পায়ে ঝলক দেখে কার না ভালো লাগার কথা!
দলীয় নৈপুণ্যেও একটু ঘুরে দাঁড়ানোর ছোঁয়া থাকল। নিজেদের সামর্থ্যের ষোলো আনা প্রয়োগ ঘটাতে একটু আক্রমণাত্মক দলই সাজালেন কোচ ডি ক্রুইফ। তাজিকদের সঙ্গে আগের ম্যাচের একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন—সোহেল, আরিফ, নাসিরুল, ফয়সাল মাহমুদ ও শাহেদের জায়গা নিয়ে আশরাফ রানা, ইমন, নাসির চৌধুরী, সোহেল রানা ও মামুন মিয়া খুব একটা খারাপ করেননি।
ক্রুইফ সাধারণত ছকের বাইরে যান না, কিছু পছন্দের খেলোয়াড়ের বাইরে অন্যদের পরখ করেন কমই। কাল ব্যতিক্রম দেখা গেল। এক ঝটকায় পাঁচ পরিবর্তনে দল একটু হলেও উজ্জীবিত চেহারায় দেখা দিয়েছে। আক্রমণে জুয়েল রানা, জীবন, সোহেল রানা কিছু করার তাড়না দেখালেন। এটাই আসলে বড় প্রাপ্তি।
কিন্তু এটাও তো মনে রাখতে হচ্ছে যে টানা হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে আগে দুটি ড্র আছে তাজিকিস্তানের সঙ্গে, সর্বশেষটি গত জুনে ১-১। সেই তাজিকদের কাছে এবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আরেকটি হার বাংলাদেশকে ঠেলে দিল অগ্নিপরীক্ষায়। ২০১৯ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ঢোকার প্রথম দুটি প্লে-অফই হেরে একটা লাইফ লাইন শেষ। ৬ সেপ্টেম্বর ও ১১ অক্টোবর ভুটানের সঙ্গে দ্বিতীয় ও শেষ লাইফ লাইনটি (পড়ুন প্লে-অফ) যদি কাজে লাগানো যায়!
ভুটান ম্যাচের আগে যথারীতি বাংলাদেশ দলে উচ্চারিত হবে দুটি শব্দ, ‘সেট পিস!’ আগের ম্যাচে তাজিকদের মাঠে পাঁচ গোলের দুটি ফ্রি কিকে, একটি কর্নারে। ফিরতি ম্যাচে ডেড বলে গোল না খাওয়া নিয়ে কত কথাই না উচ্চারিত হয়েছে। কতই না লেখা হয়েছে এসব নিয়ে! কিন্তু কী আশ্চর্য, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়!
প্রথম দায়টা শুধু লম্বা থ্রোর কল্যাণে বিতর্কিতভাবে দলের সুযোগ পাওয়া ডিফেন্ডার রায়হানের। অহেতুক বক্সের সামান্য বাইরে ফাউল করে ফ্রি কিক উপহার দিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি। তারপর দুর্ভাগ্যের ফেরে নাজারভ আগতামের ফ্রি কিকটা তপু বর্মনের মাথায় লেগে দিক বদলে জালে!
প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশ দল যথেষ্ট ফ্রি কিক ঠেকানোর অনুশীলন করে কি না। নিজেরা ফ্রি কিক থেকে গোল করার অনুশীলন করে কি না, সেটি নিয়েও আছে সংশয়। ফ্রি কিক অনুশীলনের জন্য বাংলাদেশ দলের সাবেক ব্রাজিলিয়ান কোচ এডসন সিলভা ডিডো কাঠের ‘মানবদেয়াল’ তৈরি করেছিলেন। বাফুফে ভবন চত্বরেই সেটি অযত্নে পড়ে আছে অনেক দিন। যা বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হওয়ার পথে।
তবে ৮ মিনিটে ফ্রি কিকে গোল খেয়ে বাকি ৮২ মিনিট গোল না খাওয়া বাংলাদেশের জন্য কৃতিত্বেরই। সাম্প্রতিক সময়ে লাল-সবুজের রক্ষণ হাঁ হয়ে গিয়ে গোল হজম করেছে দেদার, তুলনায় কালকের রক্ষণ ছিল আঁটসাঁট। অবশ্য এও ঠিক, ঘরের মাঠে ৫-০ জেতার পর ফিরতি লেগে শুরুতেই এগিয়ে গিয়ে তাজিকরা বৃষ্টিভেজা মাঠে একটু হালকা মেজাজেই খেলেছে। সেই সুযোগে তাজিকদের কিছু সময় চেপে ধরেও গোল আদায় করতে না পারা বাংলাদেশ দলের জন্য বরং ব্যর্থতাই।
বাংলাদেশ দল: আশরাফুল রানা, রায়হান, নাসির উদ্দিন, তপু, মামুন মিয়া, জামাল, মামুনুল (তূর্য), ইমন (জনি), সোহেল রানা, জুয়েল রানা, জীবন।