বিরাট কোহলি পারলেন, পারল না তাঁর দল। ক্রিস গেইল পারলেন না, পারল তাঁর দল। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেমিফাইনাল দ্বৈরথে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ক্রিকেট দেবতা একজনকে ব্যক্তিগতভাবে খুশি করেও পোড়ালেন হতাশার আগুনে। আর আরেকজনের ব্যক্তিগত ব্যর্থতা জুড়িয়ে দিলেন ফাইনালে ওঠার আনন্দে। মুম্বাইয়ে তাই ক্যারিবীয়দের উৎসবে গ্যালারিতে লজ্জায় মুখ লুকালেন শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে বলিউড অভিনেতা অনিল কাপুর।
ক্যারিবিয়ানদের উল্লাস একটু বেশিই যেন। ছেলেদের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মেয়েরাও যে নাম লিখিয়েছে মহিলা বিশ্ব টি-টোয়েন্টির ফাইনালে। ম্যাচ শেষে ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জেরেকারের সঙ্গে সেই আনন্দটাও ভাগাভাগি করে গেলেন অধিনায়ক ড্যারেন সামি।
একেই বলে ভাগ্য। একাদশে তো দূরে থাক, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্ব টি-টোয়েন্টির স্কোয়াডেও জায়গা হয়নি লেন্ডল সিমন্সের। সেই তিনিই কিনা উড়ে এসে ছুড়ি বসিয়ে দিলেন ভারতীয়দের হৃদয়ে! ভারতীয়দের অনেকের এখন মনে হতেই পারে কেন চোটে পড়লেন আন্দ্রে ফ্লেচার! এই ব্যাটসম্যানের চোটের কারণেই যে ডাক পড়ে সিমন্সের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে মুম্বাইয়ে উড়ে এসে একাদশেও মিলে যায় সুযোগ। আর সেটা কি চমত্কারভাবেই না কাজে লাগালেন এই ব্যাটসম্যান। ৫১ বলে হার না মানা ৮২ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে ছাড়লেন মাঠ। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে না উঠলে কী হয়! সেই পুরস্কার নিতে এসেই তিনি অনুভূতি ভাগাভাগি করলেন এভাবে, ‘ফ্লাইটের পুরোটা সময় ঘুমে কাটিয়েছি। আফগানিস্তানের ম্যাচের পর ফোন পেয়েছিলাম। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আমি ফিট কি না…বললাম, হ্যাঁ, ওরা (টিম ম্যানেজমেন্ট) বলল, চলে এসো।’
সিমন্সের ডাক পাওয়ার বড় কারণ সম্ভবত মুম্বাইয়ের মাঠে খেলা বলে। আইপিএলে ওয়াংখেড়ে যে তাঁর ঘরের মাঠ। সেই মাঠেই নিজেকে প্রমাণ করতে পেরে ভীষণ খুশি এই ব্যাটসম্যান, ‘মুম্বাইয়ের হয়ে যেহেতু খেলি তাই এই মাঠটা আমার পছন্দের। খুব উপভোগ করি এখানকার খেলা। আমার মনে হয় এটা আমার অন্যতম সেরা ইনিংস। ভীষণ খুশি ভক্তদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে।’ শুধু হঠাৎ করে দলে সুযোগ পাওয়াই নয়, সেমিফাইনালে দু-দুবার জীবন পেয়েছেন নো বল ভাগ্যে। আরেকবার বেঁচে গেছেন রবীন্দ্র জাদেজার পা সীমানা ছুঁয়ে যাওয়ায়। নিজেকে তাই সৌভাগ্যবান মনে করাটা স্বাভাবিক সিমন্সের, ‘তিনটি সুযোগ পেয়েছিলাম। দুটো নো বল এবং একবার ছক্কা হয়ে যাওয়ায়। সেটা পুরোপুরি তুলে নিয়েছি। অবশ্যই ভাগ্যের ছোঁয়া ছিল।’
১৯২ রান, সেমিফাইনালের উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচে নিঃসন্দেহে বড় স্কোর। এর পরও কিনা সামি বলছেন ভারত ১০ রান কম করেছিল, ‘ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয় পাওয়ায় অবশ্যই বিশাল এক ধাপ ফেললাম। দলের সবার প্রশংসা করতে হবে। বিরতির সময় আমরা জানতাম ওরা ১০ রান কম করেছে।’ ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি হারের কারণ হিসেবে ‘১০ রান কম’ করার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন প্রসঙ্গ একটু অন্য দিকে ঘুরিয়ে, ‘স্পিনাররা সুবিধা করতে পারেনি। কন্ডিশন খুব কঠিন ছিল। গোটা ম্যাচে একমাত্র যে বিষয়টি নিয়ে আমি হতাশ, সেটা হলো দুটো নো বল। নইলে ছেলেরা সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলটির কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা টুইটারে লিখেছেন, ‘অসাধারণ, অসাধারণ, অসাধারণ! শাবাশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।’ গ্লেন ম্যাকগ্রা আবার লিখেছেন, ‘কী খেলাটাই না হলো! এমনটা আমি কখনো দেখিনি।’ আর গ্যালারিতে বসে ভারতের হতাশাজনক হার দেখা টেন্ডুলকারের টুইট, ‘দুর্ভাগ্য ছেলেদের। ভালো একটা ম্যাচ ছিল, দারুণ লড়াই হয়েছে। ফাইনালের জন্য শুভকামনা রইল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের।’