আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ ছাপিয়ে অধিনায়কের ভেজা চোখ আর বুজে আসা কণ্ঠই হয়ে ওঠে বড় ঘটনা। কিন্তু ভারতীয় দলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে দেখে সেটি বোঝার উপায় কী! আবেগ এক পাশে সরিয়ে রেখে বরং সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ তাঁর কণ্ঠে।
আগেই এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির ঘটনা পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নে অবশ্য আলাদা করে দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি নেই তাঁর কথায়। যদিও তিনি দলের সহ-অধিনায়ক, যদিও এক দশক জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা সিনিয়র ক্রিকেটার। তবু নিজ থেকে কিছু করার ইঙ্গিত নেই সাকিবের কথায়, ‘এখানে সবাই পরিণত। কাউকে অনুপ্রাণিত করার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। সবচেয়ে বড় উৎসাহের জায়গা, আপনি আপনার দেশের জন্য খেলছেন। আপনার মাঠে নামা মানে দেশের জন্য কিছু একটা করার সুযোগ। একজন খেলোয়াড় সেভাবেই চেষ্টা করবে।’
তাসকিনকে হারিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি যে একেবারে ভেঙে পড়েছেন, সেটি তাঁর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনেই বোঝা গেছে। সাকিব অবশ্য এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পক্ষে, ‘অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুজন মূল খেলোয়াড়কে হারানো হতাশাজনক। তবে এখানে কিছু করার নেই। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে কালকের ম্যাচে।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের মানসিক অবস্থা নিয়েও আলাদা কিছু বলতে চাননি সাকিব। বলেছেন কেবল নিজের কথাই, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। সবার মনে কী চলছে সেটা বোঝা কঠিন। এ বিষয়ে কিছু বলাও কঠিন। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।’
অধিনায়ক মাশরাফি সেদিন তাসকিনের পাশে দাঁড়ান তরুণ পেসারের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে। ‘অবিচার’-এর উল্লেখ করেন বারবার; সম্ভাব্য শাস্তির পরোয়া করেননি। সে কারণেই তো তিনি সবার অধিনায়ক হয়ে উঠতে পেরেছেন! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তাঁর মাত্র এক ওভার বোলিং করা নিয়ে অনেক কথা উঠছে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বোলিং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েও। সেই ছোটখাটো ভুলের কথা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচের পরই তো স্বীকার করে নেন মাশরাফি। তবু কাল সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ওঠে, সিদ্ধান্তগুলো অধিনায়ক সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেন কি না। সাকিবের উত্তর, ‘ভালো প্রশ্ন। সব সময় পরামর্শ করেই হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তটা থাকে অধিনায়কের। কোনো দিন এটাতে সফল হয়, কখনো হয় না। ক্রিকেটে এটাই নিয়ম। যেদিন সফল হবে, সবাই ভালো বলবে। যেদিন হবে না, সবাই ভুল ধরা শুরু করবে।’
অধিনায়কের আসনটা এমনই কাঁটার সিংহাসন। সেটি বাইরে থেকে যেমন, দলের ভেতর থেকেও তেমনি। সাকিবের কথায় কি এর একটু আঁচ পাওয়া যায় না?
– See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sports/2016/03/23/339243#sthash.3iFINQj6.dpuf