ইংল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার দিয়ে শুরু, এরপর এশিয়া কাপেও ব্যর্থ। কফিনে শেষ পেরেক ঠুকল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সেখানে গ্রুপ পর্বের তিনটিতেই হার। পাকিস্তান ক্রিকেটে তোলপাড় শুরু হয়ে যাওয়ার জন্য এটাই তো যথেষ্ট। পাকিস্তানে ফিরতে না ফিরতেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়েছে কোচ ওয়াকার ইউনিস ও ম্যানেজার ইন্তিখাব আলমকে।
দুই প্রতিবেদনেই দারুণ মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। শহীদ আফ্রিদির অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কোচ-ম্যানেজার দুজনই। আফ্রিদি প্রসঙ্গে কেউই তাঁদের বিরক্তি লুকাননি। ওয়াকার বলেই দিয়েছেন, ‘ব্যাটিং, বোলিং কিংবা নেতৃত্ব কোনো কিছুতেই আফ্রিদি ভালো না। কিন্তু আমার কথা কানেই তোলা হয়নি। মাঠে তার বাজে সিদ্ধান্তই আমাদের ডুবিয়েছে।’ ইন্তিখাব আফ্রিদি প্রসঙ্গে আরও কঠোর, ‘ভারতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে, দলের সবাই ছিল কঠোর নজরদারির মাঝে। এতেই যথেষ্ট চাপ ছিল। এর চেয়েও হতাশাজনক ছিল অধিনায়কত্ব, তা-ও এমন একজন, যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ বছর কাটানোর পরও নির্বোধের মতো নেতৃত্ব দিয়েছে।’
এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফ্রিদির অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ম্যাচে আনোয়ার আলীকে খেলানো, বিশ্বকাপে ভারত ম্যাচে আফ্রিদির নিজে তিনে নামা, হাফিজ ও সরফরাজকে পরে নামানো—সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ভারতে পৌঁছে, ‘পাকিস্তানের চেয়ে এখানে বেশি ভালোবাসা পাই’—মন্তব্যের জন্যও আফ্রিদির ওপর চটেছেন ইন্তিখাব। আহমেদ শেহজাদ ও উমর আকমলের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কোচ ওয়াকারের প্রতিবেদনেও এসেছে প্রসঙ্গটি, ‘আগের সফরেই যাদের বাদ দেওয়া হলো, পরের সফরে তারা দলে আসে কীভাবে! মিডিয়ার চাপে আপনি দল নির্বাচন করতে পারেন না।’
ইন্তিখাব অবশ্য নিজের প্রতিবেদনে শুধু ব্যর্থতার কারণ খুঁজেই বের করেননি, এর থেকে পরিত্রাণের উপায়ও খুঁজেছেন। ভবিষ্যতে পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য দুটি পরামর্শ দিয়েছেন:
১. দল নির্বাচনে একটি মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া উচিত, দলে আসতে হলে যা থাকতেই হবে (খেলোয়াড়ের ফর্ম, পরিসংখ্যান, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, সহযোগিতার মনোভাব—সবকিছুই বিবেচনায় থাকবে)।
২. দলের ফিটনেস ভালো করার জন্য ইংল্যান্ড সফরের আগ পর্যন্ত ট্রেনিং ক্যাম্প করা উচিত, যাতে দলের ফিটনেস ও ফিল্ডিংয়ে উন্নতি আসে।
ইন্তিখাব ও ওয়াকারের প্রতিবেদন দুটি জমা দেওয়া হয়েছিল তদন্ত কমিটির কাছে। টেস্ট অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক ও ইউনিস খানও আছেন এই কমিটিতে। কমিটি আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দিয়েছে আফ্রিদিকে। পাকিস্তান বোর্ডের এক সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু বিবেচনা করে এই কমিটি নাকি ইতিমধ্যে পিসিবিকে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। সেই অনুযায়ী আফ্রিদির অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়াই শুধু নয়, দল থেকেই বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান সরফরাজ আহমেদকে অধিনায়ক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটি অবশ্য এখানেই থামেনি, কোচ ওয়াকারকেও ছাঁটাই এবং একাধিক খেলোয়াড়কে বহিষ্কার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট তাহলে আবারও টালমাটাল!