আচ্ছা আমরা বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমাই কেন? ঠিক এই প্রশ্নটার উত্তর জানারই চেষ্টা করা হবে এই প্রবন্ধে। সেই সঙ্গে বালিশ ব্যবহার করা আদৌ উচিত কিনা, না করলে কী কী উপকার পাওয়া যায়, সেই সব নানা বিষয়ের উপরও আলোকপাত করার চেষ্টা করা হবে।
ঘুমে আরামের পাশাপাশি এ সময় মাথা এবং শিরদাঁড়াকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্যই মূলত বালিশের ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষত নিদ্রাকালে যাতে শিরদাঁড়ার কোন চাপ সৃষ্টি না হয়, তা সুনিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা। তবে মজার বিষয় হল, যে মানুষের এক সময় মনে হয়েছিল ঘুমনোর সময় আরাম পেতে এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখতে বালিশের কোনো বিকল্প হয় না। সেই মানবকুলেরই এখন মনে হচ্ছে বালিশ যতটা না উপকারে লাগে, তার থেকে অনেক বেশি অপকার করে।
বালিশ ছাড়া ঘুমালে একাধিক উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে শোওয়ার সময় শিরদাঁড়া ঠিক অবস্থানে থাকার কারণে কাঁধ, পিঠ এবং কোমরের একাধিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এখানেই শেষ নয়, বালিশ ছাড়া শোওয়ার ফলে আরও অনেক উপকার মেলে। যেমন…
শিরদাঁড়া চাঙ্গা থাকে

আপনার কি মাঝে মধ্যেই পিঠে ব্যথা হয়? তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব বালিশ ছাড়া শোয়ার অভ্যাস করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ বালিশ ছাড়া শুলে শিরদাঁড়া স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, ফলে চোট আঘাত বা অন্য কোনও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে। খেয়াল করে দেখবেন বালিশে মাথা দিয়ে শুলে শিরদাঁড়ার একটা অংশ একেবারেই স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঘরে বা পিঠে যন্ত্রণা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
কাঁধের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে

পরিসংখ্যান বলছে দক্ষিণ এশিয়ার মোট জনসংখ্যার সিংহভাগই কাঁধ, ঘার অথবা পিঠের কোনও রোগে ভুগছেন এবং রোগীদের বেশিরভাগেরই বয়স ২৫-৪০ এর মধ্যে। কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জানেন? এক্ষেত্রে দায়ী হল বালিশ। তাই তো চিকিৎসকেরা কম বয়স থাকতেই বালিশ ছাড়া ঘুমনোর পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ এমনটা করলে শোয়ার সময় ঘাড় এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে রক্ত সরবরাহ ঠিক মতো হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে কম বয়সেই সার্ভাইকাল স্পন্ডলাইলোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
মুখমণ্ডলের উন্নতি ঘটে

বলিশে মাথা দিয়ে ঘুমনোর সময় আমাদের মধ্যে অনেকেই উবু হয়ে, বালিশে মুখ গুঁজে শুতে ভালবাসেন। এমনভাবে দীর্ঘ সময় কেউ যদি ঘুমায়, তাহলে ত্বকে বলিরেখা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সেই সঙ্গে কম বয়সেই ত্বকের সৌন্দর্য হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
বালিশে শুলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে

বালিশ ছাড়া যতটা ভাল ঘুম হয়, বালিশ ব্যবহার করলে অতটা ভাল ঘুম হয় না। কী কারণে এমনটা হয়ে থাকে, তা যদিও এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে জানা যায়নি, তবে গবেষণা চলছে।
বালিশ ছাড়বেন কীভাবে
এখন প্রশ্ন হল বালিশ ছাড়া শোওয়ার অভ্যাস করবেন কীভাবে? আমরা সবাই প্রায় ছোট থেকে বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে এসেছি। তাই হঠাৎ করে বালিশ ব্যবহার বন্ধ করে দিলে ঘুম নাও আসতে পারে। তাই ধীরে ধীরে বালিশের অভ্যাস ছাড়তে হবে, একেবারে নয়! এক্ষেত্রে প্রথম এক সপ্তাহ বালিশের পরিবর্তে একটা মোটা টাওয়াল ভাঁজ করে মাথায় দিন। যত দিন যেতে থাকবে, তত টাওয়ালের হাইট কমাতে থাকুন। দ্বিতীয় সপ্তাহে টাওয়ালটা একেবারে পাতলা করে দিন। এই সময় খেয়াল রাখবেন, শোওয়ার সময় মাথাটা এমন পজিশনে রাখবেন, যাতে থুতনিটা নিচের দিকে থাকে, উপরের দিকে নয়। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যখন টাওয়ালের হাইট একেবারে কমিয়ে দেবেন, তখন মাঝে মাঝে ঘার এবং পিঠের কিছু ব্যায়াম করা শুরু করতে পারেন। দেখবেন উপকার পাবেন।