আমাদের অনেকেরই অনেক ধরনের অভ্যাস আছে। বেশ কিছু অভ্যাস আছে, যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আবার কিছু অভ্যাস আছে, যেগুলো আমাদের অজান্তেই শরীরের ক্ষতি করে চলেছে। অথচ সেদিকে আমাদের কোনো খেয়ালই নেই। ধীরে ধীরে এসব অভ্যাস শরীরের বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমন কিছু অভ্যাস আছে, যেগুলোর আমরা কখনো গুরুত্বই দিই না। বরং আমাদের কাছে আরামদায়ক মনে হয়। এসব অভ্যাসও আমাদের শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। আজ আমরা এসব অভ্যাস দেখে নেব এবং চেষ্টা করব নিজেদের রক্ষা করতে।  

তাড়াতাড়ি খাদ্য গ্রহণ

দ্রুত খাওয়া শেষ করতে চাওয়া আজকাল প্রায় সবার মধ্যেই সংক্রমিত হয়ে গেছে। এভাবে গাপুস-গুপুস কায়দায় খাবার গ্রহণ করার বদভ্যাসটি এই মুহূর্তে ত্যাগ করুন। বিশেষ করে লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যাওয়ার লগ্নে খাবার খেতে গিয়ে এই কাজটা বেশি হয়। এতে শাসনালিতে সমস্যাসহ দম আটকে তাৎণিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। ‘ধর মুরগি কর জবাই’ ধরনের তাড়াহুড়ায় খাবার না খেয়ে হয়ে ধীর-স্থিরভাবে খাবারকে উপভোগ করে খেতে হবে।  

রাতে ব্রাশ না করে ঘুমানো

অনেকেই আলসেমির ফাঁদে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে দাঁত মাজার মতো দরকারি কাজটাকে অবহেলা করেন। অবহেলাজনিত এই বদভ্যাসের দায় আপনাকে শোধ করতে হয় দাঁতে প্লাক সৃষ্টি, দাঁত ও মুখের নানাবিধ অসুখসহ পেটের পীড়া এবং গলার নানান অসুখ বাধানোর মাধ্যমে। এর সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে আপনাকে মনে রাখতে হবে রাতে দাঁত না মাজার ফলে দাঁত ও মাড়িতে আস্তানা গাড়া দন্তমল ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অভয়ারণ্য তৈরি করবে আপনার মুখে। বিষয়টি সমগ্র মানবদেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় আপনার শিশুকেও রাতে দাঁত মাজার ব্যাপারে অভ্যস্ত করে তুলুন।  

পায়ের ওপর পা তুলে বসা

অনেকেরই অভ্যাস আছে পায়ের ওপর পা তুলে বসা। এভাবে বেশিক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস থাকলে উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। যাদের এ অভ্যাস আছে, তা এখনই পরিহার করা উচিৎ। তা না পারলে কখনো একটানা ১৫ মিনিটের বেশি এভাবে বসা উচিৎ নয়। তা ছাড়া একটানা কোনোভাবেই ৪৫ মিনিটের বেশি বসে থাকা উচিৎ নয়। প্রয়োজনে আধাঘণ্টা অন্তর কিছু সময়ের জন্য হাঁটাহাঁটি করে আবার বসা উচিৎ।  

প্রস্রাব চেপে রাখা

চাপ অনুভূত হওয়ার পরেও মূত্রত্যাগে অহেতুক বিলম্ব করবেন না। প্রস্রাবের বেগ দীর্ঘণ চেপে রাখলে আপনার মূত্রথলির জন্য তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেবে। তাই চাপ অনুভূত হওয়ার পর তা থেকে মুক্ত হতে অহেতুক বিলম্ব করবেন না। চেষ্টা করুন মূত্রথলির জন্য অস্বস্তিকর অতিরিক্ত মশলাদার খাদ্য, চকোলেট, মদ, কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত পানীয় (কার্বোনেটেড বেভারেজ), ক্যাফেইযুক্ত পানীয় (চা-কফি) বর্জন করে চলতে।

 

ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙা

উল্টো দিকে পিঠ বাঁকিয়ে আড়মোড়া ভাঙার কায়দায় কসরত করে অনেকেই পিঠের ব্যথা দূর করে থাকেন। এতে ক্ষতির কিছু নেই। তবে ক্ষতি হতে পারে যদি আপনি ঘুম ওঠার পরপরই এই কসরতটি করতে যান। বিশ্রামে থাকা মাংশপেশিতে হঠাৎ করেই চাপ ও সংকোচনের ফলে ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দিতে পারে শরীরে। এ অবস্থার শিকার হতে না চাইলে ঘুম থেকে উঠেই পিঠ বাঁকানোর কসরত ত্যাগ করতে হবে আপনাকে। বিছানা ছাড়ার পর প্রাকৃতিক কাজ সারার পর দাঁত মাজা ও মুখ ধোয়ার কাজগুলো সারুন। তারপর চা-বা কফি পান করুন। এবার চাইলে আপনি পিঠ বাঁকিয়ে বা ডানে-বাঁয়ে শরীর টান (স্ট্রেচিং) করে নিন- কোনও সমস্যা নেই।  

এক কাঁধে ব্যাগ বহন

অনেকেরই অভ্যাস আছে সব সময়ই একই কাঁধে ব্যাগ নেওয়ার। এমন অভ্যাস মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। কেননা এক কাঁধে সব সময় ভার বহন করতে করতে ওই কাঁধের শিরা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে। যে কারণে একটা সময় ওই কাঁধে ব্যথা হতে পারে। এ কারণে সব সময় একই কাঁধে নয়, মাঝেমধ্যেই ব্যাগ এক কাঁধ থেকে অন্য কাঁধে নেওয়া উচিৎ। এতে কাঁধের অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যথা থেকে মুক্ত থাকা যায়।  

টাইট জিন্স পরা

টাইট জিন্স পরার অভ্যাসটা অনেকেরই। কিন্তু এটা পরিহার করা উচিৎ। কেননা টাইট জিন্স প্যান্টের কারণে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। যদি জিন্স প্যান্ট এমন টাইট হয় যে, স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজে সমস্যা হয় তাহলে মনে করতে হবে এটা মোটেও আপনার জন্য উপযোগী নয়। অনেক সময় দেখা যায় দিন শেষে যখন প্যান্ট খোলা হয় তখন স্বাভাবিকভাবে তা খোলা যায় না, বরং টানাহেঁচড়া করতে হয়। এতে অস্বস্তি বোধ করাটাই স্বাভাবিক। সে কারণে চলাফেরা, কাজকর্ম এবং সহজেই শরীর থেকে প্যান্ট ঝেড়ে ফেলা যায় এমন প্যান্ট ব্যবহার করা উচিৎ।  

বেল্ট টাইট করে পরা

ভুঁড়ি কমাতে অনেকেরই বেল্ট টাইট করে পরার অভ্যাস আছে। অথচ এটি মোটেও করা উচিৎ নয়, কেননা বেল্ট টাইট করে পরলে হজমে সমস্যা হয়। শুধু তা-ই নয়, এটা পেটের ভেতরে একটা চাপ তৈরি করে। যার ফলে ঠিকমতো হজম না হতে পারে, পেটে ঝামেলা তৈরি হতে পারে। সে কারণে বেল্ট টাইট করে পরা উচিৎ নয়, এমনভাবে পরা উচিৎ যাতে সহজেই বসা, বাঁকা হওয়া যায়।  

ক্রিমার দিয়ে কফি

অনেকেই কফির সঙ্গে মাখনসমৃদ্ধ ক্রিমার খান। এর সঙ্গে থাকে দুধের অন্যান্য উপাদান আর সুগন্ধিযুক্ত চিনির সিরাপ। এই পানীয়টি দিনে এক বা দুই কাপ হলে ঠিক আছে। কিন্তু এর বেশি হলেই এ থেকে যোগ হওয়া বাড়তি ক্যালরি আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। মুটিয়ে যাওয়াসহ নানা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় পড়তে পারেন এর ফলে। তাই সবচে ভালো হয় যদি ক্রিম কফিপ্রেমীরা দৈনিক কফি গ্রহণের মাত্রাটা দুই কাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। পানীয়ের প্রয়োজনে যতটুকু সম্ভব পানি গ্রহণ করুন।  

হাইহিল পরা

বেমানান ও বেসাইজের জুতো পরিধান করাও আপনার স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ কারণে আপনার দৈনন্দিন হাঁটচলার সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিটি বদলে যেতে পারে যা আপনার জন্য হবে কষ্টকর আর অন্যদের চোখে হতে পারে হাস্যকর। মেয়েদের হাইহিল পরার ক্ষেত্রে বলা যায়, হয়তো আপনি ব্যথা অনুভব করছেন না, তারপরও দীর্ঘণ হাইহিল পরে থাকার কুপ্রভাব আপনার পা ও শরীরের ওপর পড়বেই। তাই যতটা সম্ভব বেখাপ্পা আর কিম্ভূত সাইজের এবং উঁচু হিলের বদলে আরামদায়ক এবং ফ্যাট হিলের জুতো বা স্যান্ডেল পায়ে দিন। এতে চলাফেরায় অহেতুক শারীরিক ঝুঁকি নেওয়া থেকে নিরাপদ থাকবেন আপনি।