jio
স্কার্ট জনপ্রিয় অনেক আগে থেকেই। তবে কিছুদিন পরপরই স্কার্টে দেখা যায় নতুন রূপ। ১৯ শতকের গোড়া থেকেই স্কার্টের প্রচলন। এরপর বিভিন্ন সময় কাঁচির আঁকাবাঁকা কাটে নকশায় ফুটে উঠেছে নতুন রূপ। এই শতকে এসেও নকশা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থামেনি। স্কার্টের সঙ্গে টি-শার্ট, ফতুয়া তো পরা হয়ই—বাড়তি আকর্ষণ যোগ করছে বিভিন্ন কাটের কামিজ। ঘরোয়া আড্ডা থেকে অফিস—সব জায়গাতেই এ পোশাকটি মানিয়ে যায়। আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের এই পোশাক বেশ জনপ্রিয়। দরকার শুধু জায়গা বুঝে মানানসই স্কার্টের ধরনটা বেছে নেওয়া। শরীরের গড়নের সঙ্গে মানাবে এমন স্কার্ট বেছে নেওয়াটাও খুব জরুরি।
বাজার ঘুরলে বোঝা যায় লম্বা থেকে মাঝারি, মাঝারি থেকে ছোট সব আকারের স্কার্টই আছে। ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বললেন, ‘একটু লম্বা ও ঘের বেশি হওয়ায় এটি গরমের সময়টাতেও বেশ আরামদায়ক।’
ফ্যাশন হাউস একস্ট্যাসির প্রধান ডিজাইনার তানজীম হকের কাছ থেকে জানা গেল বিশ্বজুড়ে স্ট্রেট স্কার্ট, খাটো স্কার্ট, বেল শেপ স্কার্ট, এ লাইন স্কার্ট, প্রিন্ট স্কার্ট, সার্কেল স্কার্ট, হবল স্কার্ট জনপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘এ দেশেও এগুলোর চল আছে আর সহজপ্রাপ্য।’ এর বাইরেও আছে নানা নকশার চাপা স্কার্ট। বেশি ঘেরের স্কার্টের জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন পেনসিল স্কার্টও অনায়াসে বেছে নিচ্ছেন কেউ কেউ। এ ক্ষেত্রে অস্বস্তি লাগলে লেগিংস বা টাইটসের সঙ্গে পরা যেতে পারে। বড় ফ্যাশন হাউসগুলো সাধারণত তিন ধরনের স্কার্ট করে থাকে—ট্রাইবাল মোটিফ ও গাঢ় রঙের ট্রাইবাল স্কার্ট, লেস ও পাড় বসানো ক্ল্যাসিক স্কার্ট আর কাপড়ের ওপর সুতা ও পুঁতির কাজ করা স্মার্ট টেইলারিং স্কার্ট।
সারা দিনের ঘোরাঘুরিতে র্যা প স্কার্টের সঙ্গে লম্বা কামিজ। পোশাক: বিবিয়ানাহালকা কাপড়ে আরাম
লিপি খন্দকার মনে করেন, একসময় ভারী কাপড়ের স্কার্ট চললেও এখন স্কার্ট বলতেই হালকা কাপড়। আর এই গরমে অবশ্যই বেছে নিতে হবে হালকা সুতি কাপড়ের স্কার্ট। আজকাল কেউ কেউ মসলিন ও খাদি কাপড়ও ব্যবহার করছেন স্কার্টে। এ ছাড়া রয়েছে শাটিন, পপলিন আর ডেনিম। এসব কাপড়েও স্কার্ট তৈরি হচ্ছে।


কাজের চমক

বেশি ঘের, টাইডাই, অ্যাপ্লিক, ব্লক প্রিন্ট আর সুতার কাজ বেশির ভাগ ফ্যাশন হাউসের তৈরি স্কার্টে দেখা যায়। কয়েক পরত কাপড়ের ডিজাইনের সঙ্গে পুঁতি আর ফিতা দেওয়া স্কার্টও পাবেন। ‘চাইলে ফিতাটা দিয়ে থামির মতো পেঁচিয়ে এবং একপাশে বেঁধেও পরা যাবে এ স্কার্ট।’ বললেন লিপি খন্দকার। স্কার্টগুলোতে নতুনত্ব আনতে সিক্যুইন, পুঁতি, লেসের নানা ধরনের ডিজাইন দেওয়া হচ্ছে। ক্রুশ কাঁটা, কাঁথা ফোঁড় ও এমব্রয়ডারি এবং শাটিন কাপড়ের ফুলেল প্রিন্টের স্কার্টগুলোও বেশ নজরকাড়া।
রংঢং
হালকা রঙের স্কার্টই বেশি চলছে। রঙের মধ্যে আছে বাদামি, খাকি, হালকা সবুজ। রামীম রাজ এই সময়ের জন্য সাদা, চাপা সাদা, কালো, গোলাপি, হালকা লাইলাক রঙের স্কার্ট বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। উজ্জ্বল রংও ব্যবহার করা যায়, তবে তা লম্বা স্কার্টের বেলায়। এ ছাড়া পাবেন প্রাকৃতিক রঙের স্কার্ট। তবে থেমে নেই গাঢ় রঙের স্কার্টের কদরও। কালো, গাঢ় নীল, মেরুন, গাঢ় সবুজ ইত্যাদি রংও কিন্তু শোভা পাচ্ছে।
কার জন্য কেমন
মাঝারি উচ্চতা যাঁদের, তাঁদের জন্য বেশি ঘেরের স্কার্ট নয়। যাঁদের পা লম্বা, তাঁদের ক্ষেত্রে লম্বা আর বেশি ঘেরের স্কার্ট মানানসই। চাপা স্কার্টগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানে পরা যায়। এই স্কার্ট পরলে পা তুলনামূলকভাবে বড় দেখায়, যা খাটোদের জন্য বাড়তি সুবিধা। জিপসি স্কার্টগুলো মোটা বা চিকন সবাইকে দারুণ মানিয়ে যায়।

লম্বায় ছোট স্কার্টের নিচের অংশে এলোমেলো কাট। পোশাক: এক্সট্যাসি.বাহারি নকশা ও কাটছাঁট
স্কার্টের নকশা করা হয় সাধারণত বিভিন্ন থিমের ওপর। এখন চলছে ঝুল দেওয়া স্কার্ট। এ ছাড়া সুতি কাপড়ের মধ্যে দুই ধরনের স্কার্ট করা হয়। মাছের মতো ওপর থেকে চাপা হয়ে নিচে ঢোলা এবং ঘেরে বেশি হলে তাকে বলে ফিশ স্কার্ট। অন্যদিকে ঢোলের মতো দেখতেও একধরনের ঢোলা স্কার্ট ডিজাইন করা হচ্ছে।
একস্ট্যাসির ডিজাইনার তানজীম হক জানান, তাঁদের স্কার্টের একটি বড় অংশ পাশ্চাত্য ধাঁচের। এতে থাকছে বৈচিত্র্যময় কাট। কোমর ও নিচের অংশে ইয়কে কাজ করা। তাতে ফিটিং ভালো হয়।
স্কার্টের সঙ্গে কী
ফ্যাশন ডিজাইনার রামীম রাজ জানান, স্কার্টের সঙ্গে পরা যেতে পারে চোলি কাটের ব্লাউজ, শর্ট ব্লাউজ, শার্ট, টপ বা ফতুয়া। তবে এ ক্ষেত্রে স্কার্টটা একরঙা হলেই ভালো। টপটা বরং হবে বাহারি রঙের। হাতা কাটা, খাটো হাতা, ম্যাগি কিংবা থ্রি-কোয়ার্টার—যেকোনো মাপের হাতার টপের সঙ্গে স্কার্ট মানায়। চাইলে টি-শার্টের সঙ্গেও স্কার্ট পরা যায়। হাঁটুর নিচ পর্যন্ত স্কার্টগুলোর সঙ্গে টিউনিকের মতো টপগুলো মানায়।
কোথায় পাবেন
মায়াসির, বিবিয়ানা, একস্ট্যাসি, ক্যাটস আই, যাত্রা, আড়ং, অরণ্য, সাদাকালোতে বিভিন্ন নকশার স্কার্ট পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, হকার্স মার্কেট, পিংক সিটি, গুলশান ১ নম্বরের ডিসিসি মার্কেট, রাইফেলস স্কয়ার, মেট্রো শপিং মল ইত্যাদি শপিং সেন্টারেও পাওয়া যাবে স্কার্ট। চাইলে গজ কাপড় কিনে নিজের মনমতো ডিজাইনে বানিয়েও নেওয়া যেতে পারে স্কার্ট।
দরদাম
ফ্যাশন হাউস থেকে কিনতে স্কার্টের দাম পড়বে ১ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া সাধারণ মার্কেট থেকে স্কার্ট কিনতে গুনতে হবে ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।