কড়া হলো প্রতিনিয়ত ঘষা খেয়ে তৈরি হওয়া মরা চামড়ার চলটা, যা অনেক সময় ব্যথাও তৈরি করতে পারে। সাধারণত হাত এবং পায়ে কড়া পড়তে দেখা যায়। তেমন ক্ষতিকর না হলেও পরিষ্কার না করলে ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। শেভার, অ্যাসিড অথবা ঝামাপাথর দিয়ে কড়া দূর করার ব্যবস্থা থাকলেও ঘরোয়া সাধারণ কিছু উপকরণ ব্যবহার করে আরো ভালো ভাবে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
আমরা এমনই কিছু ঘরোয়া প্রতিকার আপনার জন্য নিয়ে হাজির হয়েছি যা সচেতন মানুষেরা বহুবছর ধরে কড়া দূর করতে ব্যবহার করেন।
বেকিং সোডার গোলা
পা ধোয়ার সময় পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে নিলে কড়া দূর হয়, তবে এর চেয়েও ভালো উপায় হলো বেকিং সোডার গোলা ব্যবহার করা। বেকিং সোডায় পানি মিশিয়ে গোলা তৈরি করুন এবং কড়ার উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। যতদিন কড়া পুরোপুরি দূর না হয় ততোদিন নিয়মিত এভাবে বেকিং সোডার গোলা ব্যবহার করুন।
চায়ে ডুবিয়ে রাখুন
গরম গরম চা যেমন আপনাকে তৃপ্তি দেয়, তেমনি তা ত্বকের জন্যও ভালো। কড়া দূর করতে ক্যামোমিল চা অথবা টি ট্রি অয়েল পানিতে মিশিয়ে কড়া পড়া জায়গাটি ডুবিয়ে রাখুন। নিয়মিত এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ধীরে ধীরে কড়া চলে যাবে। চা যদি ত্বকে দাগ তৈরি করে তা দূর করতে সাবান আর পানিই যথেষ্ট।
কর্নস্টার্চ (কর্নফ্লাওয়ার) দিয়ে কচলান
কড়া সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। কড়া পড়া জায়গাটি নিয়মিত কর্নস্টার্চ দিয়ে কচলালে তা দূর হয়ে যায় এবং তাতে প্রদাহ এবং ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। যদি কড়ায় ব্যথাও থাকে তাহলে কর্নস্টার্চ তা দূর করতে সক্ষম।
অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটের গুঁড়ো
বহুল পরিচিত অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট আপনার পায়ের কড়া দূর করে দিতে সক্ষম। ৫-৬টি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট গুঁড়ো করুন এবং তা লেবুর রস এবং পানিতে মিশিয়ে দিন গোলা তৈরি করুন। এই গোলা কড়ার উপর মেখে দিন এবং গরম তোয়ালে মুড়িয়ে একটি প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। ১০ মিনিট পর ঝামাপাথর দিয়ে ঘষে কড়া তুলে ফেলুন। ডায়াবেটিস বা অ্যাসপিরিনে অ্যালার্জি থাকলে এই পদ্ধতি আপনার জন্য নয়।
ভিনেগার দিয়ে মুড়ে দিন
তুলোর বল ভিনেগারে ডুবিয়ে কড়ার উপর টেপ দিয়ে সারা রাত লাগিয়ে রাখুন। সকালে উঠে ঝামাপাথর দিয়ে ঘষে নিন। খেয়াল রাখবেন ভিনেগার যেন কেবল কড়াতেই লাগে, আশেপাশের চামড়ায় নয়।
আনারসের টুকরা দিয়ে ঘষুন
আনারসের খোসায় এক ধরণের এনজাইম রয়েছে যা কড়া দূর করতে পারে। সপ্তাহে এক দিন ছোট এক টুকরো আনারসের খোসা সারা রাত কড়ার উপর কাপড় দিয়ে বেধে রাখুন। এর আগে আনারসের রস কড়ার উপর মেখে দিন এবং বাধন খোলার পরও সেখানে রস লাগাতে হবে।
বাসি রুটি বেধে রাখুন
বাটি রুটি খাওয়ার জন্য ভালো না হলেও ত্বক নরম করতে সাহায্য করে। ঘুমতে যাওয়ার আগে অর্ধেকটা রুটি আপেল সিডার ভিনেগারে ভিজিয়ে কড়ার উপর বেধে নিন। এরপর জায়গাটি প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে সুতি মোজা পায়ে দিন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কড়া নরম হয়ে যাবে।
সারা রাত অ্যালোভেরা লাগিয়ে রাখুন
এই কৌশল খাটাতে হয় অ্যালোভেরার পাতা না হয় অ্যালোভেরার রস ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরার পাতার উপরের খোসা ছাড়িয়ে অথবা অ্যালোভেরার রস কড়ার উপর লাগিয়ে সারা রাত সুতি বা গজ কাপড় দিয়ে বেধে রাখুন। এতে কড়া তুলে ফেলার মতো নরম হয়ে যাবে।
ভিটামিন এ বা ই ক্যাপসুলের তেল মাখুন
এই ভিটামনিগুলো ত্বকের উপর ব্যবহার করলে ত্বকের মরা চামড়া দূর হয়। একটা সুঁই দিয়ে ভিটামিন এ অথবা ভিটামিন ই ক্যাপসুলগুলোতে থাকা তেল বের করে নিন। এরপর ঘুমতে যাওয়ার আগে নিয়মিত কড়ার উপর এই তেল মেখে নিন। যতোদিন কড়া দূর না হবে ততো দিন এই তেল মাখা চালিয়ে যেতে থাকুন।
পায়ে (বা হাতে) মোজা পরুন
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ইউরিয়া, বা অ্যামোনিয়াম ল্যাকটেট সমৃদ্ধ এক্সফলিয়েটিং ক্রিম বা লোশন কড়া দূর করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি ত্বক কোমল করে এমন ক্রিম বা পেট্রোলিয়াম জেলিও কড়ায় ব্যবহার করা যায়। এসব ক্রিম বা লোশন কড়ার উপর লাগিয়ে মোজা পরে থাকলে আক্রান্ত স্থান আর্দ্র থাকবে।
বোনাস: শিয়া বাটার পা ফাটা দূর করে
যদি আপনার পা অমসৃণ বা ফাটা থাকে, তাহলে ওই জায়গায় শিয়া বাটার ব্যবহার করতে পারেন। আফ্রিকার এক ধরণের বিশেষ বাদাম থেকে তৈরি হয় শিয়া বাটার। ত্বকের কোলাজেন তৈরি করে ত্বক পুনর্গঠনে সাহায্য করে শিয়া বাটারের উপাদান। তাছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে এই উপাদান। নিয়মিত শিয়া বাটার ব্যবহার করলে পা ফাটা দূর হয়।
আপনারও কি কোনো কৌশল জানা আছে, বিশেষ করে ঘরোয়া কোনো ঘরোয়া প্রতিকার, যা কড়া দূর করে? আমাদের জানান!