আগে তিনি ব্যাখ্যা করতেন অন্যভাবে। দারুণ একটা ইনিংস খেলতে খেলতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়ে ফিরে এলে প্রায়ই বললেন, ‘এই শটটাই ছক্কা হয়ে গেলে অন্য রকম কথা হতো।’ এখন তামিম ইকবাল ব্যাখ্যা দেন একেবারেই অন্য। এখন তামিম যে নিজেও বুঝতে শিখেছেন। নিজেও উপলব্ধি করছেন, তাঁর নামের পাশে ৩৩টা ওয়ানডে ফিফটির অনেকগুলোই সেঞ্চুরি সংখ্যাটাকে ‘সাত’ থেকে বাড়িয়ে দিতে পারত।

২০০৭ বিশ্বকাপে ডাউন দ্য উইকেটে এসে জহির খানকে সপাটে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলাই তামিমের বিশ্বমঞ্চে নিজের আগমনবার্তা। কিন্তু এই তামিমটাই বেশি ক্ষতি করেছে তাঁর নিজের। অতি আক্রমণাত্মক তামিম এখন অনেকটাই বদলে ফেলেছেন নিজেকে। এখন তিনি ভালো বোঝেন, কোন শটটায় ছক্কা হওয়ার চেয়ে ইনিংসের অকাল–অক্কার ঝুঁকি বেশি। ভালো বোঝেন, কোন সময়ে নিতে হবে ঝুঁকি, কোন সময়ে নয়।
আফগান সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮০ রানে আউট, শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচে যখন আউট হন, তখনো ১৫ ওভারের মতো বাকি। মুহূর্তেই একটা ‘মাথা গরম’ শট আরেকটি সেঞ্চুরি-সম্ভাবনার মৃত্যু ডেকে আনল।
কাল নব্বইয়ের ঘরে যাওয়ার পর একটিও বড় শট খেলেননি। ইনিংসের দুই ছক্কার দুটিই ১০০ পেরোনোর পর। মিরওয়াইস আশরাফের এক ওভারে তিনটি চার মেরে ২৪-এ পৌঁছানোর পর তামিম কী করেছে জানেন? পরের ৫০ বলে মাত্র একটি চার মেরেছেন! তবু তাঁর নামের পাশে ৮১ বলে ৬৬।
তামিম নিজেও এখন বোঝেন, চোখধাঁধানো শট খেলে বাহবা পাওয়া যায়, কিন্তু এটা চকলেটের মতো। খেতে ভালো লাগে, লোভ লাগে। কিন্তু বেশি খেলেই বিপদ। কাল ম্যাচ শেষে তামিমও বলেছেন, ‘উইকেট শুরুতে ব্যাট করার জন্য সহজ ছিল না। বল ঘুরছিল। শুরুতেই ভাগ্য আমার পক্ষে ছিল। তারপর আমি সময় নিই। ওখান থেকে ক্রিকেটিং শট খেলার চেষ্টা করছিলাম। শেষ ম্যাচে যে ভুলটা করেছিলাম, ওটা যেন এবার না করি, সেই চেষ্টা করছিলাম।’
বড় ইনিংস খেলতে চাওয়ার এই ক্ষুধাটাই বদলে দিয়েছে তামিমকে, ‘আমি বড় ইনিংস খেলতে চাচ্ছিলাম। যখন ৫০-৬০–এ ছিলাম, তখন ব্যাটিং চালিয়ে যেতে চেয়েছি ৩৫ ওভার পর্যন্ত। এরপর কী হয় দেখব—এমনটাই পরিকল্পনা ছিল। এটাই চেষ্টা করছিলাম। সফলও হয়েছি।’
এই তামিম আসলে বেশ কিছু দিন ধরেই বদলেছেন। ওয়ানডেতে ৫০ থেকে ৬৪—এর মধ্যে আউট হয়েছেন ২২ বার। তবে গত তিন বছরে মাত্র ৫ বার, বাকি ১৭ বারই ক্যারিয়ারের শুরুর বছরগুলোয়।
কাল শেষ পর্যন্ত ১১৮ বলে ঠিক ১১৮। এর ৫৬ এসেছে বাউন্ডারি থেকে। বেশির ভাগটাই খেটে নেওয়া। এমনকি সেঞ্চুরির পরে এক ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারের পরপরই আবারও যে মারতে গিয়ে আউট হলেন, এ নিয়েও আফসোস আছে তাঁর। এই তামিম এখন এতটাই বদলে যাওয়া!
কাল বলেছেন, ‘বেশ কিছু ওভার নিয়ে আমার পরিকল্পনা ছিল। যে লেগ স্পিনারকে দুটি ছয় মেরেছিলাম, আমি ওকেই টার্গেট করেছিলাম। ঠিক করেছিলাম ওর ওভার থেকে রান তুলে নেব। কারণ, অন্যরা ভালো বল করছিল। হয়তো হিসেবে একটু ভুল হয়েছে। নবীও ভালো বল করছিল। হয়তো ওই ওভার এক-এক করে খেলে পরে অন্য কাউকে টার্গেট করে রান তুললে আরও ভালো হতো।’
২৭ বছর বয়স। এই বয়সে অনেকের ক্যারিয়ারই শুরু হয়। এখান থেকে নতুন তামিমের যাত্রা শুরু হোক!