থানা হাজতে এক নারী আসামির শ্লীলতাহানির অভিযোগে সদর পিরোজপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) মাসুমুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলা দায়েরের পর থেকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বাদিসহ তার আইনজীবীকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন
সংবাদ সম্মেলনে বাদী শিমু আক্তারের আইনজীবী সালাহউদ্দিন মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, মামলা তুলে নিতে এবং শিমুর পক্ষে মামলা পরিচালনা না করতে আসামি তার লোকজন দিয়ে গত ৩ অক্টোবর মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে তিনি আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে শিমু জানান, রাত ১১টার দিকে নারী হাজতখানা থেকে তাকে বের করে ওসি মাসুমুর নিজের রুমে নিয়ে তাকে কুপ্রস্তাব দেন। এ সময় ওসি তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি জানান, তার চিৎকারে থানায় অবস্থানরত সিপাহী জায়েদাসহ অন্যরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরদিন তাদের আদালতে চালান দিলে বিচারক কারাগারে পাঠান। ঘটনার পরদিন ভোরে সদর থানার ওসি ও অন্যদের কাছে তিনি অভিযোগ করেন। গত ২৫ অক্টোবর জামিনে মুক্তির পর পুনরায় ওসি এনায়েত হোসেনের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে গত ১ অক্টোবর আদালতে মামলা করেন। এ সময় শিমু আক্তার সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক বিচার চেয়ে এবং তার ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন জানান, তাদের থানায় রাখা অবস্থায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। গ্রেপ্তার করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারী মামলা করেছেন। ওসি মাসুমুর রহমান জানান, ওই নারীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি মিথ্যা মামলা করেছেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর দুপুরে শিমু আক্তার ও তার মা খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় ওসি মাসুমুর রহমান সাদা পোষাকে চাঁদাবাজিসহ দুটি মামলায় শিমু আক্তার ও তার মাকে গাছমা দিয়ে বেঁধে টেনে হিচড়িয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হাটিয়ে থানায় নিয়ে আসেন। তবে সে সময় তার সঙ্গে কোনো নারী পুলিশ ছিল না। পথে তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন ওসি। শুধু তাই নয় শিমুর সঙ্গে থাকা দুটি মূল্যবান মোবাইল সেটও নিয়ে যান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে ওসি মাসুমুর রহমান ছেড়ে দেয়ার জন্য শিমুর মায়ের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি আত্মীয় স্বজনদের খবর দিয়ে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা এনে দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পিরোজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বাদী শিমু আক্তার, তার মা মাহামুদা বেগম ও তার আইনজীবী সালাহউদ্দিন মো. মাহাবুবুর রহমান। এর আগে, গত সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সদর উপজেলার চর লখাকাঠী গ্রামের ছালাম হাওলাদারে মেয়ে শিমু আক্তার (২৬) ওসি মাসুমুর রহমানের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৬০/১৫। পরে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।