জিনেদিন জিদান বলছেন, রিয়ালের এই হার এল ক্লাসিকো জয়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে না পারার ফল। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ভলফসবুর্গের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে যাওয়াটাকে বেশির ভাগ রিয়াল সমর্থকই ব্যাখ্যার ছকে আনতে পারছেন না। এটা কীভাবে সম্ভব?
অভিজ্ঞতা, খেলোয়াড়ি সামর্থ্য—সবকিছুতেই তো ভলফসবুর্গের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে জিনেদিন জিদানের দল। তারপরও এই হার! ইউরোপ-সেরা প্রতিযোগিতার ইতিহাসে ৩২ বার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে ২৬ বারই সফল রিয়াল মাদ্রিদ এখন শেষ আট থেকেই বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। টিকে থাকতে হলে ঘরের মাঠে ফিরতি ম্যাচে ভলফসবুর্গের বিপক্ষে জিততে হবে ৩ গোলের ব্যবধানে। সেটা সম্ভব কি না সময়ই বলবে। কিছুদিন আগেই বার্সেলোনার ৩৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডে আঁচড় বসানো রিয়ালের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব মনে করছেন অনেকেই। কিন্তু কাজটা খুব সহজ নয় বলেই যত শঙ্কা।
এই ম্যাচের আগে রিয়ালের সঙ্গী যদি ‘আত্মবিশ্বাস’ হয়, তাহলে ভলফসবুর্গের সঙ্গী ছিল শঙ্কা—বুন্দেসলিগার শেষ তিনটি ম্যাচে যে যে জয়ের দেখা পায়নি দলটি। কিন্তু এদিন মাঠে সবকিছুই হয়েছে উল্টো। শেষ পর্যন্ত রিয়ালের চোখে চোখ রেখেই দারুণ এই জয় তুলে নিয়েছে জার্মান ক্লাবটি।
ম্যাচের শুরুটা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ভলফসবুর্গের জালে বলও পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু অফসাইডের কারণে ওটা গোল হয়নি। একটু পরে গ্যারেথ বেল পেনাল্টির জোরালো আবেদন করেছিলেন, রেফারি সেটিও নাকচ করে দেন। বেলের সতীর্থ করিম বেনজেমাকে ‘খলনায়ক’ উপাধি দেওয়া যেতে পারে। ভলফসবুর্গের গোলরক্ষককে একা পেয়েও যে গোল করতে পারেননি।
ম্যাচের ১৭ মিনিটে আসে ভলফসবুর্গের আঘাত। আন্দ্রে শুরলে বল নিয়ে রিয়ালের রক্ষণসীমায় ঢুকে পড়লে তাঁকে ফেলে দেন কাসেমিরো। পেনাল্টি থেকে সহজেই লক্ষ্যভেদ করলেন রিকার্ডো রদ্রিগেজ। এই পেনাল্টি গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের অপরাজিত থাকার স্বপ্নযাত্রায় ইতি ঘটে যায়।
ভলফসবুর্গ রিয়ালকে দ্বিতীয়বার আঘাত করতে খুব বেশি সময় নেয়নি। ডানপ্রান্ত থেকে ব্রুনো হেনরিকের পাস ধরে রিয়াল শিবিরকে স্তব্ধ করে দেন ম্যাক্সিমিলিয়ান আর্নল্ড।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে বেশ এলোমেলো হয়ে পড়ে রিয়াল। প্রথমার্ধের শেষ দিকে বেনজেমা চোট পেয়ে মাঠ ত্যাগ করলে তাদের আক্রমণের মাত্রা অনেকটাই কমে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের পুরো সময়টা কোনো দলই সেভাবে চোখ কাড়া কিছু করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে রোনালদোর একটি সুযোগ ব্যর্থ হয়ে গেলে রিয়ালের প্রত্যাশার শেষ দেউটিও নিভে যায়।
ম্যাচ শেষে দলের ওপর বিরক্তিই প্রকাশ করেছে রিয়াল কোচ জিদান, ‘খেলার প্রথম থেকেই খেলায় একাগ্রতা ও তীক্ষ্ণতার অভাব ছিল আমার দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। এমনটা হলে যা হয়, সেটাই হয়েছে। আমরা শুরুতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছি।’
বার্সেলোনার বিপক্ষে ‘এল ক্লাসিকো’ জয়টা কোনো কাজে এল না দেখেই রাজ্যের আফসোস জিদানের, ‘আমরা বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচটি যেভাবে খেলেছি, আজকের ম্যাচটাও ঠিক সেভাবেই খেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথমার্ধের কিছু ভুল আমাদের ডুবিয়ে দিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের এল ক্লাসিকো জয়ের মোহাচ্ছন্নতাই আমাদের ক্ষতির কারণ হল।’ সূত্র: এএফপি।