পরিবারই একটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার সবচাইতে নির্ভরযোগ্য স্থান। শিশুর আত্মবিশ্বাস, তার ন্যায়-অন্যায় জ্ঞান এমনকি আত্মসম্মান বোধের মতো মানসিক সকল ব্যাপার পরিবারের লোকজনের মাধ্যমেই গড়ে উঠে। পরিবার তাকে যেভাবে গড়ে তুলবে সে ছোটবেলা থেকেই সেভাবে গড়ে উঠবে এটিই স্বাভাবিক। তাই শিশুদের মানসিক ব্যাপারগুলোর দিকে অভিভাবকের দিতে হবে কড়া নজর। কিন্তু অভিভাবকের না জানার কারণেই সন্তানের মানসিকতা হয়ে যায় পুরোপুরি উল্টো। হয়তো অভিভাবকেরা বুঝতেই পারেন না তাদের করা কিছু কাজেই সন্তানের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।  এটি অনেক সহজ কাজ’- কথাটি বলা যখন দেখবেন আপনার সন্তান একটি কাজ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলছে যা আপনার চোখে অনেক সহজ এবং আপনার মতে তার জন্যও কাজটি সহজ তখন অনেক অভিভাবকই বলে ফেলেন, ‘কাজটি তো অনেক সহজ, তুমি পারছ না কেন, চেষ্টা করো পারবে’। অনেকে বলতে পারেন এই কথাটি তো উৎসাহিত করার জন্যই বলা। কিন্তু সমস্যা হলো এই কথাটি একই সাথে নিরুৎসাহিত করার ক্ষমতা রাখে। আপনার কথাটি শিশুটির মনে নিজের প্রতি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি করে। সে ভাবে, ‘সহজ হলে আমি কেনো পারছি না, আমার ভেতরে সমস্যা আছে, আমার মধ্যেই বুদ্ধি কম’। এতে করে নষ্ট হতে থাকে তার আত্মবিশ্বাস। তাই এই ধরণের কথা না বলে তাকে বলুন, ‘কাজটি কঠিন, তুমি যে এতোটুকু পারছ তাই প্রশংসনীয়, আরও চেষ্টা করলে আরও ভালো পারবে’। এতে করে কাজটি করার একটি উৎসাহ তার মধ্যে জন্মাবে। সন্তানের জন্য অতিরিক্ত কিছু করা নিজের সন্তানের সব কিছু করে দিতে ভালোবাসেন অনেক অভিভাবক। মনে করেন তার সন্তানের যেনো কোনো কিছুতে কষ্ট না হয়। এবং অনেকেই ভাবেন আমার সন্তানকে আমি ভালোবাসি, তার সব কিছুর দায়িত্ব আমার। এই চিন্তাটি কিন্তু খারাপ কিছু নয়। তবে আপনার এই অতিরিক্ত করাটি সন্তানের জন্য খারাপ। আপনার সব কাজ করে দেয়া, তাকে কিছু না করতে দেয়া তার মনে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়। আর তা হলো, ‘আমি কিছু পারি না, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না’। এতে করেই নষ্ট হতে থাকে তার আত্মবিশ্বাস। তারচাইতে নিজের সন্তানের নিজস্ব জিনিসগুলো তাকেই করতে দিন। এবং প্রয়োজনে সংসারের কিছু ছোটোখাটো কাজও তাকে করতে দিন। এতে করে আপনার শিশুটির নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে।  ছোটোখাটো ভুলের জন্য তাদের অনেক বেশি দোষারোপ করা ভুল মানুষই করে। আর বাচ্চারা তো নতুন করেই সব শিখছে। তাদের চুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি তার সব ছোটোখাটো ভুলের জন্যই তাকে বকা দিতে থাকেন, শাস্তি দিয়ে থাকেন তাহলে তার কোনো কিছু করার স্পৃহা কমে যাবে, এবং নিজের প্রতি বিশ্বাসটিও কমে যাবে। নষ্ট হবে তার আত্মবিশ্বাস। সুতরাং ছোটোখাটো ভুলে তার সাথে খারাপ ব্যবহার না করে তাকে তার ভুল বুঝিয়ে দিন। তাকে দেখিয়ে দিন কোথায় ভুল হচ্ছে এবং তাকে আশ্বাস দিন কাজটি কঠিন হলেও সে পারবে। নিজের সন্তানের আত্মবিশ্বাস উন্নত করার চাবিকাঠি আপনার হাতেই। সব বাবা-মাকেই সন্তান লালন পালন করতে শাসন করতে হয়। যে শাসন কিনা সন্তানের জন্য আর্শীবাদস্বরূপ। কিন্তু কখনো বাবা-মা মনের অজান্তেই সন্তানকে শাসন করার সময় এমন কিছু বলে ফেলেন, যাতে কোমলমতি শিশুদের মনে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এজন্য বাবা-মাকে অবশ্যই সন্তানকে শাসন করার সময় সতর্ক হতে হবে। তাই কিছু কথা আছে যা সব সময়ই সন্তানকে বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।   তুমি না জন্মালে ভাল হতো রাগের চূড়ান্ত পযার্য়ে প্রায় অধিকাংশ বাবা-মা তার সন্তানকে বলে বসেন এ কথাটি। যা কিনা শিশুদের মনে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। এবং সে তার অস্তিত্বকে অপ্রয়োজনীয় ভাবতে শুরু করে ছেলেবেলা থেকেই। এমনকি বড় হওয়ার পরও বহুদিন পর্যন্ত এই বাজে অভিজ্ঞতা তাকে তাড়িত করে।   তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না প্রতিটি মানুষের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আপনার সন্তানেও এর ব্যতিক্রম নয়। সব কাজ সে করতে পারবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যদি কোনো কাজে ব্যর্থ হয়, তার মানে এই নয় যে তার দ্বারা কোন কাজ হবে না। তাকে সান্ত্বনা দিন। তার সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধান করুন। তোমার ভাই বা আপুর মত হতে পারো না আপনার সন্তানকে তার অন্যান্য ভাইবোনের সাথে তুলনা করবেন না। আপনার এ মন্তব্য তার ব্যক্তিত্বে খুব বাজে ভাবে প্রভাব ফেলে। নিজের ভেতর হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়।   তুমি খুব মোটা/শুকনো কোন শিশুকে তার স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশি কথা বলা উচিত নয়। এটি তার মধ্যে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং যে কোনো ধরনের কাজের জন্য সে নিজেকে অক্ষম ভাবতে শুরু করে। তাই শিশুর সাথে শরীরের গঠন নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।