ক্রীড়া প্রতিবেদক : হঠাৎ মঞ্চের পেছনের স্ক্রিন দুভাগ হয়ে দৃশ্যমান হলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি। এই ট্রফি মামুনুল ইসলাম একা আলগে তুলতে গিয়ে পারেননি। ট্রফিটিই হয়তো লড়াইয়ের আগে চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়কের বাহুবন্দি হতে চায়নি। তাকে পেতে হলে লড়তে হবে, জিততে হবে যে! মঞ্চে দাঁড়ানো বারো অধিনায়কের কাছে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হলো মূল অনুষ্ঠান। লিগের আগে ট্রফি উন্মোচনের ঘটনা এ দেশে নতুন। প্রিমিয়ার লিগের বিকেন্দ্রীকরণ, মানে ঢাকার বাইরে তিনটি ভেন্যুতে সমান গুরুত্বের সঙ্গে খেলাও নতুন ঘটনা। তার স্বত্ব বিক্রির ঘটনা এবং লিগ আয়োজনের আগে জমকালো আগমনী অনুষ্ঠানও এই প্রথম। সব নতুনের সমারোহে প্রিমিয়ার লিগ আরো আকর্ষণীয় হয়ে আমজনতার কাছে পৌঁছাতে চায়। জীয়নকাঠি হয়ে ফুটবলের নতুন দিনের সূচনা করতে চায়। স্থানীয় একটি পাঁচতারকা হোটেলে গতকাল জমকালো আগমনী অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হয়েছে লিগের নতুন লোগো। স্পন্সর জেবি গ্রুপকে সঙ্গী করে বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) নতুনভাবে হাজির হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। পেশাদার ফুটবলের নবম আসরে এই ইতিবাচক চরিত্র বদলে শুভ কামনা জানিয়েছেন লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী। কিন্তু নতুনকে আলিঙ্গনে দেশের ক্লাবগুলো যেন সব সময় দ্বিধান্বিত। অনুষ্ঠানের এক দিন আগেই খানিকটা অঙ্গহানী হয়ে গেল লিগের। পুরনো ঘোষণা, দেশের সাতটি ভেন্যুতে আয়োজনের যে পরিকল্পনা তাতে আর অনড় থাকতে পারেনি বাফুফে। একদল ক্লাব কর্মকর্তা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা নামিয়ে এনেছেন চার ভেন্যুতে। ঢাকার বাইরে ছয়টি ভেন্যুতে খেলতে তাদের অনেক খরচ হবে, এই দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে ফেডারেশন। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন অবশ্য এতে খুব বিস্মিত নন। অনুষ্ঠান শুরুর আগে তিনি বলেছেন, “আমরা বাঙালি। আমরা শুরুই করি ‘না’ দিয়ে, তারপর আস্তে আস্তে ‘হ্যাঁ’-তে আসি। ক্লাবগুলো যখন দেখবে ঢাকার বাইরে মাঠে লোক হচ্ছে, টিভি সম্প্রচারে খেলাটার বিস্তৃতি ঘটছে, নিজেদের আয়ের ক্ষেত্র বাড়ছে তখন অবশ্যই তারা ইতিবাচক হবে। ঢাকার বাইরে গিয়ে শুরুটা হোক। এই নতুন অভিজ্ঞতা ক্লাবগুলোর খারাপ হবে না বলে আমার বিশ্বাস।” এরপর অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ফুটবল উন্নয়নের সঙ্গী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্লাব ও খেলোয়াড়দের, ‘ফুটবলের অবস্থা বদলাতে পারে এ দেশের ক্লাব ও ফুটবলাররাই। আমি যদি বিদেশে গিয়ে খেলতে পারি আমার ফুটবলাররা কেন পারবে না? আমার যেমন ক্লাবগুলোকে দরকার তেমনি আমারও প্রয়োজনীয়তা আছে ক্লাবগুলোর কাছে। চলুন, আমরা সবাই মিলে ফুটবল উন্নয়নের কঠিন কাজটা সহজ করি।’ পুরো বিশ্বেই ফুটবল খেলাটা হলো আগে ক্লাবের, তারপর জাতীয় দল। বিপ্লব শুরু করে ক্লাবগুলোই, ফুটবলার তৈরি থেকে শুরু করে খেলার নতুন ধারার জন্মও হয় সেখানে। এই জায়গাতে বড্ড প্রাচীনপন্থী ঢাকার ক্লাবগুলো। তারা কোনোভাবে আধুনিক ফুটবল ব্যবস্থায় ঢুকতে চায় না। পেশাদার ফুটবল যে আয়েরও জায়গা, সেটার চর্চাও করে না। লিগের স্বত্ব কিনে নেওয়া সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টসের চেয়ারম্যান তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেছেন নতুন স্বপ্নের কথা, ‘দেশের ফুটবলকে নতুন জায়গায় নিয়ে যেতেই আমাদের প্রচেষ্টা। ক্লাবের উন্নয়নের জন্য একটা স্কিম হাতে নিচ্ছি। ১২টি ক্লাব যেন একযোগে কাজ করে যেতে পারি, যেন নিজেদের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারি, সেরকম একটা পরিকল্পনা করছি। আগামী বছর থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করব আশা করি।’ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার এই লিগ ফুটবলকে আবার আগের মতো দর্শক মনোরঞ্জনের জায়গায় নিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে নতুন স্টেডিয়াম তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়ায় খুব উৎসাহী, তাঁর নির্দেশে প্রত্যেকটি উপজেলায় নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে। ৪৯০টি স্টেডিয়াম তৈরি করতে হবে।’ মন্ত্রী খুব আনন্দচিত্তে নতুন স্টেডিয়াম তৈরির খবর দিয়েছেন। কিন্তু পুরনো স্টেডিয়ামের কী হাল সেটা বোঝা যাবে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহে লিগের খেলা চলার সময়। আগামী ২৪ জুলাই থেকে চট্টগ্রামে শুরু বিপিএলের ১২টি ক্লাবের জার্সিতে কাল ‘প্যারেড’ হয়েছে। প্রত্যেক ক্লাব দলের হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে জার্সি পরে হেঁটেছেন দুই মডেল। এরপর তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ক্লাব অধিনায়করা। ‘অব দ্য ফিল্ড’ অনেক কিছুই হয়েছে একটি সুন্দর ও জমজমাট লিগের প্রত্যাশায়। এখন শুরু মাঠের খেলা।