শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে কত মানুষের সঙ্গেই তো পরিচয় ঘটে। পরে অনেকেই হয়ে ওঠেন খুব কাছের। অনেকে আবার দূরেও চলে যায়। যার সঙ্গে মন খুলে গল্প করা বা একান্ত বিষয়ও ভাগাভাগি করে নেন কেউ কেউ। কিন্তু প্রথম পরিচয়ে বা অল্প পরিচিত মানুষের সঙ্গে কতটা খোলামেলা কথা বলা উচিত? নিজের সম্পর্কেই বা অন্যজনকে কতটা জানাব?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহসিনা আক্তার বলেন, ‘পরিচয় হলে আন্তরিকভাবেই কথা বলা উচিত। তবে কী বলব, কতটা বলব, তা বুঝে বলতে হবে। অযাচিত ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বললে অনেক সময় অন্য পক্ষ বিরক্ত হতে পারে।’
এমন অনেক মানুষ আছে, যারা স্বভাবতই বন্ধুসুলভ, আলাপী। মুহূর্তেই একজন অপরিচিত মানুষকে ভীষণ কাছের মানুষ ভেবে নেন। অকপটে বলতে থাকেন ব্যক্তিগত নানা বিষয়। নিজেকে জাহির করার জন্যও একপেশে কথা বলতে থাকা লোকও দেখা যায়। এ ধরনের মানুষকে অনেকে আবার তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘বাচাল’!
‘এমন মানুষের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। একে তো বিরক্তির কারণ হচ্ছে কি না, তা বিবেচনা করা। সেই সঙ্গে একেবারে অপরিচিত মানুষ হলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে,’ বলেন তাহসিনা আক্তার। শুধু খেয়াল রাখা নয়, তাঁর মতে, সম্ভব হলে কথা শুরু করার সময় সে মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা ভালো।
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জানলে সেই ব্যক্তি ক্ষতির কারণও হতে পারে। তাহলে কথা বলার সময় তা কীভাবে জানব? একটি বেসরকারি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, ‘প্রথম পরিচয়ে সেই কথাগুলোই বলা উচিত, যা অল্প পরিচিত ব্যক্তিদের জানা।’
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন? বন্ধুর বন্ধু বা ক্যাম্পাসে হঠাৎ পরিচয়—এমন মানুষের সামনে নিজেকে কতটা মেলে ধরা উচিত?

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন জাহান বলেন, ‘প্রথম পরিচয়ে কথাবার্তা আনুষ্ঠানিক হওয়া উচিত। আমরা পরিচিত মানুষের সঙ্গে যেভাবে সচরাচর কথা বলি, প্রথম পরিচয়ে তেমনটি হওয়া উচিত নয়।’ তবে মুখে তালা লাগিয়ে বসে থাকাটাও কি সামাজিক? ‘নিশ্চয় তা নয়। কথা বলব, তবে মানুষ বুঝে।’ যোগ করেন শারমিন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের মেহেদী কবির আরও সুস্পষ্টভাবেই বললেন, বিষয়টা অনেকাংশে অবস্থা, পরিবেশ ও ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে। এক পক্ষ, অন্য পক্ষকে কতটা সহজভাবে নিচ্ছে।

শুধু অন্য পক্ষের কথা শুনেই বিরক্তির কারণ তৈরি হবে এমন নয়। অনেকে প্রশ্ন শুনেও বিব্রত বোধ করতে পারেন। এ বিষয়েও নজর দিতে বললেন তাহসিনা আক্তার। ‘যেমন অনেক সময় রিকশায় যাচ্ছি। হঠাৎ চালককে জিজ্ঞেস করলাম, দিনে তোমার রোজগার কত? বা তার অতি ব্যক্তিগত কোনো বিষয়। বিষয়টি তারা ভালো ভাবে না-ও নিতে পারে,’ যোগ করেন তাহসিনা আক্তার।
তাই প্রথম পরিচয়ে একজন মানুষের সঙ্গে আলাপের প্রথম ধাপে কী বলছি, তা যেমন চিন্তা করে বলা উচিত। তেমনি কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে, কাউকে বিব্রত করছি না তো?