আহা, বাড়িতেই যদি কাটিয়ে দিতে পারতাম গরমের সময়টুকু! চলতি পথে রোদের দাপটে নিশ্চয়ই এ কথা মনে হয়। কিন্তু ঘরের ভেতরেও কি মিলছে দুদণ্ড শান্তি? ইট-কাঠ-ইস্পাতের এই নগরে এখন রোদের কারণে বাড়ি হয়ে থাকে গরম। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না বেরোনোর স্বাস্থ্য টিপস তখন করুণ কৌতুকই মনে হয়। তাহলে নিজের ঘরে কীভাবে মিলবে আরাম। জানতে চেয়েছিলাম স্থপতি নাহাস আহমেদ খলিলের কাছে। ঘরের আসবাবপত্র যেন তাপ না বাড়ায়,ঘরের পাশে এক চিলতে সবুজ, গাছ তাপ কমাবে, বড় জানালার পাশে ছোট বাঁশঝাড়তিনি বললেন, ‘গরমে ঘরের বাইরের চেয়ে ভেতরটা খুব বেশি শীতল করা যাবে না। তবে বাইরের চেয়ে উত্তাপ যাতে বেশি না হয়, সে ব্যবস্থা করার বেশ কিছু উপায় আছে। ঘর শীতল রাখার বিষয়টি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনার সময়ই আমাদের বিবেচনা করতে হবে। খেয়াল করতে হবে ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকছে কি না। যদি ঘরটা খোলা থাকে সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ করাটা সে রকম ক্ষতিকর নয়। তবে সূর্যের আলো ঘরের বেষ্টনীর যে তলগুলোতে পড়ছে, সেগুলো ছায়ায় রাখতে পারলে ঘর অনেকটা কম উত্তপ্ত হবে। বাড়ি বা ফ্ল্যাট দক্ষিণ-পূর্ব দিকমুখী করে তৈরি করা সব থেকে ভালো। বেশি ব্যবহৃত ঘরগুলো দক্ষিণমুখী হলেই ভালো। তবে দক্ষিণ দিকের বাতাস যেন ঘরে প্রবেশ করতে পারে।’
বাড়ি বানাতে দিক বিবেচনার কারণ হলো সূর্য গরমকালে দক্ষিণ দিকে খাড়াখাড়িভাবে থাকে, তাই দেয়ালে ছায়া ফেলে সহজে। পূর্ব দিকেও সূর্য একটু হেলে থাকে গরমের সকালবেলায়। শুধু বাড়ি নির্মাণে নজর দিলেই হবে না। গরমে স্বস্তির সন্ধান পেতে অন্দরের আসবাব ও গায়ে পোশাক জড়ানোর ক্ষেত্রেও হতে হবে সতর্ক। পশ্চিমের বদ্ধ পোশাক বাদ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ঢিলে সুতির পোশাক অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক।
নাহাস আহমেদ বলেন, ‘ঐতিহ্যগত প্রতিটি জিনিস উদ্ভবের পেছনেই কারণ থাকে, যা আমাদের সংস্কৃতি ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই। স্যুট-টাই পরা হয় শরীরের গরম আটকানোর জন্য, তাই এটা শীতপ্রধান পশ্চিমা দেশের পোশাক। ঘরের সোফা, বালিশ, তোশক শুধু আরামদায়ক হলেই হবে না, তা কতটা তাপ উৎপন্ন করবে, সে বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে।’
বহুতল ভবনে যে বাসিন্দারা একেবারে ওপরের তলায় (টপ ফ্লোর) থাকেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় বেশি গরমে থাকেন। সে ক্ষেত্রে শীতলীকরণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সম্ভব হলে আরেকটি জলছাদ তৈরি কিংবা ফাঁপা ইটের (হলো ব্রিক) মাধ্যমেও গরমের প্রকোপ কামানো যেতে পারে। এ ছাড়া ছাদে বাগান করলেও তাপ সরাসরি ঘরে আসবে না। শুধু ছাদের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রেই নয়, ঘর শীতল রাখতে বারান্দায় গাছ রাখতে পারেন সবাই। রোদের তাপ গাছ শোষণ করে, ঘর ঠান্ডা থাকবে।
নাহাস আহমেদের কিছু পরামর্শ—
* ঘরের দেয়ালের ছাদকে ছায়ায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। সম্ভব হলে বারান্দা, সানশেড, কার্নিশ ব্যবহার করুন।
* বাতাস চলাচলের জন্য দক্ষিণ, পূর্ব-দক্ষিণ দিকে যতটা পারা যায় খোলা জায়গা রাখতে হবে।
* বেশি ব্যবহৃত কক্ষগুলো দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাখা ভালো।
* উত্তর দিকে সূর্য আসে না, তাই বাড়তি উত্তাপও হয় না। তবে গরমকালে বাতাসও আসে না, তাই ভেতরের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। পশ্চিমে সূর্যের আলো অনেকটা হেলানভাবে দেয়ালে পড়ায় দেয়ালে ছায়া পাওয়া যায় না। পশ্চিমের দেয়াল তাতে গরম হয়।
* কার্পেটসহ তাপ ধরে রাখে এমন আবরণ ব্যবহার না করা ভালো।
* সোফা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতটা তাপ উৎপন্ন করে ও ধরে রাখে সে বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
* বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহারে ঘর গরম হয় কি না, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।