সকালে অনেক তাড়াহুড়ো, তাই কিছু মুখে দিয়েই বেরিয়ে যান অনেকে। এভাবে সকালের নাশতাটা প্রায় নিয়মিত বাদ যাচ্ছে। কিন্তু এর কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে শরীরের ওপর, তা জানেন? একাধিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে সকালের নাশতা যাঁদের অনিয়মিত, তাঁদের মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ও স্থূলতা বা বাড়তি ওজন প্রভৃতি সমস্যার হার বেশি। আর স্বাস্থ্যকর নাশতা দিয়ে দিন শুরু করলে রক্তের ক্ষতিকর এলডিএল চর্বির পরিমাণ কমে, ওজন ঠিক রাখতে সুবিধা হয় এবং স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের দক্ষতাও বাড়ে।
সকালের নাশতা আমাদের শরীরের বিপাকক্রিয়া শুরু করার মাধ্যম। সারা রাত বিপাক ক্রিয়ায় যে পরিবর্তন ঘটে; যেমন: রাতের বেলা শক্তি জোগায় যকৃতে সঞ্চিত শর্করা, শক্তিক্ষয় বন্ধ থাকে মাংসপেশি ও অন্যান্য অঙ্গের, নানা হরমোন ও রাসায়নিকের নিঃসরণে চলে রাত্রিকালীন ছন্দময় ওঠানামা—সকালের নাশতার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। আর শুরু হয় শরীরের মধ্যকার দিনের বেলার কার্যক্রম। যকৃৎ তখন শক্তির সরবরাহ থামিয়ে দেয়, ফলে এনার্জি বা শক্তি পাওয়ার জন্য চাই খাবার। সেটা না পেলে হরমোন ও রাসায়নিকের ছন্দপতন ঘটে। তার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কসহ সারা শরীরের ওপর।
দুপুরের খাবার বা মধ্যাহ্নভোজের আগেই বেশি খিদে পেয়ে যায়, ফলে দিনের মাঝামাঝি খাওয়া হয়ে যায় বেশি। পরিণামে ওজন বাড়ে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি স্বাস্থ্যকর সকালের নাশতার জন্য কিছু নির্দেশিকা দিয়েছেন।
* সকালের নাশতা যেন কোনো দিনও বাদ না যায়। আর এর মেন্যুতে তিনটি মূল উপাদানের সমাহার থাকতে হবে: ১. শস্যজাতীয় খাবার (যেমন: রুটি বা ওটমিল), ২. দুধ বা দুধের তৈরি খাবার (যেমন: দই বা মিষ্টি), ৩. ফলমূল বা সবজিজাতীয় কিছু।
* সকালে চা-কফির চেয়ে এক গ্লাস জুস বা ফলের রস শ্রেয়।
* সকালে একটা ডিম প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।
* নাশতা সারার সময়ের জন্য প্রয়োজনে ১৫ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠুন। আগের রাতে ঠিক করে নিন, সকালে কী কী খাবেন। খুব তাড়া থাকলে খাবার সঙ্গে নিয়ে বেরোন এবং অফিসে ঢুকেই প্রথমে নাশতা সেরে নিন।
ডা. তানজিনা হোসেন
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ