মাংসে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যা আমাদের শরীরের জন্য দরকারী- কিন্তু অত্যধিক মাংস ভোজন স্বাস্থ্যের ওপর নানাধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি সৃষ্টি করতে পারে প্রাণঘাতী ক্যানসারও।
তাই মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ও অত্যধিক মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এখানে অত্যধিক মাংস খাওয়ার ১০টি প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হলো।
চুল ও ত্বক খারাপ দেখাতে পারে
ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে- কোলাজেন হচ্ছে একটি প্রোটিন যা ত্বক, চুল, নখ, হাড় ও অন্যান্য অংশের স্ট্রাকচার গঠন করে। প্রাণীজ খাবারে ভিটামিন সি পাওয়া যায় না বললেই চলে- তাই যদি আপনি শাক-সবজি খাবারের পরিবর্তে মাংস খান, তাহলে ভিটামিন সি’র ঘাটতিতে থাকবেন। আপনার ত্বক রুক্ষ, অমসৃণ ও বাম্পি হতে পারে। আপনার শরীরে অস্বাভাবিক লোম গজাতে পারে।
প্রায় সময় অসুখ হতে পারে
ফল হচ্ছে ভিটামিন সি’র অন্যতম সর্বোত্তম উৎস। আপনি শুধু ত্বকেই ভিটামিন সি’র ঘাটতির প্রভাব লক্ষ্য করবেন তা নয়, ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর হওয়া, বদ হজম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা সহ বিভিন্ন ছোট খাটো অসুখ বিসুখ লেগে থাকবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
কোষ্ঠকাঠিন্য ও যন্ত্রণাদায়ক মলত্যাগ হচ্ছে আঁশের ঘাটতির প্রথম লক্ষণ। মাংসে আঁশ থাকে না, যা আপনি সাধারণত ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্য থেকে পেয়ে থাকেন। আঁশ পাওয়ার অন্যতম সর্বোত্তম উৎস হচ্ছে ফল ও শাকসবজি, কারণ আপনি এসব খাবারে অন্যান্য বিস্ময়কর পুষ্টিও পাবেন।
হার্ট ঝুঁকিতে থাকতে পারে
আঁশের অন্য একটি উপকারিতা হচ্ছে, এটি আপনার শরীরকে কোলেস্টেরল শোষণ থেকে দূরে রাখতে পারে, যা আপনার হার্টকে রক্ষা করতে পারে। যদি আপনি প্রচুর লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস খেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার হার্টের ওপর খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ধরনের মাংসে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঘুম ঘুম ভাব অনুভূত হয়
শক্তি যোগানোর জন্য প্রোটিন পরিচিত। তাই আপনি বিস্মিত হতে পারেন যে অত্যধিক মাংস খাওয়ার পর কেন ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব অনুভূত হয়। এর কারণ হচ্ছে, আপনার শরীরে থাকা প্রোটিন হজম হতে সময় লাগে- তাই আপনি তাৎক্ষণিক শক্তি পান না। আপনার শরীরে কার্বোহাইড্রেট ভেঙে সর্বাধিক দ্রুত সহজলভ্য শক্তির উৎস গ্লুকোজে পরিণত হয়। যেহেতু আপনার মস্তিষ্ক শক্তির জন্য কেবলমাত্র গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে, তাই প্রোটিন হজম হতে সময় নেয় বলে শক্তির সরবরাহ ধীর হয়। আপনার মস্তিষ্কে এই জ্বালানি পৌঁছতে সামান্য দেরি হবে, ফলে আপনার মনোযোগ একটু কমে যাবে, বলেন প্যাসেরেলো। এটি আপনার মাংসপেশির জন্যও সত্য- এটিও গ্লুকোজ দ্বারা চালিত হয়। ফলাফল: ক্লান্তি ও কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক।
শরীরে প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে
মাংসের স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করে। এছাড়া মাংসে প্রদাহ-বিরোধী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের ঘাটতি রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পেতে বিভিন্ন বর্ণের ফল ও শাকসবজি খান, কারণ বিভিন্ন গ্রুপের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন উপকার করে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
অত্যধিক প্রোটিন কিডনির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, মাংস পিউরিন নামক কম্পাউন্ডে পূর্ণ থাকে যা ভেঙে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়- অত্যধিক ইউরিক অ্যাসিড কিডনি পাথরের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
ওজন বেড়ে যেতে পারে
শরীরকে কাঙ্ক্ষিত শেপে রাখতে চাইলে প্রোটিনের প্রয়োজন আছে। এটি সত্য যে শরীর মাংসপেশি পুনর্গঠনের জন্য প্রোটিনের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু অত্যধিক মাংস খেলে অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। যদি আপনি শরীরের প্রয়োজনের বেশি প্রোটিন খান, এটি প্রোটিন হিসেবে নয়, চর্বি হিসেবে জমা হয়।
ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়
গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১৮ আউন্সেরও বেশি লাল মাংস ভোজন কোলরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে; নিয়মিত যেকোনো পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস ভোজন পাকস্থলি ও কোলরেক্টাল ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
ডিহাইড্রেটেড হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
মাংসের প্রোটিন প্রক্রিয়াকরণ থেকে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়। আর তাই অত্যধিক মাংস খেলে অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করতে পারেন। এসব বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ দূর করতে কিডনির আরো বেশি পানি প্রয়োজন হয়। মূত্র উৎপাদন করতে আমাদেরকে বেশি করে পানি পান করতে হয়। যদি আপনি সচেতন না হন, এটি আপনাকে ডিহাইড্রেটেড করতে পারে- তাই হাইড্রেটেড থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করুন।