বাংলাদেশ দলের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা আগে। পরে ভারতের। কিন্তু আশীষ নেহরা আগেই তা করে ফেলেন। পরে সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের বোলিং নিয়ে তাদের যে উপলব্ধি, তাতে মনে হতে পারে, যেন পরামর্শ করেই ঢুকেছেন। তাসকিন আহমেদের প্রশংসা থাকল সেখানে। এরপর তাসকিনবিহীন বোলিং লাইনের ভালো করার সম্ভাবনাও।
‘তাসকিনকে হারিয়েছে ওরা, কোনো সন্দেহ নেই ওদের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ বোলার ছিল। কিন্তু মুস্তাফিজ কয়েক ম্যাচ খেলেনি সাইড স্ট্রেইন নিয়ে, ও ফিরে এসেছে। আল আমিন আছে, সাকিব আল হাসান তো দারুণ অলরাউন্ডার। বোলিং গভীরতা ওদের অনেক। আমার মনে হয় না দু-একজন বোলার না থাকায় ওদের বোলিং দুর্বল হয়েছে’, আগে বলে যান নেহরা। পরে সাকিবের কথায়ও তাঁর অনুরণন, ‘তাসকিন শেষ ছয় মাস কিংবা তার বেশি সময় ধরে আমাদের হয়ে ভালো বল করছিল। সে দলের মূল খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। তবে যা হয়েছে তার মানে এই না যে সব শেষ হয়ে গেছে। সে হয়তো সামনের কয়েক ম্যাচ খেলতে পারছে না। তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি, যে দল আছে সে দল আগামীকালের ম্যাচে ভালো করতে পারবে।’
এমনিতেই টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে পারে না বাংলাদেশ। এবার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে সেই দুর্নাম ঘোচানোর আবহ তৈরি হয়েছিল। ধর্মশালার বাছাই পর্ব উতরে আরো বেশি করে। কিন্তু মূল পর্বে এসে যে ওলটপালট সব। টানা দুই হারের কারণে শুধু নয়, অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে দুই বোলারকে হারানোর ধাক্কাও তো কম নয়! সাকিব অবশ্য এখনো আশা ছাড়ছেন না, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমরা কখনোই ভালো পারফরম্যান্স করিনি। এ ব্যাপারে অনেক দিন ধরেই কথা হয়ে আসছে। অবশ্যই এটা আমাদের সুযোগ কিছু প্রমাণ করার। দুটি ম্যাচ আমরা ভালো করতে পারিনি। চেষ্টা থাকবে পরের দুই ম্যাচে এমন কিছু করি যেটা মনে রাখার মতো হয়।’
সেই দুই ম্যাচের প্রথমটি আজ ভারতের বিপক্ষে। তাদের বিপক্ষে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলায় জোর দেন সহ-অধিনায়ক, ‘ভারত খুব ভালো দল। তারা শিরোপার জন্য এখানে খেলতে এসেছে। আমরা যা করছি সেটাতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের নিয়ম ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাটিং-বোলিং করতে হবে।’ ভারতের পরিকল্পনায় আবার বড় একটি অংশজুড়ে নিশ্চিতভাবে থাকবে মুস্তাফিজুর রহমান। নেহরার দুই কূল উপচানো প্রশংসায়ও সেটি বোঝা যায়, ‘ঈশ্বর প্রদত্ত স্লোয়ার বল পেয়েছে মুস্তাফিজ। অ্যাকশন দারুণ। দারুণ সম্ভাবনাময় এক ক্রিকেটার, বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর অধিনায়ক মাশরাফি ‘ছোট ছোট ভুল’-এর কথা বলেছিলেন। সহ-অধিনায়ক সকিবও কাল জোর দেন সে জায়গায়, ‘আমরা খুব একটা যে ভুল করেছি, তা বলা যাবে না। ছোট ছোট কিছু ভুল হয়েছে। এগুলো ঠিক করতে পারলে ভালো দল হয়ে মাঠে খেলতে পারব। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমরা ১৭০-১৮০ রান করতে পারলে খেলাটা অন্য রকম হতে পারত। বোলিংটা ভালোই ছিল। ফিল্ডিংয়ে আমরা যে ধরনের অবস্থা করে আসছি এত দিন সেটা করতে পারিনি।’
আর সচরাচর যে আগ্রাসন বাংলাদেশের খেলায় দেখা যায়, সেটিও তো ছিল না সেদিন। এর পেছনে তাসকিনের জন্য আবেগের কোনো ভূমিকা দেখছেন না সাকিব, বরং শুরুতে সাফল্য না পাওয়ার কথাই বললেন, ‘আমরা আগে থেকে অনেক আগ্রাসী। আমাদের খেলার ধরনটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে থেকে অনেক ইতিবাচক চিন্তা করছি আমরা। বেশির ভাগ ম্যাচেই আমরা শুরুতে সাফল্য পাই। গত ম্যাচে ৫-৬ ওভার আমরা উইকেট পাইনি। তাতেই হয়তো শরীরী ভাষায় একটু ভিন্ন হয়ে উঠেছিল।’ এই আগ্রাসী ক্রিকেটের মতো মানসিকতায়ও পরিবর্তন এসেছে বলে দাবি সাকিবের। কারণ হিসেবে দলে এখন পারফরমারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার উল্লেখ করেন তিনি, ‘শেষ তিন-চার বছরে মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। এখন আমরা জানি কিভাবে ম্যাচ জিততে হয়। আগে হয়তো দু-তিনজন ম্যাচে ভালো খেলত। এখন পাঁচ-ছয়জন আছে, যারা প্রতিনিয়ত ভালো করে যাচ্ছে। বড় পরিবর্তন এখানেই। ঘরের মাঠে আমরা ভালো খেলেছি। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে বলেই আমরা দেশের বাইরে ভালো খেলছি।’
দেশের বাইরে সেই ভালো খেলার প্রমাণই আজ ভারতের বিপক্ষে দেওয়ার দায় বাংলাদেশের।
– See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sports/2016/03/23/339242#sthash.7Avjh0nG.dpuf