জীবনটা সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে অনেক কিছুর দিকেই খেয়াল দিতে হয়। কিন্তু প্রায় সময় তা হয়ে ওঠে না। সম্পর্কের বিষয়টাও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। মেন্টাল হেলথ অ্যাওয়ারনেস উইক উপলক্ষে নতুন এক গবেষণা পরিচালিত করে ব্রিটেনের মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন। তাতে বলা হয়, জীবনে ভালো থাকতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্ক। যারা সম্পর্কের যত্ন করেন তারা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি সুখী থাকেন।
গবেষণায় বলা হয়, এতে অংশ নেওয়া ২ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের ৪৬ শতাংশ মনে করেন, সম্পর্কে পেছনে সময় ব্যয়ের কারণে কোনো অনুতাপ থাকে না। এদের মাত্র ১১ শতাংশ নতুন বছরের দিকেই বেশি নজর দেন।
গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন মানুষকে সম্পর্কের পেছনে আরো বেশি সময় খরচ করতে উৎসা জোগাচ্ছে। যারা এ প্রোগ্রামে সাইন আপ করেছেন তারা আগামী নতুন বছরে একটি টেক্সট মেসেজ পাবেন। তারা নিজের জীবনের উন্নতি ও সুখের মাত্রা নতুনভাবে বিশ্লেষণ করবেন।
রিথিঙ্ক মেন্টাল ইলনেসের মুখপাত্র নিয়া চার্পেন্টিয়ার জানান, জীবনে বন্ধু ও পরিবারের গুরুত্ব কতটুকু তা ভাবাই যায় না। যারা আপনার সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছেন, বিপদে এগিয়ে আসেন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়া জীবনে আর বেশি কিছু চাওয়ার থাকে না। এই মানুষগুলোর সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে ভালো সময় আসতে পারে না।
আধুনিক যুগে মানুষের একাকিত্ব বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে। এতে করে মানুষের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। এতে মানুষের অবচেতন মনে সম্পর্কের অভাববোধ তৈরি হচ্ছে।
একাকিত্ব দূর করার জন্যে আয়োজিত ক্যাম্পেইনে বলা হয়, সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ মানুষের মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস করে। এ ছাড়া বেশ কিছু রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে আনে। যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পরার্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ জন লুইস জানান, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের ১৪০ জন স্থানীয় মানুষ এ বিষয়ে কর্মযজ্ঞ শুরু করতে চলেছেন। তারা মানুষকে আরো বেশি সমাজের সঙ্গে যুক্ত করতে নানা পরামর্শ প্রদান করবেন। যারা মুখোমুখি কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করেন, তারা অনলাইনে পরামর্শ নিতে পারেন। অসংখ্য মানুষ এ সংক্রান্ত জটিলতার ভুগছেন। তারা মন খুলে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারছেন না।
তেমনি সংস্যায় বহুকাল ভুগছেন লুকি টাইবারস্কি। লন্ডনের এই তরুণ এখন তার জীবনের অন্ধকার অংশ নিয়ে সাহসের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে অনলাইনকে তিনি সামাজিকতা পালনের তেমন গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলে মনে করেন না। কারণ মানুষের মুখোমুখি ও কাছাকাছি থেকে যতটা সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, অনলাইনে তা সম্ভব নয়। আবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অনন্য বলে মনে করেন ড্যারেল। বন্ধুত্বের মাধ্যমেই সঙ্গী-সঙ্গিনীর দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে বলেই মনে করেন তিনি।
সম্পর্ক যেমনটা গঠনমূলক হয়, তেমনি ক্ষতিকরও হতে পারে যদি এর অপব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্যকার সম্পর্ক তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন ড. নাতাশা বিজলানী। তিনি লন্ডনের প্রায়োরি হসপিটালেরন কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। তার মতে, হুমকি প্রদান, মানসিক অত্যাচার বা এসব উপায়ে একটা মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করা যায়। অনেক সময়ই সম্পর্কের নেতিবাচক প্রভাবে মনে সমস্যা ক্রনিক হয়ে যেতে পারে।
যাদের সম্পর্ক ভেঙে যায় বা এ সংক্রান্ত সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েন, তাদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে মানসিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
ড. বিজলানী বলেন, সাধারণত আমরা সম্পর্কে বিষয়ে সমাজ বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাতিষ্ঠিত শিক্ষা লাভ করি না। কাজেই সবার মাঝে অজ্ঞতা কাজ করে। মানুষ জীবনের চলমান ঘটনা থেকে শিক্ষালাভ করতে থাকেন। কিন্তু তাদের যদি আগে থেকেই মৌলিক শিক্ষা দেওয়া যায় তবে ক্ষতির মাত্রা এত বেশি হয় না।
খুব সহজেই মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। প্রতিবেশীর প্রতি সামান্য ‘হ্যালো’ বলাতেই এ সম্পর্কের শুরু হয়ে যায়। সম্পর্কের গুণগত মান ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে না। বন্ধু, পরিবার, আত্মীয় বা অপরিচিতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হতে পারে ব্যবহার ও কথার মাধ্যমে।
পরিচিতদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। সঙ্গী-সঙ্গিনীকে বাইরে থেকে ফোন দিন। একটু কথা অনেক সমস্যা দূর করে দিতে পারে। মন খারাপ করে নিশ্চুপ বসে না থেকে কাছের কারো সঙ্গে একটু আলাপচারিতা মনটাকে ভারো করে দিতে পারে। কেন মিশবেন বা কি বিষয়ে কথা বলবেন তা কোনো ঘটনা নয়। সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং জীবনটাকে আরো বেশি স্বাস্থ্যকর করে তুলুন। সূত্র : ইনডিপেনডেন্ট