kmj এমএ আজিজের সামনের ছোট্ট মাঠটিই শুধু নয় দক্ষিণের যে আউটার স্টেডিয়াম—সেখানে তো রীতিমতো ক্রিকেটের মেলা বসে প্রতিদিন। বিপিএলের এই আসরের মাঝেও এক-দেড় শ তরুণ একসঙ্গে ক্রিকেট অনুশীলনে ব্যস্ত। কমপক্ষে ১৫টি পিচে, নেটে চলছে সিরিয়াস অনুশীলন। অ- অ অ+ এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের ঠিক বাইরেই ইনডোরের মতো যে জায়গাটা সেখানে ক্রিকেট বল হাতে গভীর আলোচনায় মগ্ন দুই কিশোর। একজনের সমস্যা সে লেগ ব্রেকের মতোই হাত ঘুরাচ্ছে কিন্তু বল পড়ে অফ ব্রেক করে যাচ্ছে। পাশের বন্ধুটি তাঁকে লেগ ব্রেকের গ্রিপটাই আরো ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছে। বোঝা গেল গুগলির রহস্য এখনো ওদের অজানা। কিন্তু আজ না হোক, কাল না হোক পরশু রহস্যটা ওরা ঠিকই বের করে ফেলবে। দুজনেই যে এই বয়সে ক্রিকেটে মন-প্রাণ সঁপে দিয়ে। একাডেমির অনুশীলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাই এই বাড়তি চর্চা। সামনেই এমএ আজিজের মূল ফটক। ঢুকলেই দুই পোস্টের সবুজ মাঠ। চট্টগ্রামে একরকম ফুটবলযজ্ঞই চলছে এখন। কিন্তু ওই দুই কিশোর শাহেদ ও ফারুকের স্বপ্নে এমএ আজিজ নয়, সাগরিকা বা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। তামিম ইকবালের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে, সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি জাদুতে গ্যালারিতে যেখানে লাল-সবুজের ঢেউ ওঠে সেই জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম মাতাতে চায় তারা। ‘জাতীয় দলে খেলা তো অনেক বড় স্বপ্ন। আমরা আগে চট্টগ্রাম লিগে খেলতে চাই। এরপর জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যদি জায়গা পাওয়া যায়।’ শাহেদ, ফারুকদের সামনে জলজ্যান্ত অনুপ্রেরণা। তামিম ইকবাল, নাফিস ইকবাল, নাজিমউদ্দিনরা যে একাডেমিতে খেলে আজ দেশ মাতাচ্ছেন সেই জেসিটিএ-তে (জুনিয়র ক্রিকেট ট্রেনিং একাডেমির) তাদেরও ক্রিকেটে হাতেখড়ি। তামিমদের কোচ তপন দত্ত নিজে একসময় ফুটবলার ছিলেন, ক্রিকেটও খেলেছেন। বিকেএসপিতে ফুটবল কোচেস কোর্স করতেই তিনি গিয়েছিলেন কিন্তু সুযোগ পাননি, সেটি ৯৩ সালের কথা। তখনো দেশে ফুটবল রমরমা। তপন পরে ক্রিকেট কোচিংয়ে সুযোগ পেয়ে সেটিই শুরু করেন, এখন উনি পুরোদস্তুর ক্রিকেটেরই মানুষ। তাঁর শিষ্য ফারুক হোসেন টিটু জেসিটিএর এখন মূল প্রশিক্ষক। ’৯৮ থেকে তিনি অবশ্য শুধু ক্রিকেটই খেলেছেন, ফুটবলে তাঁর সম্পর্ক নেই। ২০০৯-এ খেলা শেষ করেই আবার তিনি ক্রিকেট কোচিংয়ে। তপন, টিটুদের পরই এখনকার শাহেদ, ফারুকদের তৃতীয় প্রজন্ম। যারা ক্রিকেটার হওয়া নয় অনায়াসে তারকা হওয়ারও স্বপ্ন দেখে। এমএ আজিজের সামনের ছোট্ট মাঠটিই শুধু নয় দক্ষিণের যে আউটার স্টেডিয়াম—সেখানে তো রীতিমতো ক্রিকেটের মেলা বসে প্রতিদিন। বিপিএলের এই আসরের মাঝেও এক-দেড় শ তরুণ একসঙ্গে ক্রিকেট অনুশীলনে ব্যস্ত। কমপক্ষে ১৫টি পিচে, নেটে চলছে সিরিয়াস অনুশীলন। মধ্য দুপুরের রোদেও কারো ক্লান্তি নেই। স্রেফ খেলার জন্য খেলাও না তা, জেটিসিএর মতোই আরো বেশ কয়েকটি একাডেমির অনুশীলন চলে সেখানে। ব্রাইট একাডেমির মইনুদ্দিন জয় যেমন এবার খুব করে চাইছেন দ্বিতীয় বিভাগের একটা দলে ঢুকে যাবেন। সে জন্যই অনুশীলনে বাড়তি জোর। তাঁর বন্ধু মোকসেদুল হকের লক্ষ্য আরো বড়—ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলা। স্থানীয় একটি কলেজে পড়া এই দুই তরুণ ক্রিকেট একাডেমিতে খুব বেশি দিন নয় অবশ্য। স্কুলে থাকতে তারা ফুটবলও খেলেছেন। এবারের বিপিএলে আগ্রহ নিয়েই দেখেছেন চট্টগ্রাম আবাহনী ও ঢাকা আবাহনীর ম্যাচ। কিন্তু ফুটবলে কোনো কিছু করার চিন্তা তাদের মাথায়ই আসছে না, ‘চট্টগ্রামে আমরা ক্রিকেটই দেখেছি বেশি। এবারই না ফুটবল হচ্ছে। দুই বছর আগে এমন লিগ হলে কে জানে হয়তো আমরা ফুটবলারও হতে চাইতাম। অবশ্য ফুটবলের এমন একাডেমি নেই। তা ছাড়া আরো ভালো মাঠও লাগে।’ আউটার স্টেডিয়াম ঘাসহীন, এবড়োথেবরো এবং চারপাশে প্রচুর পরিমাণে নোংরা। মাঝখানে পিচ করে ক্রিকেটের অনুশীলন চললেও ফুটবল আসলেই সেখানে সম্ভব নয়। স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর মুখে চট্টগ্রামেরই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণ মোর্শেদ আলমের সঙ্গে কথা হলো, তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা মিলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মাঠে ফুটবলের অনুশীলন করেন নিয়মিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে তাঁরা খেলেন—এর পরের গন্তব্যটা তাদের জানা নেই। ফুটবল কোচ নজরুল ইসলাম লেদু বলছিলেন, ‘চট্টগ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনেক ফুটবল কোচ কাজ করছেন। কিন্তু তাদের জন্য সেই কার্যক্রমটা চালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ফুটবলারদের আনুষঙ্গিক খরচও তাদের মেটাতে হয়, অথচ নিজেরা আর্থিকভাবে কোনোদিক থেকে লাভবান হতে পারে না। অন্যদিকে ক্রিকেটের একাডেমিতে অভিভাবকদেরই লাইন পড়ে যাচ্ছে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে। সেখানে ওরা ভর্তি ফি নিচ্ছে, মাসে মাসে বেতন নিচ্ছে, কোচরাও তাই ভালো অবস্থায় আছে।’ চট্টগ্রামের কিশোর-তরুণদের ক্রিকেট দীক্ষায় এখন আফতাব আহমেদের মতো তারকা ক্রিকেটারও যোগ হয়েছেন। সেখানে ফুটবল কোচিংটা এখনো শুধু চলছে কোচদের আগ্রহেই।