ভারতীয় উপমহাদেশে এসে তাদের তালগোল পাকিয়ে ফেলার নজির খুঁজতে খুব বেশি পেছনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে হওয়া আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে যথেষ্ট। সেবার সন্ধ্যার শিশিরে যাতে নাকাল হতে না হয়, সেজন্য ইংল্যান্ডের অনুশীলন মানেই ছিল ভেজা বলে ব্যাটিং অনুশীলন। বালতিভর্তি পানিতে ভিজিয়ে রাখা বলে অনুশীলন নজর কাড়লেও সুফল দিতে পারেনি। এমনকি নেদারল্যান্ডসের কাছেও হারা স্টুয়ার্ট ব্রডের দল সুপার টেন পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। তবে উপমহাদেশের কন্ডিশন এবং এখানকার স্পিন উপযোগী উইকেটে অনভ্যস্ত এউইন মরগানের দলও এবার ভারতে খুব ভালো কিছু করবে বলে অনুমান ছিল না। কিন্তু আগেরবারের তুমুল ব্যর্থ দলটিই এবার চরম সাফল্যের সিঁড়ির শেষ ধাপে এসে দাঁড়িয়েছে।
ক্রিকেট বিশ্বের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একেবারে নতুন এক ইংল্যান্ড। যাদের পারফরম্যান্সে এই কিছুদিন আগেও আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। বিশ্বকাপের আগেই তারা গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে ওয়ানডে সিরিজে হারা দলটি দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। এর চেয়েও বড় কথা প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ঘূর্ণিবলে খাবি খাওয়া দলটির পক্ষে ভারতে এসে এভাবে নিজেদের মেলে ধরার ব্যাপারটি কষ্ট-কল্পনাই ছিল। এ জন্য টুর্নামেন্ট পূর্ব আলোচনায় ইংল্যান্ডকে কেউ হিসাবের মধ্যে রাখার ক্ষেত্রেও ছিলেন দ্বিধাহীন।
ফলে ফাইনালে পৌঁছে যাওয়া ইংল্যান্ড চমক হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে যেন। অবশ্য এই টুর্নামেন্টের একমাত্র চমক তারাই নয়, নিউজিল্যান্ডও ছিল। ভারতের স্পিন সহায়ক উইকেটে বাজিমাত কিউইরাও করেছিল। এখানে অনেকের মতেই তাদের ইতিহাসের সেরা পেস জুটিকে বসিয়ে স্পিনার বাড়িয়ে নামা নিউজিল্যান্ড এমনকি স্পিন বিষে নীল করেছে স্বাগতিক ভারতকেও। আর স্পিন চমকেই সেমিফাইনালে পৌঁছে যাওয়া কিউইদের দৌড়ও শেষ হয়েছে ইংল্যান্ডের সামনে পড়েই। যাদের কাছে এমনকি কোনো বাধাই বাধা বলেও মনে হওয়ার কথা নয়।
টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৮৩ রান করেও ক্রিস গেইলের ৪৭ বলে করা সেঞ্চুরিতে শেষ পর্যন্ত হারের বিষাদেই ডুবেছিল। কিন্তু পরের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার ২৩০ তাড়া করে জেতা এমন ছন্দ ধরিয়ে দিয়েছে যে এর পর থেকেই বিপুল বেগে এগোতে থাকা নতুন এক ইংল্যান্ডকেই দেখা গেছে। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেও বিদায় নেওয়া ইংলিশদের সামনে এবার দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টির বিশ্বজয় করার সুযোগ। দলের সেরা ব্যাটসম্যান জো রুটের কাছে তো এটি স্বপ্নপূরণের মতো একটি ব্যাপারই, ‘শৈশব থেকে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার সুযোগ পাওয়ার স্বপ্নই তো দেখে এসেছি!’
সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হচ্ছে। তবে স্বপ্নটি চ্যাম্পিয়ন হওয়া পর্যন্তও নিশ্চিতভাবেই বিস্তৃতি পেয়েছে। রুট সতীর্থদের চোখেমুখে সেই সাফল্য-তৃষ্ণাও মূর্ত হয়ে উঠতে দেখেছেন, ‘গত কয়েক দিন থেকেই ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে টিম বাস—সবখানেই আমি ছেলেদের লক্ষ করেছি। সবার চোখমুখই বলে দিচ্ছিল যে ওরা কতটা রোমাঞ্চিত। রবিবারের ফাইনাল খেলতে মাঠে নেমে পড়তে যেন আর তরই সইছে না ওদের।’ নতুন ইংল্যান্ড শেষটাও শিরোপা দিয়েই টানতে চাইবে।