ক্রীড়া
প্রতিবেদক : সাত সকালে ঢাকার ফ্লাইট ধরার জন্য ছুটতে হয়েছে বিমানবন্দরে। তার আগে হোটেলের আরামদায়ক আলস্য ছেড়ে সেই কাকভোরে ঘুম থেকেও উঠতে হয়েছে সবাইকে। তাই গতকাল কলকাতা থেকে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় এসে পৌঁছানো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে ঘুম লেগে থাকাটা স্বাভাবিকও। অস্বাভাবিক নয় তাসকিন আহমেদকে নিয়ে বিতর্কের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে যাওয়াও। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এর ‘হ্যাংওভার’ কাটিয়ে উঠতে না পারার ব্যাপারটি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কথায়ও ধরা পড়ল বারবারই।
তাসকিনের অ্যাকশনকে অবৈধ বলে দেওয়া আইসিসির রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুফল না মিললেও তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। যা নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়ে একরকম অনাস্থাও প্রকাশ করে রেখেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষও হয়ে যাওয়ার পথে যেখানে, সেখানে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশের বোলারের অ্যাকশনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। অথচ খোলা চোখে অনেকের অ্যাকশনই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। এ কারণেই তাসকিনকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া নিয়ে আরো বেশি সন্দেহ বিসিবি সভাপতির। যা প্রকারান্তরে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণাই। কিন্তু যুদ্ধ যখন, তখন নিজ দলের সৈনিক মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই বলে কয়েকজনের মৃত্যুশোকে বেশি কাতর হয়ে গেলে আবার যুদ্ধে বিপর্যস্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। সুপার টেন পর্বের অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে হয়েছিল সেটিই। দেশে ফিরেও মাশরাফির সেটি স্বীকার করে নেওয়াতে কোনো আপত্তি নেই, ‘আমাদের জন্য ওই পরিস্থিতিটা খুব কঠিন ছিল। তাসকিন যেভাবে বোলিং করে আসছিল, তাতে আমাদের পরিকল্পনা ঠিক করাই ছিল। কিন্তু (নিষেধাজ্ঞার কারণে) পরিকল্পনা পাল্টাতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে ধাক্কা খেয়ে আমরাও আমাদের খেলাটা ধরে রাখতে পারিনি। তাই সেরা ক্রিকেটটাও খেলতে পারিনি।’
না পারার কারণ সেরা বোলারকে মিস করাই, ‘শেষ আটটি ম্যাচে শুধু বাংলাদেশের নয়, তাসকিনের ইকোনমি রেট ছিল বিশ্বেরই সেরা। সুতরাং ওর মতো খেলোয়াড়কে হারানোটা কঠিন ব্যাপার। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি ভীষণ কঠিন ছিল।’ কঠিন জেনেও দল তাসকিনকে খেলানোর জন্য নানা চেষ্টা করে গেছে বলেও জানিয়েছেন মাশরাফি। ওই সময়ের আলোচনার নানা বিষয়বস্তু এভাবেই তুলে ধরেছেন তিনি, ‘বাউন্সারেই কেবল সমস্যা ধরা পড়েছিল। ওর অন্যান্য ডেলিভারিতে যেহেতু সমস্যা পাওয়া যায়নি, তাই আমাদের মনে নানারকমের প্রশ্নই এসেছে। কোনোভাবে আমরা তাসকিনকে পেতে পারি কি না, বিসিবির কাছে তা জানতেও চেয়েছি। বাউন্সারে সমস্যা তো ওই ডেলিভারিটা না করার শর্তে আমরা ওকে খেলাতে পারি কি না, এ রকম আলোচনাও আমাদের মধ্যে হয়েছে। কিন্তু দিনের শেষে আমরা ওকে পাইনি। যে ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়া সত্যিই মুশকিলের ছিল।’ ১৯ মার্চ আরাফাত সানির পাশাপাশি তাসকিনকেও নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর তাসকিনের নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে বিসিবি। কিন্তু ভারত ম্যাচের দিন সকালে সেটি বহাল রাখার ঘোষণা আসে। সেদিনই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের জন্ম দেওয়া বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক দেশে ফেরার পরও মানতে পারছেন না তাসকিনের নিষিদ্ধ হওয়াটা, ‘নির্দিষ্ট করে বললে সানির বিষয়টি ও নিজে এবং আমরা গ্রহণ করেছি। কারণ সানিরটা যে পর্যায়ে ছিল, ও নিজেও জানে যে ওকে আবার অ্যাকশন শুধরে আসতে হবে। সানি নিজেও এর জন্য প্রস্তুত। তবে তাসকিনের বিষয়টি আমাদের জন্য পুরোপুরিই একটা ধাক্কা ছিল। শুধু আমরা নই, বাইরের লোকেরাও তো একই কথা বলেছেন। বিশেষ করে ক্রিকেট ইতিহাসের অভিজ্ঞ বোলার যাঁরা আছেন, তাঁরাও কিন্তু একমত ছিলেন যে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনে কোনো সমস্যা নেই।’ তার পরও যখন নিষেধাজ্ঞা বহাল রইল, তখন নাজমুলের মতো মাশরাফিকেও সন্দিহান হতে হয়, ‘তার পরও যেহেতু ওকে নিষিদ্ধ রাখা হলো, একটা কথা কিন্তু এখানে থেকেই যায়।’ তাঁর এই ‘একটা কথা’র মধ্যে অন্যায়, অবিচার কিংবা এ জাতীয় আরো কিছু শব্দের যেকোনোটি বসিয়ে নিতে পারেন। তাসকিন ইস্যুতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি তো এ রকমই!