টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বের সূচনা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছেন মাশরাফিরা। আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কোথায় একটু গুছিয়ে উঠবে দল, তার আগেই আরেকটি ধাক্কা। বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষেধাজ্ঞা জুটেছে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির। দলের এমন বিপর্যয়ে তাই খানিকটা অসহায় দেখাচ্ছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে।
বিশ্বকাপের শুরু থেকে বোলিংয়ের মূল ভরসা মুস্তাফিজুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। এখন একাদশের আরও দুই মূল অস্ত্র হাতছাড়া হয়েছে। বদলি দুজন মানিয়ে নেওয়ার সময়ও পাচ্ছেন না। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে এমন ঘটনা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পথচলাকেই কঠিন করে দিচ্ছে। দলের ভারসাম্যও এখন অনেকটাই নষ্ট। মাশরাফি নিজেও খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না কালকের ম্যাচ নিয়ে, ‘কঠিন সময় ওরা থাকলেও যে আসত না এটা বলা যাবে না। বিষয়টা হচ্ছে, এমন একটা সময় আমরা ধাক্কা খেলাম। আমাদের জন্য এটা ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুজন খেলোয়াড়কে (শুভাগত ও সাকলাইন) আমরা দুই দিন আগে পেলেও ম্যানেজ করে ফেলতে পারতাম। এমন একটা সময়ে নিউজটা এসেছে। তারা সকালের ফ্লাইটে নেমে এখন অনুশীলন করতে এসেছে।’
দলের আত্মবিশ্বাসেই যে ধাক্কা লেগেছে, সেটি পরিষ্কার শোনা গেল মাশরাফির কণ্ঠে, ‘ঘরের দুজন ছেলের যদি সমস্যা হয়, আপনি যেকোনো কাজই ভালোভাবে করতে পারবেন না। সেই উদ্যম আর পাবেন না। আমাদের কাছে জিনিসটা এখন ওই রকম। আমাদের মানসিক অবস্থাও এখন ওই রকম নেই। সবাই দেখলেই বুঝতে পারবেন। কিন্তু আমরা অবশ্যই মাঠে নামব, যতটুকু স্পিরিট নিয়ে এর আগের ম্যাচে আমরা নেমেছিলাম।’
এমন পরিস্থিতিতে বাকি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের পক্ষে ভালো করা কঠিন। মরিয়া হয়ে পুরো ফিট না হওয়া মুস্তাফিজকে মাঠে নামানোর কথাও বলে ফেলেছেন অধিনায়ক। দলের এমন অবস্থায় সমর্থকদের সাহায্য চেয়েছেন মাশরাফি। দলের পারফরম্যান্স খারাপ হলেও যেন সমর্থকেরা মুখ ফিরিয়ে না নেন, তখনো যেন সমর্থন বজায় থাকে সে আশাবাদ তাঁর কণ্ঠে, ‘জানি, এর থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশর মানুষ আমাদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। আমরাও চেষ্টা করব আমাদের প্রতিক্রিয়াও যেন মাঠ থেকেও সে রকমই হয়। তবে কাজটা অবশ্যই কঠিন।’
তাসকিনের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাটা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে সৃষ্টি করেছে তীব্র ক্ষোভ। সবাই প্রতিবাদ জানাচ্ছে নিজেদের স্থান থেকে। অনেকেই আশা করছেন, বাংলাদেশ দলও সেই প্রতিবাদে অংশ নিক। মাশরাফির চোখ এড়ায়নি এই বিষয়টি। সে চিন্তা থেকেই নিজেদের কর্তব্য ঠিক করে নিয়েছেন মাশরাফি, ‘সানির বিষয়টা আমরা গ্রহণ করেছি। কিন্তু তাসকিনের বিষয়টা মনে চেপে রেখে কাজ করা খুবই কঠিন কাজ। আমি কোনো সময় বাড়তি কথা বলতে পছন্দ করি না, সামনে কী হবে না হবে। সবচেয়ে ভালো হয় মাঠে প্রতিবাদটা জানাতে পারলে। আমরা অবশ্যই চাই সামনের ম্যাচটায় আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলা হোক। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, আমরা কি অনুভব করছি নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে নিয়ে এবং আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট কি না এই বিষয়ে? তারপরে আমাদের একটা সিস্টেম আছে, ওই সিস্টেমের বাইরেও আমরা যেতে পারি না। আমাদের মন এক জায়গায়, আমাদের করতে হবে অন্য কিছু!’
বাংলাদেশ দল তো নিজেদের ক্রিকেটের বড় শক্তি হিসেবে প্রমাণ করে ফেলেছে। এবার সমর্থকদের পালা, তাঁরা কি পারবেন দলের খারাপ সময়ে পাশে থেকে নিজেদের প্রমাণ করতে? মাশরাফি কিন্তু আশাবাদী।