জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী তরুণ নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমনের নতুন ছবি একটি সুতার জবানবন্দী। এই ছবির স্ক্রিপ্টের জন্য ২০১৩ সালে কামার পেয়েছিলেন ‘দ্য এশিয়ান পিচ’ পুরস্কার। কাল ২৩ এপ্রিল বিকেলে ছায়ানট মিলনায়তনে ৫২ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। এ নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে
কী নিয়ে তৈরি ‘একটি সুতার জবানবন্দী’?
আমার আগের ছবি শুনতে কি পাওকে যদি আমি বলি সিনেমা, তা হলে একটি সুতার জবানবন্দী আক্ষরিক অর্থেই একটা প্রামাণ্যচিত্র। আমাদের চারপাশে কত কিছু ঘটে, আমরা পত্রিকার পাতা ওলটাই, ভুলে যাই। তারপরও কিছু জিজ্ঞাসা থেকে যায়, বহুদিন তাড়া করে বেড়ায়—সে রকম একটা ঘটনা ছিল রানা প্লাজা। স্পেকট্রাম দুর্ঘটনার পর থেকেই মাথায় একটা চাপ ছিল, তাজরীন আর রানা প্লাজার পর বসে থাকতে পারলাম না। নির্মাতা হিসেবে নয়, একজন নাগরিকের দায় নিয়ে বানিয়েছি ছবিটি।
দ্য এশিয়ান পিচ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন এর জন্য…
হ্যাঁ, ২০১৩ সালে ‘দ্য এশিয়ান পিচ’ পুরস্কার জয় করেছিল এই স্ক্রিপ্টটি, আর সে জন্যই এশিয়ার অন্যতম চারটি টেলিভিশন—জাপানের এনএইচকে, কোরিয়ার কেবিএস, তাইওয়ানের পিটিএস ও সিঙ্গাপুরের মিডিয়াকর্প যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে ছবিটি। এর মধ্যে কয়েকটি চ্যানেলে দেখানোও হয়েছে এটি। এই পুরো ব্যাপারটি তরুণদের অনেক সম্ভাবনা দেখাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের ছবির জন্য গোটা বিশ্বের দর্শককেই টার্গেট করতে হবে।
আমাদের দর্শকদের দেখাতে এত দেরি হলো কেন?
আসলে ভালো ছবির পরিবেশনা–চ্যালেঞ্জ অনেকটা উচ্চাঙ্গসংগীতের মতো, এর সমঝদার কম না। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া হয় না। আমাদের প্রেক্ষাগৃহগুলো বেদখল হয়ে গেছে অনেক দিন! সব থেকে বড় ক্ষতি যেটা হয়েছে—বিকল্প, স্বাধীন সব ধারাই এখন কমবেশি পরাধীন হয়ে গেছে। কেউ বা মোহ বা ক্ষমতার কাছে, আবার কেউ টাকার কাছে। ছবিকে ভালোবাসার লোকেরা ছবি থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। ছবি কেন বানাব, কী ছবি বানাব—এসব নিয়ে এখন আর খুব একটা কেউ ভাবে না। হলিউড-বলিউডের পপকর্ন কালচারে আর করপোরেট ফ্র্যাঞ্চাইজির চাপে আমাদের সিনেমা এখন অনেকটা হয়ে গেছে সার্কাসের মতো।
সিনেমা সার্কাস?
সার্কাস না! দিনে দিনে সার্কাস আর সিনেমা সমার্থক হয়ে যাচ্ছে না! কী ছবি বানালাম, কেন বানালাম, সেটা নিয়ে তো খুব একটা কথা শুনি না! ছবিতে হাতি-ঘোড়া কী আছে, তা নিয়েই যত আলোচনা। যারা ব্যবসা করবে, তাদের উদ্দেশ্য বুঝি মুনাফা, কিন্তু নির্মাতা তো জোগানদার নন, তিনি তো শিল্পী! তাঁর উদ্দেশ্য হওয়ার কথা সৃষ্টি। সেদিকে যখন মনোযোগ কম দেখি, তখন খুব চিন্তা হয়। ভাবি, মুনাফা বা ধান্দাই যদি উদ্দেশ্য হবে, তা হলে তো দেশে আরও অনেক রাস্তা ছিল।
তা হলে ভবিষ্যৎ?
বিচ্ছিন্ন কিছু সিনেপাগলা ছাড়া আমাদের সিনেমাকে এখন সত্যিই আর কেউ সত্যিকারভাবে ‘ওন’ করে না, ‘লিড’ও করে না। এমনিতেও ইন্টারনেটের চাপে একটা প্রজন্ম পর হলমুখী দর্শক মারাত্মক কমে যাবে, ছবির বাজারও মোটামুটি দুই ভাগ হয়ে যাবে, দেশি আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের মতো। পচা না হলে আর সহজে লভ্য (সহজলভ্য না, সস্তাও না) হলে লোকে দেশিটাই বেশি খাবে, না হলে আমাদের দর্শক হয়ে যাবে বিদেশি ছবির একচেটিয়া বাজার।