এইমাত্র ডিনার করে এলাম। উসাইন বোল্টের রেস্টুরেন্টে। সুশি খেলাম আর জার্ক চিকেন। এই চিকেনটা এখানে অসম্ভব জনপ্রিয়। অবশ্য খাবার নিয়ে আমার কোনো খুঁতখুঁতানি নেই। যেখানে যা পাওয়া যায়, খেয়ে নেই। আর বোল্ট কিংবা গেইলের রেস্টুরেন্টগুলো আমাদের মতো না, স্পোর্টস বার। ইন্ডিয়ান কিংবা চাইনিজ নাই। মূলত বার, সঙ্গে খাবারও পাওয়া যায়।
অ- অ অ+
বৈশ্বিক ক্রিকেটে তিনি কোনো আগন্তুক নন। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেই প্রথম বাংলাদেশি তারকা সাকিব আল হাসান। বরাবরের মতো ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) এখন বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছেন তিনি। গতকাল বাংলাদেশে যখন সকাল ১০টা, তখন উত্তর আমেরিকায় রাত ১১টা, সাকিবকে ফোনে ধরার সেরা সময়। তাঁকে পেয়েও গেলেন সাইদুজ্জামান
প্রশ্ন : এখন কোথায়?
সাকিব আল হাসান : জ্যামাইকায়। এইমাত্র ডিনার করে এলাম। (উসাইন) বোল্টের রেস্টুরেন্টে। সুশি খেলাম আর জার্ক চিকেন। এই চিকেনটা এখানে অসম্ভব জনপ্রিয়। অবশ্য খাবার নিয়ে আমার কোনো খুঁতখুঁতানি নেই। যেখানে যা পাওয়া যায়, খেয়ে নেই। আর বোল্ট কিংবা গেইলের রেস্টুরেন্টগুলো আমাদের মতো না, স্পোর্টস বার। ইন্ডিয়ান কিংবা চাইনিজ নাই। মূলত বার, সঙ্গে খাবারও পাওয়া যায়।
প্রশ্ন : বোল্টের রেস্টুরেন্টে (ট্র্যাকস অ্যান্ড রেকর্ডস) খেলেন, তার মানে নিশ্চয় টিমমেট ক্রিস গেইলের ট্রিপল সেঞ্চুরি স্পোর্টস বারেও যাওয়া হয়েছে?
সাকিব : তা তো অবশ্যই। ওখানে বেশ কয়েকবার খেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার নিজেরও তো রেস্টুরেন্ট আছে। তো, ক্রীড়াঙ্গনের ওই দুজনের রেস্টুরেন্টের কোনটার খাওয়া বেশি ভালো লাগল? একজন হোটেলিয়ারকে প্রশ্নটা করছি, যিনি তাঁর রেস্টুরেন্টের প্রতিটি খাবার চেখে দেখেন বলেই জানি!
সাকিব : (হাসি) উম, আসলে দুটিই ভালো লেগেছে। কোনোটাকে পিছিয়ে রাখতে পারছি না। আসলে এখানকার পরিবেশটাই এমন যে আপনার সবই ভালো লাগবে। আমি তো ড্রিঙ্ক করি না, তবে সবাই মিলে যাই। হইচই করে খেয়ে চলে আসি। ওখানকার সাধারণ মানুষও তাই করে। ভীষণ আমুদে। ক্যারিবীয়দের জীবনকে উপভোগ করা দেখতেও ভালো লাগে।
প্রশ্ন : এবার সেলিব্রিটি সাকিবের কাছে প্রশ্ন, জ্যামাইকায় কে বেশি জনপ্রিয়—গেইল নাকি বোল্ট?
সাকিব : দুজনেই জনপ্রিয়। এটা ঠিক যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্রিকেটটা আগের জায়গায় নেই। তবে ক্রিকেটার গেইল ভীষণ জনপ্রিয়। তাই দুজনকেই এখানে সমান জনপ্রিয় মনে হয়েছে আমার। হয়তো জরিপ করলে আরো নিখুঁত তথ্যটা দিতে পারতাম। তবে আমার মনে হয় বোল্টের মতো গেইলও জনপ্রিয়।
প্রশ্ন : ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিলেন। এরপর আরো বার পাঁচেক গেলেন। কোনো পরিবর্তন কি চোখে পড়েছে?
সাকিব : ক্রিকেটের কারণে কম দেশ তো ঘুরিনি। তবে এই একটা জায়গা যেখানে এলে ক্রিকেটের বাইরেও সময়টা ভালো কাটে। আমার তো খুবই ভালো লাগে। সমুদ্র, প্রকৃতি, এখানকার আমুদে মানুষ—দারুণ! দেখে মনে হবে এদের কারো বোধ হয় কোনো কাজ নেই জীবনকে উপভোগ করা ছাড়া। সেই ২০০৭ সালে যেমন দেখেছিলাম, এখনো ঠিক তেমনটাই আছে। ওদের মানুষ-শহর-রাস্তা-বিচ সব আগের মতোই আছে। তবে এখন একটা নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এখানে এসে উঠেছি হোটেল পেগাসাসে। মনে আছে তো হোটেলটার নাম? এ হোটেলের একটা রুমেই বব উলমারের (২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কোচ) মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।
প্রশ্ন : হোটেলটা তো একেবারে শহরতলিতে। দরজা খুলেই সমুদ্রসৈকতে পা রাখতে পারছেন না…
সাকিব : এত দিন সমুদ্রের ধারেই ছিলাম। আবারও সেরকম হোটেলেই থাকা হবে হয়তো। ডিফারেন্ট টেস্ট হিসেবে খারাপ কী!
প্রশ্ন : এবার আপনার খেলার প্রসঙ্গে আসি। দারুণ দুটি ম্যাচ খেললেন টানা। তো, সবশেষ আইপিএল অভিজ্ঞতার সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে নিশ্চয়ই খুব ভালো আছেন জ্যামাইকা তাল্লাওয়াসে?
সাকিব : হ্যাঁ, ভালো খেললে তো ভালোই লাগে। আমি বলব না যে আইপিএলের চেয়ে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম। আসলে এখানকার পরিবেশ আপনাকে অনেক হেল্প করে। পরিবেশ বলতে বোঝাচ্ছি টিম এনভায়রনমেন্ট। কোনো টেনশন নেই। ড্রেসিংরুমে ক্রিস গেইল-আন্দ্রে অ্যাডামসের মতো চরিত্র থাকলে অবশ্য টেনশনও পালাবে! ডেল স্টেইন ভয়ংকর ফাস্ট বোলার হতে পারে, তবে খুব ঠাণ্ডা স্বভাবের মানুষ। যে কারোরই এমন পরিবেশ ভালো লাগবে। সবচেয়ে মজার হলো ম্যাচের পর ড্রেসিংরুম দেখে সেভাবে বোঝার উপায় নেই দল জিতেছে না হেরেছে!
প্রশ্ন : আচ্ছা, এই টেনশনহীন পরিবেশটা বাংলাদেশ দলে আমদানি করলে কেমন হয়?
সাকিব : পুরোটা আনলে সর্বনাশ হয়ে যাবে! আমি ২৫ ভাগ আনতে রাজি আছি। আমাদের এখনকার ড্রেসিংরুমের পরিবেশ যথেষ্ট ভালো। তবে হ্যাঁ, ক্যারিবীয়দের নির্ভার টেনশনহীন জীবনের কিছুটা যদি দলে যোগ হয়, তাহলে আরো ভালো হতে পারে। তবে পুরোটা কোনোভাবেই নয়। ওটা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায়ও না।
প্রশ্ন : ওহ! আপনার প্রিয় লিওনেল মেসি তো জাতীয় দলের হয়ে কোনো কিছু জেতার আগেই অবসরে চলে গেলেন! কোনো আফসোস?
সাকিব : এ প্রশ্নটা একমাত্র ব্রাজিল এবং রোনালদো সমর্থকদের কাছ থেকেই আসতে পারে, বুঝতে পারছি! ভাই, মেসি শুধু না, রোনালদো-নেইমারের খেলাও আমার ভালো লাগে। মেসি খেলা ছেড়ে দিয়েছে বলে বাড়তি কোনো আক্ষেপ নেই। ও যেটা ভালো মনে করছে, সেটাই করেছে।
প্রশ্ন : মেসির প্রসঙ্গটা তুললাম বিশেষ একটা কারণে। লোকটা ক্লাবের হয়ে এত কিছু জিতেছে কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে কিছুই জেতেনি, তাই সবাই অপূর্ণতার কথা বলছে। আপনার বেলাতেও সে কথা ওঠার জোর সম্ভাবনা কিন্তু রয়েছে। সিরিজ জিতেছেন, দেশ-বিদেশের অনেক ঘরোয়া আসর জিতেছেন কিন্তু দেশের হয়ে কোনো ট্রফি জেতা হয়নি।
সাকিব : কত দিন খেলব, এখনই সময়-তারিখ বলতে পারছি না। তবে দেশের হয়ে কোনো ট্রফি জেতার আগে খেলা ছাড়ব না ইনশাল্লাহ। শুধু এটুকুই বলে রাখছি।
প্রশ্ন : একবার তো খুব কাছে এসে গিয়েছিলেন, ২০১২ এশিয়া কাপে। আচ্ছা, সেই দুঃখটা বেশি নাকি কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে দুটি আইপিএল জেতার আনন্দ বেশি?
সাকিব : কোনো সিরিজ কিংবা আইপিএল জেতাটা অবশ্যই আনন্দের। খুব ভালোও লেগেছিল। তবে এশিয়া কাপের ফাইনালে হারের কষ্টের ভারটা অনেক বেশি।
প্রশ্ন : অনেক দিন পর পরিবার ছাড়া সফরে আছেন। কেমন লাগছে?
সাকিব : অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। মেয়ের বয়স তো মাত্র আট মাস, তাই ওরা আসতে পারেনি। অনেক ফ্লাইট। এই যেমন সেন্ট কিটস থেকে এখানে এলাম দুদিন জার্নি করে, আমেরিকা ঘুরে। এই দ্বীপ ওই দ্বীপ অনেক জার্নি। তাও আবার ছোট এয়ারক্রাফট। তবু ভালো যে এখানে ঝড়-তুফান নেই!
প্রশ্ন : ফিরছেন কবে?
সাকিব : দল যদি ফাইনালে ওঠে তাহলে আগস্টের ৯ তারিখ। তখন দেশে ক্যাম্প চলবে। কিন্তু আমি দুই সপ্তাহের ছুটি চাইব। এত ক্রিকেট খেলেছি যে শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে। যদি ছুটি পাই, তখন বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে যাব।