ক্রীড়া প্রতিবেদক : খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন জেতা ম্যাচও হারত বাংলাদেশ দল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেই বাংলাদেশ যেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবারের কলাবাগান ক্রীড়া চক্র! সম্ভাবনা জাগিয়ে গতকাল আরেকটি ম্যাচ হেরেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার কলাবাগান। সম্ভাবনার ‘মৃত্যু’ ঘটেছে ফতুল্লায়। ক্রিকেট কোচিং স্কুলের প্রথম জয়ের নেশায় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠার স্বপ্ন আপাতত ভুলে যেতে হয়েছে ভিক্টোরিয়াকে। তবে পয়েন্টে শীর্ষ দুই দলের সমান হওয়ার সুযোগ রয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের। বৃষ্টির কারণে গতকাল অসমাপ্ত ম্যাচটা আজ জিতে শেষ করলেই মোহামেডান আর প্রাইম দোলেশ্বরের সমান ১০ পয়েন্ট হবে গাজীরও।
রান আউটের কৃতিত্ব যোগ করলে টানা ৪ উইকেট মোহাম্মদ শরিফের। সে তো আর নিয়ম নেই। তাই শুধু হ্যাটট্রিকই যোগ হয়েছে কাল মোহাম্মদ শরিফের নামের পাশে। তবে মিরপুরে বৃষ্টির কারণে ৩৮ ওভারে কমে আসা ম্যাচে ইনিংসের শেষ বলেও উইকেট নেওয়ায় চার শিকার ঠিকই হয়েছে তাঁর। তাতে শেখ জামাল ধানমণ্ডির করা ৯ উইকেটে ১৬৮ রানের জবাবে শরিফের গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৩ উইকেটে ৮৩ রান তুলতেই আবার বৃষ্টি নামায় ম্যাচের বাকিটুকু অনুষ্ঠিত হবে আজ। অভাবিত ব্যাটিং ভরাডুবি না ঘটলে শীর্ষে থাকা মোহামেডান ও প্রাইম দোলেশ্বরের সমান পয়েন্ট হবে গাজীর।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শেখ জামালের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। জয়রাজ শেখ ও আবদুল্লাহ আল মামুনের উদ্বোধনী জুটি ১৪ ওভারে তুলেছিল ৬২ রান। ১৩ রানের ব্যবধানে আরেকটি উইকেটের পতনেও দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না। কিন্তু হঠাৎ মুষলধারার বৃষ্টি এবং তাতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসায়ই সর্বনাশ মাহমুদ উল্লাহর দলের। আকস্মিক ওভার কমে যাওয়ায় চালিয়ে খেলতে শুরু করেন মাহমুদ। ব্যাটে-বলে হচ্ছিলও। সে মেজাজেই শরিফকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জামালের অধিনায়ক। পরের বলে গাজীর পেসারকে স্কুপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন জাবিদ হোসেন। এরপর শরিফের হ্যাটট্রিক বলটা শাফল করে খেলতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ হয়েছেন নাজমুস সাদাত। বাংলাদেশের লিস্টে ম্যাচের ইতিহাসে এটা সপ্তম হ্যাটট্রিক, শরিফের প্রথম। পরের বলে ব্যাটসম্যানের সোজা ড্রাইভ শরিফের হাতে লেগে ভেঙেছে নন স্ট্রাইকিং এন্ডের স্টাম্প, তখন ক্রিজের বাইরে থাকায় রান আউট মুক্তার আলী। ইনিংসের শেষ উইকেটটা শরিফেরই, বোল্ড করেছেন শফিউল ইসলামকে। ‘শরিফময়’ অর্ধের পর গাজীর পঞ্চম জয়ের আশা ভালোভাবেই বেঁচে আছে ওপেনার এনামুল হক ও অলক কাপালির ব্যাটে। দুজনে ক্রিজে আছেন যথাক্রমে ৩৬ ও ১৪ রানে।
ওদিকে বিকেএসপিতে আরেকবার হৃদয় ভেঙেছে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের। জয়ের জন্য ২৬৩ রানের পিছু নেওয়া দল ৩ উইকেটে ২৩৮ তুলে ফেললে ম্যাচের ফল অনুমান করাই যায়। এমনকি ব্রাদার্সের বিপক্ষে জিততে শেষ ৫ ওভারে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের দরকার ছিল মোটে ২৫ রান, হাতে ৬ উইকেট। তবু পারেনি, উল্টো ৪ বল বাকি থাকতে অল আউট হয়ে গেছে কলাবাগান। জিম্বাবুয়ের হ্যামিল্টন মাসাকাদজার সেঞ্চুরিও তাই ম্লান ব্রাদার্সের বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদের সাফল্যে। ম্যাচের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানের হাতে ম্যাচসেরার পুরস্কার গেলেও ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নাবিলই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক। বিশেষ দ্রষ্টব্যে কলাবাগানের ব্যর্থতাও ঠাঁই পাবে। ভাবা যায়, দলটির শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি! উল্লেখ্য, এ মাঠেই প্রাইম ব্যাংকের কাছেও সহজ ম্যাচ কঠিন করে হেরেছিল কলাবাগান।
লিগের পয়েন্ট টেবিল উল্টে দেওয়ার সম্ভাবনাময় ম্যাচটা ছিল অবশ্য ফতুল্লায়। ক্রিকেট কোচিং স্কুলকে হারালেই মোহামেডানকে টপকে শীর্ষে উঠে যেত ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং। সে আর হয়নি, এ মৌসুমে সিসিএসের প্রথম জয়ে ভেসে গেছে ভিক্টোরিয়ার শীর্ষারোহণের প্রথম সুযোগটি। পিনাক ঘোষ আর রাজিন সালেহর দারুণ শুরুর পর সাইফ হাসানের নজরকাড়া ফিফটিতে অল আউট হওয়ার আগে ২৫৯ রান করে সিসিএস। কিন্তু কার্যকারিতায় ব্যাটিংয়ে হেভিওয়েটের মর্যাদা পাওয়া ভিক্টোরিয়ার ব্যাটিং কাল বিপর্যস্ত সিসিএসের সালেহ আহমেদ শাওনের স্পিনে। ৭ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন সর্বশেষ যুব বিশ্বকাপ খেলা এই বাঁহাতি স্পিনার। তাতে ৪৪ বলে ফিফটি করেও বিজিত দলের অধিনায়ক নাদিফ চৌধুরী, ভিক্টোরিয়া অল আউট ১৯৯ রানেই। ম্যাচসেরা প্রত্যাশিতভাবেই সালেহ আহমেদ। উল্লেখ্য, বৃষ্টির কারণে জয়ের জন্য ৩৫ ওভারে ২৫৩ রান করতে হতো ভিক্টোরিয়াকে।