ডোয়াইন ব্রাভো আউট। বিদায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের চতুর্থ ব্যাটসম্যানের। জিততে ৩৬ বলে ৩৬ রান দরকার তাদের। ২৪ রানে থাকা মারলন স্যামুয়েলসের সাথে যোগ দিলেন আন্দ্রে রাসেল। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেই আছে। লেগি ইমরান তাহিরের তখনো দুই ওভার বাকি। দুটি ওভার ভালোয় ভালোয় কাটালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপরের হিসেবটা ২৪ বলে ২৪ রানের। ১৭তম ওভারে জোড়া আঘাত তাহিরের। তুলে নিলেন রাসেল (৪) ও অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির (০) উইকেট। হিসেব তারপর ১৮ বলে ২৩ রানের। এই নাগপুরে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে কি হয়েছিল? ১২৬ রান করেও জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে কি হয়েছিল? শেষ ওভারের নাটকে শেষ ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে ১ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। তাহলে ১২২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকাও তো জিততে পারে! ১২ বলে ২০ রান কি হবে ক্যারিবিয়ানদের? টানটান উত্তেজনা নাগপুরে।
ক্রিস মরিসের ১৯তম ওভার। স্যামুয়েলস ২টি বাউন্ডারি মারলেন। প্রথম ৪ বলে ১০ রান। পঞ্চম বলে উড়িয়ে মেরে মাহমুদ উল্লাহ-মুশফিকুর রহিমের কথা মনে করিয়ে দিলেন স্যামুয়েলস। ৪৪ বলে ৪৪ রানের দারুণ সংগ্রামী ইনিংসের ওখানেই সমাপ্তী। ক্যারিবিয়ান শিবিরেও তখন হাসির বদলে টেনশন! শেষ ওভার কাগিসো রাবাদার। ৯ রান চাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দ্বিতীয় বলে কার্লোস ব্রাথওয়েটের ছক্কায় বল গ্যালারিতে! ৪ বলে ৩ রান। ওয়াইড! ৪ বলে ২ রান। পরের বলে ১ রান। টাই! ৩ বলে ১ চাই। নতুন ব্যাটসম্যান দিনেশ রামদিন আলাপ করেন ব্রাথওয়েটের সাথে। যে আলাপটা মাহমুদ উল্লাহ-মুশফিক করেননি। পয়েন্টের ওপর দিয়ে মারলেন রামদিন। হাশিম আমলা ধরতে পারলেন না। ১ বলে ১ রানে অপরাজিত রামদিনের। ওটাই জয়সূচক রান। ব্রাথওয়েট অপরাজিত ১০ রানে। ২ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটের জয় নিয়ে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ ম্যাচের দুটিতে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ চারে ওটা অনিশ্চয়তায়।
টস হেরে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১২২ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শঙ্কার পথ পেরিয়ে ১৯.৪ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৩ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের। স্যামুয়েলস ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
দারুণ বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ক্যারিবিয়ানদের পথটাকে কঠিন করে তুলেছিল প্রোটিয়ারা। ইনিংসের পঞ্চম বলেই তো টি-টোয়েন্টির রাজা ক্রিস গেইলকে (৪) তুলে নিলেন রাবাদা। আগের ম্যাচের হিরো আন্দ্রে ফ্লেচারও (১১) ফিরলেন ৩৬ রানের সময়। এরপর কঠিন উইকেটে পরীক্ষা দিয়েছেন জনসন চার্লস ও স্যামুয়েলস। ৩২ রানের জুটি গড়েছেন তারা ৫.৪ ওভারে। ৩৫ বলে দারুণ মূল্যবান ৩২ রান দিয়ে গেছেন চার্লস। যেটা আসলে জয়ের ভিত। এরপর টেস্ট মেজাজের মতো খেলে স্যামুয়েলস দলকে জয়ের কিনারায় নিয়ে ফিরেছিলেন। তিনি ফিরলেও চরম নাটকীয়তার শিকার হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আসলেই ক্যারিবিয়ান দলের সবাই ম্যাচ উইনার!
এর আগে ২০ রানে ৩ উইকেট, ৪৭ রানে ৫- শীর্ষ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভাগ্যিস তাদের ব্যাটিং লাইন আপে নিচের দিকে দুইজন অল রাউন্ডার ছিলেন। ওপেনার কুইন্টন ডি ককও এক প্রান্ত ধরে রাখতে পেরেছেন। তাতে শেষ পর্যন্ত এই উইকেটে লড়ার মতো কিছু পেয়েছে প্রোটিয়ারা।
প্রথম ৩ ওভারেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। প্রথমে রান আউটের খাড়ায় পড়ে বিদায় নিলেন আমলা। অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস (৯) ক্যাচ দিলেন। দীর্ঘদিন পর বল হাতে নিয়েই অফ স্পিনার গেইল তুলে নিলেন রাইলে রুসোকে (০)। ওপেনার কুইন্টন ডি কক এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে এই মড়ক লাগা দেখছিলেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স এলে ভরসা পেলেন কক। ইনিংস মেরামতের কাজে লাগলেন দুজন। কিন্তু অষ্টম ওভারে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে বল পেয়ে ডোয়াইন ব্রাভো শিকার করলেন এবি ডি ভিলিয়ার্সকে (১০)। ১ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়লো দক্ষিণ আফ্রিকা। নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে গেইল তুলে নিলেন ডেভিড মিলারকে (১)। তাকে বোল্ড করে গেইল ভাবুক ও নিরাবেগ চেহারা নিয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন! ক্যারিবিয়ানরা কতোভাবে যে বিনোদন করতে জানে!
ডি কক এরপর পেলেন ডেভিড উইজেকে। এই অল রাউন্ডারকে সঙ্গী করে লড়াইয়ে নামলেন। খুব সাবধানে খেলতে হয়েছে। তাতে খুব দ্রুত ছোটেনি রানের চাকা। অন্য প্রান্তে উইজেও ছিলেন সরব। ৭.২ ওভার ব্যাট করেছেন তারা। ষষ্ঠ উইকেটে এসেছে ৫০ রান। রাসেলের বলে বোল্ড হয়েছেন কক। ৪৬ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় করেছেন ৪৭ রান। শেষ ৫ ওভারেও তেমন রান তুলতে পারেনি প্রোটিয়ারা। এসেছে ৩১ রান। এই সময়ে ৩ উইকেট হারিয়েছে তারা। উইজে ২৬ বলে ২৮ রান করেছেন। ক্রিস মরিস ১৬ রানে ছিলেন অপরাজিত। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রাসেল, গেইল ও ব্রাভো। আসলে ক্যারিবিয়ান বোলাররা প্রতিপক্ষকে বড় রান করতে দিলেন না বলেই শেষ রক্ষা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।