বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি করে ফিলিপাইনে পাচারের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসির) শাখা ব্যবস্থাপককে দেশ ত্যাগ করতে দেয়নি সে দেশের ইমিগ্রেশন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মাইআ সান্তোষ দেগুইতো নামে ওই কর্মকর্তা জাপান যাচ্ছিলেন। দেগুইতো অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন না । তার ছোট ছেলের জন্মদিন পালন শেষে আগামী মঙ্গলবার তার ফেরার কথা ছিল। ফিলিপাইনের দৈনিক ইনকোয়েরার গতকাল এ খবর দিয়েছে। খবর সমকাল’র।
এদিকে ফিলিপাইন সিনেট (সংসদের উচ্চকক্ষ) আগামী মঙ্গলবার দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম এ মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা তদন্ত করবে। আগামী মঙ্গলবার সিনেটের দুটি কমিটি এ বিষয়ে শুনানি ডেকেছে। শুনানিতে আরসিবিসির ওই শাখা ব্যবস্থাপকসহ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ডাকা হয়েছে। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার, অভিযুক্ত তিনটি ক্যাসিনোর মালিক, আরসিবিসি এবং আরও তিনটি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে এ শুনানিতে ডাকা হয়েছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিশোধ নেটওয়ার্কে ঢুকে বেশ কিছু পেমেন্ট অর্ডার দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের কাছে। ব্যাংকটি তাদের তিনটি করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ৪টি অর্ডার ফিলিপাইনের আরসিবিসির ৪টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তরিত হয় ৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের ঋণ ও পরামর্শক ফি পরিশোধের নামে। ফিলিপাইনের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কাউন্সিল (এএমএলসি) আরসিবিসির ৫ হিসাবধারীসহ ৬ ব্যক্তির সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত করছে। এসব ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ৬ মাসের জন্য ফ্রিজ করতে ইতিমধ্যে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন।
মাকাতি শহরে জুপিটার স্ট্রিটে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক দেগুইতো ওই শাখায় সন্দেহভাজন ৫ নাগরিকের হিসাব খোলেন গত বছরের মে মাসে। হিসাব খোলা এবং সেখানে বড় অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর-সংক্রান্ত কাজে তিনি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্ত হিসাবধারীদের ব্যাংক হিসাব খোলার সময় গ্রাহকের পরিচিতি ভালোভাবে জানা-সংক্রান্ত নিয়ম মানেননি তিনি। দেগুইতোর কাছে আরসিবিসির প্রধান কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে এসব বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। এর জবাবে তিনি বলেছেন, ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) নির্দেশক্রমে তিনি ওই ৮১ মিলিয়ন ডলার ৪ ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আরসিবিসি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন ঠিকমতো অনুসরণ করলে পাচার হওয়া ওই অর্থ আটকানো যেত। ঘটনা জানার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৮ ফেব্রুয়ারি এসব পেমেন্ট স্থগিত করতে আরসিবিসিকে অনুরোধ জানায়। ততক্ষণে তহবিল স্থানান্তর হয়ে গেছে। যে ৪ জনের অ্যাকাউন্টে পাচার করা টাকা ঢোকে তারা সবাই ৫০০ ডলার করে জমা রেখে আরসিবিসিতে অ্যাকাউন্ট খোলেন গত বছরের ১৫ মে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেন হয়নি। ফিলিপাইনের কোর্ট অব আপিল (সিএ) মনে করছে, এসব অ্যাকাউন্ট মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যেই খোলা হয়। তাদের হিসাবের কাগজপত্রে কোনো নির্দিষ্ট আয়ের খাত উল্লেখ করা হয়নি।