
উপলক্ষটা ছিল কাজী সালাউদ্দিন ও লোডউইক ডি ক্রুইফের সভা। খণ্ডকালীন চুক্তিতে ক্রুইফ ঢাকায় এসে জাতীয় দল নিয়ে কাজ শুরু করলেও বাফুফে সভাপতি ছিলেন মেক্সিকো ফিফা কংগ্রেসে। তাই দুজনের সাক্ষাতে চার দিন দেরি হলেও কাল সভাপতির সামনে দলের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছেন কোচ। আলোচনা শেষে কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আমার নির্দেশনা একটাই— জিততে হবে। জানি এটা কঠিন কাজ তবে খেলার আগে তো আমি হারতে পারি না।’
এশিয়ান কাপের প্লে-অফ বাছাইয়ে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ উতরে নেওয়ার জন্য ক্রুইফকে ডেকে এনেছেন সালাউদ্দিন। সভাপতির চোখে এই ডাচ কোচই বাংলাদেশ ফুটবলের জীয়নকাঠি। ৪৭ বছর বয়সী কোচও দুটি ম্যাচে লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন। ২ জুন দুশানবের অ্যাওয়ে ম্যাচে ড্র করে ৭ তারিখ ঢাকায় হোম ম্যাচ জেতার ছক কষেছেন কোচ। তাঁর চাহিদা অনুযায়ী ২ জুন দুশানবেতে অ্যাওয়ে ম্যাচের আগে আরব আমিরাতে সঙ্গে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলানোর চেষ্টা করছে বাফুফে। দুই ম্যাচে লক্ষ্য পূরণ না হলে ক্রুইফের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ফুটবলে বাঁধা থাকবে কি না, তা পরিষ্কার করেননি সালাউদ্দিন।
কোচের কথা শেষে বাফুফে সভাপতি তৃতীয় মেয়াদে করণীয়তে ঢুকেছেন। আগের দুবার অনেক সহজে বাফুফের নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও এবার ভীষণ কঠিন বাধা পেরোতে হয়েছে সভাপতির চেয়ার টিকিয়ে রাখতে। তাই সালাউদ্দিনের কাছে এটা নতুন চ্যালেঞ্জ, ‘নির্বাচনের পরে আমি কিন্তু আজই প্রথম সিরিয়াসলি অফিস করছি। মাঝে দু-এক দিন বাফুফেতে এলেও সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে আলোচনাতেই কেটে গেছে। কোনো কাজ করতে পারিনি। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাফুফের নতুন কর্মকাণ্ড দেখতে পাবেন।’ এরপর তিনি ফুটবলকে বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘গত চার বছর আর সামনের চার বছর এক হবে না। গত চার বছরে একটা জায়গায় এসেছে, কিন্তু সামনের দুই বছরে কিছু করতে হলে আমাদের আরো পেশাদার হতে হবে।’ ফুটবল গত আট বছর তাঁর হাতে থাকলেও কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাতে পারেনি। ঢাকার ফুটবল নিয়মিতকরণটাই সালাউদ্দিনের সাফল্য বলা যায়। যেখান থেকে ফুটবলার তৈরি হয় সেই জেলা পর্যায়ে ফুটবলের হতশ্রী চেহারা ফেরেনি। বদলায়নি জাতীয় দলের চেহারাও, একসময়ের সাফ শিরোপাজয়ীরা এখন সাফ ফুটবলের গ্রুপের গণ্ডি পেরোতে পারে না। এই ব্যর্থতাই বড় হয়ে উঠেছিল বাফুফে নির্বাচনে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল জেলা ফুটবলের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা। মজার ব্যাপার হলো, আট বছরে জেলা ফুটবলের সংস্কার না হলেও সেই জেলার ভোটেই তিনি নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন। এবার যদি জেলার প্রতি তাঁর সদয় দৃষ্টি হয়!
আরো চার বছরের দায়িত্ব পেয়ে বাফুফে সভাপতি প্রথমে ফিন্যান্স কমিটি ও অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি গঠন করেছেন। নির্বাচনে বাফুফের আর্থিক অস্বচ্ছতাও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল, বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরে বার্ষিক সাধারণ সভা না করায় প্রচণ্ড সমালোচিত হয়েছিলেন সালাউদ্দিন। তাই বোধ হয় নির্বাচন জিতেই অর্থ সংক্রান্ত উপ-কমিটিগুলোই আগে করা হয়েছে। বাকি উপ-কমিটিগুলো নতুন করে গড়ার কথা বলেছেন সভাপতি, ‘আজ (কাল) যেটা করেছি, সেটা হলো আগের সাব কমিটিগুলো বাতিল করেছি। পেশাদার লিগ কমিটি ও জাতীয় দল কমিটি বাদে বাকি সব উপ-কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে কমিটিগুলো নতুন করে গঠন করা হবে।’ জাতীয় দল কমিটির অধীনে এখন তাজিকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচের প্রস্তুতি চলছে আর লিগ কমিটি কাজ করছে ফেডারেশন কাপ নিয়ে। তবে ফেডারেশন কাপে তারিখ ঘোষণা করে আবার পিছিয়ে যাওয়াটা সভাপতির পছন্দ হয়নি।
খেলা পেছানোটা যেমন আগের ধারা তেমনি জাতীয় দলের কারণে ফুটবল মৌসুমে ছেদ পড়া নতুন ঘটনা নয়। তেমনি তিরস্কৃত ক্রুইফকে ডেকে এনে আবার পুরস্কৃত করাটাও কাজী সালাউদ্দিনের নতুন শুরুর কথা বলে না। মেলে না ফুটবলের বদলে যাওয়ার ইঙ্গিতও।