৫০-৯০% কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের চোখে সমস্যা হয়ে থাকে! দৃষ্টি স্বল্পতা, চোখ জ্বালা-পোড়া করা, চোখ ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা ও চোখে আলো অসহ্য লাগা ইত্যাদি হলো কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার প্রতিক্রিয়া।
চোখের পলক স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে ১২-১৪ বার পড়ে। কম্পিউটারে কাজ করার সময় ঘন ঘন চোখের পলক ফেলা একটা ভালো উপায়। আসুন জেনে নিই যে ১১টি সতর্কতা অবলম্বন করে কম্পিউটার চালালে চোখ ভালো থাকবে।
সঠিক আলোর ব্যবহার

আপনি যে রুমে কম্পিউটার ব্যবহার করবেন, সে রুমে সঠিক আলোর বিন্যাস থাকা খুবই জরুরী। বাইরের সূর্যের আলো থেকে যদি ঘরের আলো কম বেশি হয় সেক্ষেত্রে চোখের উপর প্রেশার পড়বে এবং কাজ করার সময় চোখে ব্যথার সৃষ্টি হবে। ঘরের ভেতর অধিক আলো জ্বালিয়ে রাখলে কিংবা বাইরে থেকে অধিক আলো এলে কাজের সময় কম্পিউটারের স্ক্রিনে সেটা প্রতিফলিত হয়ে চোখে লাগে এবং চোখের উপর প্রেশার সৃষ্টি করে। তাই সঠিক আলোর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
চোখের ডাক্তারের সাথে রুটিন চেক আপ করাতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি কাজে প্রবেশের আগে ডাক্তারের সাথে একবার চেকআপ করান এবং কম্পিউটার থেকে আপনার দূরত্ব, লাইটিং, গ্লাস ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন। এতে পরবর্তীতে কাজের সময় আপনার চোখের ক্ষতি হচ্ছে কিনা সেটা আপনি স্পষ্টত জানতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন।
কাজে বিরতি নিন
সাধারণত দেখা যায় যারা কম্পিউটারে কাজ করেন, তারা মাত্র ২ বার কাজ থেকে বিরতি নেয়। কিন্তু একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ৫ মিনিট করে দিনে ৪বার বিরতি নেয়া উচিৎ। এতে করে ঘাড়ের ব্যথা, চোখের সমস্যা কম হবে।
আই গ্লাস

কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য এক প্রকার আই গ্লাস বা কম্পিউটার গ্লাস কিনতে পাওয়া যায় সেটা ব্যবহার করতে পারলে চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়।
চাকচিক্য থেকে দূরে
চকচকে ফার্নিচার, উজ্জ্বল আলো এবং কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে প্রতিফলিত আলো আপনার চোখের সমস্যার আসল কারণ হতে পারে। “এন্টি গ্লেয়ার” স্ক্রিন আপনার কম্পিউটারের জন্য ইন্সটল করে নিতে পারেন এবং আপনার ঘরের দেয়ালে যে কোন গাড় রঙের জায়গায় সাদা রঙ ব্যবহার করুন এতে প্রতিফলন হবে কম এবং চোখের উপর প্রেশার পড়বে কম। আপনি যদি চশমা ব্যবহার করে থাকেন, তবে অবশ্যই এন্টি রিফ্লেক্সন গ্লাস ব্যবহার করবেন। এটি আপনার চোখের সামনের আলোকে কম প্রতিফলিত করবে।
ডিসপ্লে পরিবর্তন
আপনার সিআরটি (cathode ray tube or CRT) মনিটরের পরিবর্তে এলসিডি (liquid crystal display or LCD) মনিটর ব্যবহার করুন। যেগুলো সাধারণত ল্যাপটপে থাকে। এলসিডি মনিটর চোখের জন্য আরামদায়ক এবং এর সার্ফেসে সাধারণত রিফ্লেকশন কম হয়। তাছাড়া সিআরটি মনিটরের কার্যপ্রণালী থেকে লক্ষ্য করা যায়, এটিতে ইমেজ বারবার নতুন করে তৈরি করার হার এলসিডি এর চেয়ে অনেক বেশি। এটা চোখের জন্য ক্ষতিকর। বড় ডিসপ্লে ব্যবহার করুন, যার আকার কমপক্ষে ১৯ ইঞ্চি।
ডিসপ্লে সেটিংস
আপনার কম্পিউটারের ডিসপ্লে সেটিংসের সামঞ্জস্যতা আপনার চোখের সমস্যা থেকে আপনাকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারে। আপনার ডিসপ্লের ব্রাইটনেস আপনার কাজের জায়গার আলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। খেয়াল করুন যাতে আপনার ডিসপ্লেকে অতিরিক্ত আলোর উৎস মনে না হয় কিংবা অন্ধকার। লেখার আকার এবং বৈসাদৃশ্য- আপনি যখন লিখবেন কিংবা পড়বেন, তখন আপনার লেখার সাইজ ঠিক করে নিন। সাদা ব্যাকগ্রান্ডের উপর কালো লেখা সবচাইতে ভালো।
কালার টেম্পারেচার

এটি টেকনিক্যাল একটি বিষয় যা আলোর বর্নালীর বিবরণ দেয়। নীল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম এবং এটি অন্যান্য দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের চেয়ে চোখের উপর চাপ ফেলে বেশি। আপনার ডিসপ্লে এর কালার টেম্পারেচার কমিয়ে দিলে আপনার চোখের উপর চাপ পরবে কম।
চোখের এক্সারসাইজ
একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ নিয়ন্ত্রণকারী পেশিগুলা ক্লান্ত হয়ে যায়। এ থেকে বাঁচার জন্যে প্রতি ২০ মিনিটে একবার বাইরে তাকান। আনুমানিক ২০ ফিট দূরের কোন কিছু দেখুন,কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য। এটাকে ডাক্তাররা ২০-২০-২০ রুল বলেন। অন্যদিকে তাকানোর ফলে আপনার চোখের মাসল রিলাক্সড হয়। আরেকটি এক্সারসাইজ হচ্ছে, দূরের কোন কিছুর দিকে ফোকাস করা(১০-১৫সেকেন্ড)। আবার কাছে কোন কিছুতে ফোকাস করা (১০-১৫সেকেন্ড)। এভাবে ১০ বার করুন।
আপনার কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ পরিবর্তন করুন
আলোর ব্যবহার, কম্পিউটারের দুরত্ব, চারপাশের ইন্টেরিয়র পরিবর্তনে আপনার চোখ অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে।
বেশি বেশি পলক ফেলুন
কাজ করার সময় বেশি বেশি পলক ফেলুন। কাজের সময় চোখের পলক ফেলা না হলে চোখের ভেতরকার পানি শুকিয়ে যায় এবং চোখের “ড্রাই আই” হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদি আপনি এখনি এই সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। তবে মনে রাখবেন, বাজারে যে সমস্ত লুব্রিকেন্ট ড্রপ কিনতে পাওয়া যায় তার বেশিরভাগের কাজই কেবল চোখের রক্তিম ভাব দূর করা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা চোখের পানি বৃদ্ধিতে কোন সাহায্য করে না। তাই ড্রপ ব্যবহারের সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তাছাড়া আপনি চোখের একটি ব্যায়াম করতে পারেন, প্রতি ২০ মিনিট অন্তর অন্তর ১০ বার করে আস্তে আস্তে চোখের পলক ফেলুন যাতে মনে হয় আপনি ঘুমিয়ে যাচ্ছেন এতে করে আপনার চোখ ড্রাই হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।