ফেরারির গতিতে শুরু, শেষও ফেরারির গতিতে। মাঝপথে একটা ধাক্কাই যা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বার্সেলোনাকে। লিগ শিরোপা তাতে হাত ফসকে যাওয়ার জোগাড়। তা হয়নি, পরশু গ্রানাডার মাঠে লিগের শেষ ম্যাচে লুইস সুয়ারেজের হ্যাটট্রিক শিরোপাটা রেখে দিল কাতালুনিয়াতেই। তবে মার্চের শেষ দিকে প্রায় নিশ্চিত শিরোপা নিয়ে যে রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা হলো, তাতে এক মৌসুমে দুবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পাচ্ছে যেন বার্সা।
নেইমারের পাস ধরে লুইস সুয়ারেজ পরশু তৃতীয়বারের মতো বলটা গ্রানাডার জালে জড়িয়ে দিতে বার্সাও বাঁচল হাঁফ ছেড়ে। আর কোনো সমীকরণ নেই, আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই, এবার শুধুই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া! আট মৌসুমে ষষ্ঠ শিরোপা জিতল বার্সা। তবে ক্লাবের ২৪তম এই শিরোপা জয়ের পথে শেষ দিকে যে চাপ নিয়ে খেলেছে বার্সা, জেরার্ড পিকের কাছে সেটি দারুণ এক গল্প, ‘আমরা দুবার লিগ জিতলাম। একসময় এতটাই এগিয়ে ছিলাম আমরা, ভেবেছিলাম শিরোপা জিতেই গেছি।’
মার্চের শেষ দিকে ১১ পয়েন্ট এগিয়ে থাকা বার্সেলোনাই কিনা শিরোপা জিতল শেষ দিনে এসে। এ জন্য মার্চের আন্তর্জাতিক বিরতিকে দুষতে পারে লুইস এনরিকের দল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৩৯ ম্যাচে অপরাজিত দলটিই তখন হঠাৎ হয়ে পড়ে বর্ণহীন, লিগে হেরে যায় টানা তিন ম্যাচে। সে সুযোগে পয়েন্ট তালিকায় ‘আলোকবর্ষ’ দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও রিয়াল মাদ্রিদ তাকাল চোখ রাঙিয়ে। বার্সা তখনো শীর্ষেই ছিল, কিন্তু প্রতিটি ম্যাচেই ফাঁদ পেতে ছিল পা হড়কানোর ঝুঁকি।
শেষ পাঁচ ম্যাচে সেই ঝুঁকিটা বার্সেলোনা উড়িয়ে ফেলল ভূমধ্যসাগরে। পাঁচটিতেই জয়, তাতে গোল ব্যবধান ২৪-০! দলের এই হার না-মানা মানসিকতারই প্রশংসা ঝরেছে পিকের কণ্ঠে, ‘২০ বছর আগে হলে আমরা শিরোপাটা হারাতাম। হতাশা ঘিরে থাকত আমাদের। কিন্তু এই প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা সব বদলে দিয়েছে। এই দল জিততে জানে। এমন একটা দল যারা ঘুরে দাঁড়াতে জানে, যাদের ওপর ভরসা করতে পারেন।’
মেসি-নেইমার-ইনিয়েস্তারা তো ছিলেনই, তবে মৌসুমে বার্সার সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে ছিলেন সুয়ারেজ। শেষ দিনে হ্যাটট্রিক করে তিনিই বার্সাকে শিরোপা এনে দেবেন, এটিও যেন ছিল ললাটলিখন। এই তিনটি গোল নিয়ে লিগে সর্বোচ্চ ৪০ গোল হলো উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের। ২০০৮-০৯ মৌসুমে উরুগুয়েরই ডিয়েগো ফোরলানের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে মেসি-রোনালদোকে টপকে সর্বোচ্চ গোলদাতার পিচিচি ট্রফিটা জিতলেন সুয়ারেজ। নিজের অর্জনের আনন্দ আছে, তবে তাঁর কাছে শিরোপা জয়ই আসল, ‘আমরাই যোগ্য চ্যাম্পিয়ন। কিছুটা ভুগতে হয়েছে, শেষ কয়েকটা ম্যাচে আমাদের ওপর চাপ অনেক ছিল। তবে এই দলটা গড়েই উঠেছে জয়ের মানসিকতা নিয়ে।’
একটা শিরোপা জয় হয়ে গেছে, এখন বার্সা কোচ লুইস এনরিকের চোখ আরেকটি গৌরবে। ২৩ মে সেভিয়ার সঙ্গে কোপা ডেল রের ফাইনালে জিতলেই এই মৌসুমে ‘ডাবল’ হবে বার্সার। এনরিকের ইতিহাস গড়ার ইচ্ছা তো আছেই, ‘ইতিহাসে মাত্র দুটি দল টানা দুবার দ্বৈত শিরোপা জিতেছে। নিজেদের জন্য আমরা সব সময়ই উঁচু মান ঠিক করে রাখি আর সেটি অর্জনের চেষ্টা করি।’ এএফপি, রয়টার্স।
১১২
এই মৌসুমে বার্সেলোনার গোলসংখ্যা। কাতালান ক্লাবটির ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ, এর আগে ২০১২-১৩ মৌসুমে বার্সা করেছিল ১১৫ গোল, ২০১১-১২ মৌসুমে ১১৪টি
৪০
লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে স্প্যানিশ লিগের এক মৌসুমে ৪০ গোল করলেন লুইস সুয়ারেজ
৬
পরশু গ্রানাডার বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর মৌসুমে সুয়ারেজের হ্যাটটিকসংখ্যা। ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে আর কোনো খেলোয়াড়েরই এই মৌসুমে তিনটির বেশি হ্যাটট্রিক নেই
৭
স্প্যানিশ লিগে সপ্তম কোচ হিসেবে টানা দুবার শিরোপা জিতলেন লুইস এনরিকে