একই মাঠে একই দৃশ্য—আবাহনীকে জিতিয়ে ফিরছেন মোসাদ্দেক হোসেন। বিকেএসপিতেই নিজেদের আগের ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরের সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ফরহাদ রেজাকে পর পর দুই বলে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ শেষ করেছিলেন আবাহনীর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। কাল ম্যাচের পরিস্থিতি খুব একটা কঠিন না হলেও পর পর দুটি ছক্কা মেরেই খেলা শেষ করেছেন মোসাদ্দেক।
৫৬ রানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (৪০) ও অভিষেক মিত্র (১২) আউট হয়ে গেলে খানিকটা চাপে পড়ে আবাহনী। তৃতীয় উইকেট জুটিতে (৯৪) দলকে এগিয়ে নেন নাজমুল হোসেন-ইউসুফ পাঠান। দুই দিনের লম্বা ভ্রমণ শেষে ৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় অলরাউন্ডার পরশু রাতে পৌঁছেছেন ঢাকায়। কাল সকালে মাঠে পৌঁছাতেও খানিকটা দেরি হয়েছে তাঁর। তবে এত হ্যাপা তাঁকে মোটেও স্পর্শ করেনি।
শুভাগত হোমকে বাউন্ডারি মেরে শুরু। একের পর এক চার-ছক্কায় মাতিয়েছেন বিকেএসপির মাঠ। ৪৭ বলে করেছেন ৬০ রান। এর ৪০ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন ইউসুফ। রায়হান উদ্দিনের করা ২২তম ওভারের পর পর দুই বলে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন সাব্বির রহমানকে। দুবারই ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন প্রাইম ব্যাংকের আইকন খেলোয়াড়! ইউসুফের রান তখন ২৯।
দুবার সুযোগ পেয়ে রায়হানকে ২৬তম ওভারে বেদম পিটুনি দিলেন ইউসুফ। ০, ৪, ৬, ০, ৪, ৪—প্রাইম ব্যাংকের বাঁহাতি স্পিনারের ১ ওভারে তুললেন ১৮ রান। বোলারের মাথার ওপর দিয়ে যেটি উড়িয়ে মারলেন, বল পড়ল বিকেএসপির পাঁচিলের বাইরে! নাজমুল ইসলামের বলে স্কয়ার লেগেই সাব্বিরের ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন ইউসুফ। ২ উইকেটে ১৫০ থেকে ৫ উইকেটে ১৫৬—৬ রানে ইউসুফ, নাজমুল ও সাকিব আল হাসানকে হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে যায় আবাহনী।
এর পর দৃশ্যপটে আবির্ভূত হলেন মোসাদ্দেক। লিটন দাসের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে ৮৭ রান যোগ করে দলকে উপহার দিলেন অসাধারণ এক জয়। খেললেন ৪৯ বলে অপরাজিত ৬৪ রানের সময়োপযোগী এক ইনিংস। ম্যাচ শেষে ইউসুফের কণ্ঠে তাই মোসাদ্দেক-স্তুতি, ‘ভালো ব্যাটিং করেছে ছেলেটা (মোসাদ্দেক)। আমাদের শুরু ভালো হয়েছিল। ১৫০ রান তো সহজেই হয়ে গেল। তারপর যে ৯০ বা ১০০ রান দরকার ছিল, সেটা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ভালো দিক হচ্ছে, ছেলেটা ম্যাচ শেষ করে এসেছে। ওর নিজের জন্য অনেক ভালো হয়েছে।’
এর আগে আবাহনীর স্পিনার বিশেষ করে সাকিব ও সাকলাইন সজীবের অসাধারণ বোলিংয়ে প্রাইম ব্যাংক ৯ উইকেটে করতে পারে ২৪০ রান। কিন্তু তাদের বোলিং ও ফিল্ডিং ভালো না হওয়ায় রানটা ৫ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে আবাহনী। এ জয়ে আবাহনীর সুপার লিগে ওঠার সম্ভাবনা যতটা উজ্জ্বল হয়েছে, ততটাই ফিকে হয়েছে প্রাইম ব্যাংকের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক: ৫০ ওভারে ২৪০/৯ (নুরুল ৪৬, তাইবুর ৪৩, শুভাগত ২৯; সাকিব ৪/৩৫, সাকলাইন ৩/৩৭)। আবাহনী: ৪৪.৩ ওভারে ২৪৩/৫ (মোসাদ্দেক ৬৪*, ইউসুফ ৬০, তামিম ৪০, নাজমুল ৩২; শুভাগত ৩/৩৮, অপু ২/৫১)
ফল: আবাহনী ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন।