ছেলেদের বিশ্বকাপের ডামাডোলে একটা ব্যাপার চোখ এড়িয়ে গিয়ে থাকতে পারে অনেকেরই। মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ৭২ রানে হারের পর বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক জাহানারা আলম বলেছিলেন, ৯১ রান করেই নাকি তাঁরা অনেক খুশি।
প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা ও নিজেদের সামর্থ্য বিবেচনা করেই হয়তো বেঙ্গালুরুতে কথাটা বলেছিলেন জাহানারা। কিন্তু পাকিস্তান সফর ও থাইল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে মেয়েদের দলের ম্যানেজার শফিকুল হক যেতে চান আরও গভীরে। গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য তিনি দায়ী করেছেন মহিলা দলের কোচ জানাক গামাগিকে। ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে দায়িত্বে আছেন তিনি। শফিকুল হক প্রশ্ন তুলেছেন বিসিবির মহিলা উইং-প্রধান এম এ আউয়াল চৌধুরীর যোগ্যতা ও উইংয়ের পেশাদারি নিয়েও।
২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর রীতিমতো উড়ছিল বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট। স্বপ্ন দেখছিল নতুন দিনের। কিন্তু বছর পাঁচেকের মধ্যেই সেই স্বপ্ন বিবর্ণ। এখন পর্যন্ত ১৮টি ওয়ানডে খেলে চার জয় ও ৩০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাঁচ জয়ের সবই ২০১৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে পাওয়া। ওই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত ৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে জাহানারা-সালমাদের জয় নেই একটিও। দুটি ওয়ানডে খেলেও হার দুটিতেই।
জাহানারার ওই বক্তব্যকে তাই শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া মনে করেন না জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ম্যানেজার শফিকুল হক। নারী ক্রিকেট দলকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর দাবি, নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে মেয়েদের মনে ওই অদ্ভুত ধারণাটা গেঁথে দিয়েছেন আসলে কোচ জানাক গামাগিই।
‘কোচের লক্ষ্যই থাকে ৯৫ থেকে ১০৫ রান করা। প্রতিটি ম্যাচে উইকেট থেকে যায়, কিন্তু রান হয় কম। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হাতে যখন ৫ উইকেট থাকে, ১৫-১৬ ওভারের পর আক্রমণাত্মক হয়ে ১২০-১২৫ রান করার চেষ্টা আমরা কেন করি না? ১২৫-১৩০ হলে আমরা অনেক দলকেই হারিয়ে দিতে পারি’—বলছিলেন শফিকুল হক। শ্রীলঙ্কান কোচ গামাগি সম্পর্কে তাঁর চূড়ান্ত মূল্যায়ন, ‘এই কোচ কোনো কাজের নয়। তাঁকে সরিয়ে দেওয়া উচিত।’ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ নারী দলের প্রধান কোচ হিসেবে স্থানীয় কাউকেই নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে শফিকুল হক। সম্ভাব্য দুজনের নামও বললেন—মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও মঞ্জুরুল ইসলাম।
বাংলাদেশের মেয়েদের দুর্বলতা ব্যাটিংয়েই বেশি। তবু দলের প্রধান কোচ কেন সাবেক এক পেসার, এ নিয়েও প্রশ্ন শফিকুলের, ‘পাকিস্তান থেকে এসে রিপোর্টে লিখেছিলাম দলে ব্যাটিং কোচ দরকার। আমাদের মেয়েরা তুলে মারতে পারে না। একটা বল কীভাবে গ্যাপে খেলতে হবে, কীভাবে সামনে ফেলে সিঙ্গেল নেবে, এগুলোও তো কোচের শেখানোর কথা।’
দলের সঙ্গে দুটি সফর করে কোচের আরও কিছু দুর্বলতা চোখে পড়েছে তাঁর। ব্যাটারদের জোরে মারার সামর্থ্য কম হলেও গামাগি নাকি এই দুর্বলতা নিয়ে কোনো কাজই করছেন না। উন্নতি আনার চেষ্টা হচ্ছে না রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও, ‘১ রানকে কীভাবে ২ রান বানাতে হবে, ব্যাটটা কোন হাতে থাকলে দুটি সেকেন্ড বাঁচবে, ব্যাটসম্যান কি দৌড়ে বেশি দূর চলে যাচ্ছে কি না, ফিল্ডার ডানহাতি না বাঁহাতি…এসবেও চোখ রাখতে হবে। কোচকে এসবও শেখাতে হবে।’
মাঠের বাইরেও মেয়েদের ক্রিকেটটা ঠিকঠাক চলছে না বলেই মনে হচ্ছে শফিকুল হকের। কেন মেয়েরা ক্রীড়াপল্লীর মতো জায়গায় থাকবে, কেন তাদের জন্য আলাদা মাঠ নেই—এসব প্রশ্ন তুলে তাঁর অভিযোগ, ‘মহিলা উইংয়ের কোনো পেশাদারি নেই।’ উইং-প্রধান এম এ আউয়াল চৌধুরী সম্পর্কে তো সরাসরিই বলে দিলেন, ‘তাঁর কোনো ক্রিকেটজ্ঞান নেই। আমি মনে করি না মহিলা উইংয়ের প্রধান হিসেবে তিনি যোগ্য।’
সব দেখেশুনে নারী ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির তেমন উচ্চাশা নেই বলেই মনে হচ্ছে শফিকুল হকের। যেটুকু আশার বাতি জ্বলছে, সেটা খেলোয়াড়দের কল্যাণেই। ভালো খেলার চেষ্টা দেখেছেন সবার মধ্যে। আর দেখেছেন শৃঙ্খলা, ‘লাঞ্চ ও বাসে দেরি করে আসলে ৩ ডলার ফাইন করার নিয়ম করেছিলাম আমি। কিন্তু কোনো দিন কেউ দেরি করেনি।’