একদিকে বাংলাদেশের কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নরসিংদী-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কামরুল আশরাফ খান। প্রসঙ্গ যখন ফুটবল, দুজন দুই অঙ্গনের হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নাম দুটির মধ্যে পার্থক্য অনেক। তবে আজ তাঁরা মিলে যাচ্ছেন একই বিন্দুতে।
পরিবেশ, পরিস্থিতি এই দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পদের নির্বাচনে। কামরুল আশরাফের জন্য এটি পরীক্ষা নয়। বাফুফের সভাপতি পদে নির্বাচন করে হারলে তাঁর কিছুই আসবে যাবে না। বরং জিতলে পাবেন অনেক কিছুই। পরীক্ষা আসলে দেশজ ফুটবলের মহাতারকা কাজী সালাউদ্দিনের সামনে। ৪০ বছরের সাধনায় যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছেন, সেই জায়গাটা আরও শক্ত করবেন, নাকি হারাবেন?
উত্তর মিলবে আজ স্থানীয় একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভার পর দুপুর দুইটায় শুরু বহুল আলোচিত নির্বাচনে। বাফুফে সভাপতির চেয়ারে গত আটটি বছর কাটিয়ে সালাউদ্দিন মনে করছেন তাঁর ভিত্তি আরও শক্তই হবে। দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেবেন সামনে। হ্যাঁ, এটা ঠিক, বাফুফে সভাপতি হিসেবে তাঁর সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। জাতীয় দল শেষ কয়েক মাসে খারাপ করেছে বলে সমালোচনাও শুনতে হয়েছে।
কিন্তু সত্যটা হলো এই, সালাউদ্দিনের সময় খেলার দাবিতে ফুটবলারদের অন্তত আন্দোলন করতে হয়নি। মোটা দাগে ঢাকার সব স্তরের ফুটবল মাঠে ছিল। ফুটবল মাঠে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি আট বছর আগে দায়িত্বে এসেছিলেন। ঢাকার বাইরেও কিছু খেলা হয়েছে, প্রথমবারের মতো জেলাগুলো পেয়েছে কিছু আর্থিক প্রণোদনাও।
সালাউদ্দিন চেষ্টা করেছেন, প্রথম মেয়াদে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মেজর জেনারেল আমিন আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে নতুন প্রশাসকের ভূমিকায় মঞ্চে আগমন। সেবার হারুনুর রশিদ, বাদল রায়রা তাঁর বিপক্ষে ছিলেন। সেই বৈরী পরিবেশের উজান ঠেলে লক্ষ্যে পৌঁছান সালাউদ্দিন। দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠক আবদুর রহিম সভাপতি পদে দাঁড়ালেও পরে প্রত্যাহার করলে সালাউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান।
এবার চেনাজানা ও শীর্ষ সংগঠকেরা বেশির ভাগই তাঁর পক্ষে। তবে বিপক্ষে চলে গেছেন একসময় তাঁরই বন্ধু মনজুর কাদের। সালাউদ্দিন প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ জামাল ধানমন্ডি নাম ধারণ করা ধানমন্ডি ক্লাবকে প্রিমিয়ার লিগে তুলে আনেন। সেই ক্লাবের সভাপতি কাদেরই এবার বাঁচাও ফুটবলের ব্যানারে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছেন কামরুল আশরাফকে।প্রার্থী তালিকাফুটবল অঙ্গনে নামটি উচ্চারিত হচ্ছে আসলে বাফুফের এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র কেনার দিন ১৮ এপ্রিল থেকে। এর আগে ফুটবল তো বটেই, কখনোই তাঁর নাম শোনা যায়নি অন্য কোনো খেলায়ও। এই অঙ্গনে তিনি নতুন মুখ। এই কদিনে তাঁর কথাবার্তায়ও এমন কিছু বেরিয়ে আসেনি, যা শুনে আলাদা কিছু মনে হতে পারে।
বরং জানা কথাবার্তাই তাঁর মুখে শোনা গেছে। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ সম্ভবত তৃণমূল, সবাই তৃণমূলে যাওয়ার কথা বলেন। বাঁচাও ফুটবল পরিষদের প্রার্থী হিসেবে কামরুলও একই কথা বলেছেন, ‘নির্বাচিত হলে জেলার দিকেই বেশি নজর দেব। খেলোয়াড় তৈরি করব, জেলা থেকে ফুটবলার আনব।’
কামরুলের কথাবার্তায় বারবারই আসে সার প্রসঙ্গ। সারা দেশে সারের ডিলারদের ফুটবল উন্নয়নে কাজে লাগাতে চান। সালাউদ্দিনও দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে চলে আসা বিভিন্ন আয়োজনের ধারাবাহিকতা রাখাসহ একাডেমিকে শক্তিশালী করে অনেক কিছুই করার লক্ষ্য তাঁর।
শুরুর দিকে নির্বাচনী মাঠে একটু চাপে থাকলেও যত দিন গড়িয়েছে, সালাউদ্দিন পরিষদ যেন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নির্বাচনী মাঠে ফোনে হুমকি-ধমকির জেরে অনুষ্ঠান করতে না পারার ব্যাপারটা সালাউদ্দিনের জন্য শাপে বরই হয়েছে। গতকাল নির্বাচন নিয়ে বলছিলেন, ‘আমি যেখানেই যাচ্ছি, সমর্থন পাচ্ছি। কাউন্সিলরসহ সবাই বলছেন আমার পাশে থাকবেন। আমি তো ফুটবলেরই লোক।’
সভাপতি পদ নিয়ে এত কথা হচ্ছে যে মনে হতে পারে শুধু এই পদেই বুঝি ভোট হচ্ছে। আসলে সবার নজরটা এদিকেই। তাই প্রায় দুই ডজন সাবেক ফুটবলার এই নির্বাচন করলেও ভোটের মঞ্চে হইচই নেই তাঁদের নিয়ে। জাতীয় ফুটবল ফেডারেশনটা সভাপতি শাসিত, তাই সভাপতির ওপরই সব আলো।
সেই আলো সরে গেলে ফুটবল অঙ্গনকেই চিরতরে বিদায় দিতে পারেন সালাউদ্দিন। তাঁর সমর্থকেরা সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন ১৩৪ জন ভোটারের ওপর। টাকা ওড়াউড়ির কথা শোনা যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে আছে শঙ্কাও। তবে সব শঙ্কা আর প্রলোভন এড়িয়ে যোগ্য প্রার্থীদেরই কাউন্সিলররা নির্বাচিত করবেন, এটিই ফুটবল অঙ্গনের চাওয়া।
এক নজরে
সভাপতি প্রার্থী
৪ জন, ২ জন নিষ্ক্রিয় (১টি পদে)
সহসভাপতি প্রার্থী
১০ জন
(৪টি পদে)
সদস্য প্রার্থী
৩২ জন
(১৫টি পদে)
ভোটার
জেলার ভোটার: ৬৭
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়: ৬
শিক্ষা বোর্ড: ৫
রেফারি অ্যাসোসিয়েশন: ১
কোচেস অ্যাসোসিয়েশন: ১
মহিলা ক্রীড়া সংস্থা: ১
ক্লাব: ৫৩
মোট: ১৩৪ ভোট