আগে কখনো এভাবে বক্তব্য রাখেননি। কারও বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেননি। কিন্তু কালকের কাজী সালাউদ্দিন অন্য এক মানুষ। মাইক্রোফোনের সামনে ক্ষোভ-বেদনামিশ্রিত কণ্ঠে বারবার বলতে থাকেন, ‘আমার পরিবার কাউকে গালি দিতে শেখায়নি। তাই কাউকে গালি দেব না। কিন্তু আজ কিছু কথা আমাকে বলতেই হবে।’
সেই কথা বলতে বাফুফের নির্বাহী পরিষদ নিয়ে এলেন বাফুফে ভবনের সভাকক্ষে। কণ্ঠে ক্ষোভের আগুন। লক্ষ্যবস্তু তাঁর বিরোধী পক্ষ, যাঁরা ৩০ এপ্রিল বাফুফের নির্বাচন সামনে রেখে সালাউদ্দিন ও বাফুফের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ এনেছেন নানা অভিযোগ। সর্বশেষ গত পরশু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের কাছে গিয়ে ওই পক্ষের নানা অভিযোগের পর সালাউদ্দিনের ভাষায়, ‘আর চুপ থাকতে পারলাম না।’
বিরোধী পক্ষের অন্যতম স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুর অভিযোগ, ফুটবলে দেদার লুটপাট চলছে। সালাউদ্দিনের সময় ফুটবলে বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। এসব অভিযোগ সালাউদ্দিন খণ্ডন করেছেন। পিন্টু, গোলাম সারোয়ার টিপু, শামসুল আলম মঞ্জুর নাম উল্লেখ করে তাঁদের নানা সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, আগের কিছু ঘটনা তুলে এনে এই খেলোয়াড়দের সম্পর্কে নানা কথাও বলেন সালাউদ্দিন।
বাফুফে ভবন ছিল বেশ সরগরম। ভিড়ের মধ্যে ছিলেন সালাউদ্দিনের কন্যা কাজী সারাজিনও। সংবাদ সম্মেলনকক্ষে চুপচাপ পেছনে এসে দাঁড়ানো সারাজিনকে দেখিয়ে সালাউদ্দিন বললেন, ‘আমি নাকি সকালে ফেডারেশনে আসি বাজার করার জন্য। অথচ আজ সন্ধ্যায় আমার কন্যা এক শ কোটি টাকার একটা ব্যবসায়িক চুক্তি করবে। সেই আমাকে বলা হচ্ছে, আমি নাকি অনিয়ম করেছি।’
গত চার বছরে বাফুফের কর্মকাণ্ড নিয়ে ২৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডের প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে এলেন সংবাদ সম্মেলনে। উদ্দেশ্য এটা দেখানো যে, তাঁর সময়ে ফুটবলে কাজ হয়েছে অনেক। সঙ্গে ছিলেন সালাম মুর্শেদী, বাদল রায়সহ নির্বাহী কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই। বাফুফের অনেক কাউন্সিলরও উপস্থিত থাকায় পরিবেশটা হয়ে ওঠে সরগরম।
কথা বলতে চেয়েছিলেন ১০ মিনিট। সেটি হয়ে গেল ৩২ মিনিট। এ সময় আবেগরুদ্ধও হয়ে পড়লেন সালাউদ্দিন। সেই আবেগের মধ্যেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে তাদের, তাহলে যেকোনো শাস্তি মেনে নেব। এমনকি ১০ বছর জেল দিলেও মাথা পেতে নেব।’
কিন্তু অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে অভিযোগকারীদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন। সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, তাঁর এমন কোনো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নেই, যেটিতে ফিফা-এএফসির অনুদানের টাকা জমা হয়। বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়েই দিলেন, ‘ফিফা-এএফসি থেকে বছরে আড়াই লাখ ডলার করে আসে। ফেডারেশনের অ্যাকাউন্ট ছাড়া এই টাকা অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগই নেই। অথচ বলা হচ্ছে, এসব নাকি আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা হয়, এটা নির্জলা মিথ্যা।’
দিলেন একটা তথ্যও, মাস তিনেক আগে ফিফার লোকজন এসে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছে। সেই নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফিফার অনুদানের পরবর্তী কিস্তি ছাড় করা হয়েছে বাফুফেকে। ফিফার অনুদান খরচে অনিয়ম পেলে পরের ধাপের বরাদ্দ আটকে যেত বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন।
তাঁকে ‘গালাগাল’ করার ভাষা নিয়েও সালাউদ্দিনের ক্ষোভ। তবে নিজে পাল্টা জবাব দিতে চান না, ‘আমি তো গন্ডগোল করতে আসিনি ফুটবলে। আমি চোর নই, ভিক্ষা করে টাকা আনি।’ চাচার সঙ্গে একই বছরে (১৯৯৬) তাঁর স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিলেন, ‘এতেই বোঝা যায় আমি কোন পরিবার থেকে এসেছি।’
এই অঞ্চলে ফিফা-এএফসির রথী-মহারথীরা দুর্নীতির অভিযোগে ধরা পড়েছেন। সালাউদ্দিন বলছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ধরা পড়তাম নিশ্চয়ই।’ যুব ফুটবল নিয়ে দেশে কোনো কাজ হয়নি, বিরোধীদের এমন অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন। কাজ না হলে অনূর্ধ্ব-১৬ দল সাফ চ্যাম্পিয়ন কীভাবে হলো সেই প্রশ্নও তাঁর।
ব্যর্থতা মানলেন শুধু জাতীয় দল নিয়ে, ‘হ্যাঁ, এই জায়গায় অভিযোগ আমি মেনে নিচ্ছি।’ তবে সাংগঠনিকভাবে সফলতা দাবি করেছেন। তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে জাতীয় দল নিয়ে পরিকল্পনা বদলানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এটা তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারও। জাতীয় দলের জন্য বিদেশি পরামর্শকও নিয়োগের কথা বললেন সবকিছুর আগে।
শেখ জামাল ক্লাবসহ আর কেউ নিয়ম না মানলে ছাড় না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সবশেষে বিরোধীদের নির্বাচনে আসার আমন্ত্রণ জানালেন, আর বললেন বাফুফে সভাপতি পদে এটিই তাঁর শেষ নির্বাচন।
বিষয়:
খেলা দেশের ফুটবল