ভিটামিন শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এটি শরীরে কোনো শক্তি জোগান দেয় না ঠিকই; কিন্তু এটি ছাড়া শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশ হয় না। জৈবিক বিভিন্ন বিক্রিয়ায় এটি জরুরি ভূমিকা পালন করে। যদিও ভিটামিন খুব অল্প পরিমাণে দরকার হয়; কিন্তু বেশির ভাগ ভিটামিন শরীরে তৈরি হতে পারে না বলে খাবারের মাধ্যমে চাহিদা পূরণের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ অসচেতন। তা ছাড়া দারিদ্র্যের জন্য সুষম খাবারের প্রাপ্যতাও দেশের জনগণের জন্য চ্যালেঞ্জ বটে। তাই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। শিশুরাই এর শিকার হয় বেশি। শিশুদের কথা চিন্তা করে সরকার প্রতিবছর দু’বার ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে।   ভিটামিন-এ শিশুদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে শিশুর রাতকানা রোগ হয়। যদি রাতকানা রোগ পর্যন্ত থেমে থাকত তাহলে দুশ্চিন্তার কারণ ছিল না। এক সময় রাতকানা শিশু অন্ধত্বে রূপ নেয়। আমাদের দেশের শিশুমৃত্যু ও অপুষ্টির অন্যতম কারণ ডায়রিয়া ও এর জটিলতা। ভিটামিন-এ’র অভাবে ডায়রিয়া জটিল আকার ধারণ করে ও অপুষ্টিজনিত শিশু মৃত্যুহার বাড়ায়। শিশুদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ ভিটামিনের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কমে গিয়ে প্রাণঘাতী সংক্রমণে আক্রান্ত করে শিশুমৃত্যু ঘটায়। এ ভিটামিন শুধু শিশুদের জন্য জরুরি নয়, এটি বড়দের জন্যও প্রয়োজন। এর অভাবে ত্বক খসখসে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুস ও ত্বকের ক্যান্সার কমায় ভিটামিন-এ। বড়দের ছানি পড়া রোধ করে এ ভিটামিন। এ ছাড়া এটি রক্তনালীতে চর্বি জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে হৃৎপিণ্ডের রোগবালাই কমায়। বন্ধাত্ব প্রতিরোধেও কাজ করে। ভিটামিন-এ সবচেয়ে বেশি থাকে যকৃত বা কলিজায়। এ ছাড়াও সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ, মাংস, সব ধরনের সবুজ শাক সবজি যেমন_ লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাক, সজিনা পাতা, হেলেনচা শাক, পুঁই শাক, পালং শাক, পাট শাক, গাজর, শালগম, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু। হলুদ ফলমূল_ পাকা আম, কাঁঠাল, পাকা পেঁপে ইত্যাদিতে ভিটামিন-এ বেশি পরিমাণে থাকে। তাই শিশুর ভিটামিন-এ’র অভাব দূর করতে এগুলো বেশি পরিমাণে খাওয়ান।   ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের এ ক্যাপসুল সেবনের প্রয়োজন নেই। তাদের এ ভিটামিনের চাহিদা মায়ের মাধ্যমে পূরণ হয়। মায়ের বুকের দুধে বিশেষ করে শালদুধে ভিটামিন-এ বেশি পরিমাণে থাকে। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় এখনও শালদুধকে বিষাক্ত মনে করে ফেলে দেওয়া হয়। এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব না হলে এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খেতে দিন। জন্মের পরপর শিশুর মুখে পানি, শরবত, মধু বা অন্য কিছু দেবেন না। এতে শিশুর ক্ষতি হয়। শিশুর ভিটামিন-এ’র চাহিদা পূরণে প্রসবেব পরপরই মাকে ২ লাখ ইউনিটের একটি লাল ক্যাপসুল সেবন করতে দিন। গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিন। পরিবারে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল খান।